দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির প্রভাবে খনির অধিগ্রহণ
এলাকা সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত সাত গ্রামের গ্রামবাসীরা ৮দফা দাবিতে গতকাল
সোমবার ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
জীবন, পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষা কমিটির ব্যানারে ৮দফা দাবিতে সাত গ্রামের নারী ও
পুরুষরা সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত খনি সংলগ্ন বড়পুকুরিয়া বাজার
এলাকায় ওই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
গ্রামবাসীর ৮দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, (১) কয়লা উত্তোলনের কারণে ভূকম্পনে খনির
অধিগ্রহণকৃত এলাকা সংলগ্ন বাঁশপুকুর, (কাজীপাড়া), বৈদ্যনাথপুর (আংশিক),
শিবকৃষ্ণপুর (পাতরাপাড়া), পাতিগ্রাম (আংশিক), বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙ্গা ও
কালুপাড়া গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়িতে বড় বড় আকারের ফাটল ধরাসহ জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে গ্রামবাসীকে বসবাস করতে হচ্ছে। গ্রামবাসীর যানমাল রক্ষায় দ্রুত
পদক্ষেপ গ্রহণ করা, (২) ভূগর্ভস্ত পানি উত্তোলনের ফলে এলাকা বিশুদ্ধ পানিয়জলের সংকটে
পড়েছে। দ্রুত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা, (৩) কয়লা উত্তোলনের কারণে মাটি দেবে
যাওয়ায় হামিদপুর ইউনিয়নের সাথে ফুলবাড়ির একমাত্র সংযোগ রাস্তাটির বেশির
ভাগই চলাচলের অযোগ্যসহ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বিকল্প রাস্তা নির্মাণের কথা
থাকলেও খনি কর্তৃপক্ষ সেটি না করায় বড়পুকুরিয়া স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলেও সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না। ফলে ঝুঁকির
মধ্যেই ফাটল ধরা ভবনের মধ্যেই শিক্ষাদান চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিকল্প রাস্তা
নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে, (৪) দ্রুত খনি এলাকার
বাসিন্দাদের আবাসনসহ অন্যান্য আবাসন নির্মাণ ও মসজিদ, কবরস্থান, ঈদগাহ মাঠ
নির্মাণ করতে হবে (৫) ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর সাথে স্বাক্ষতির সমঝোতা চুক্তি
অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বেকার ছেলেমেয়েদেরকে যোগ্যতানুসারে খনিতে চাকরি
প্রদানসহ চাকরিরতদেরকে চাকরিতে স্থায়ীকরণ করা (৬) বাস্তচ্যুত ৪০০ পরিবারের
আবাসন ব্যবস্থাসহ এলাকার জলবদ্ধতা দুর করা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা (৭) সিএসআর
ফান্ডে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর কল্যাণে ব্যয় না করে অন্য
জেলায় ব্যয় বন্ধ করে এলাকাবাসীর কল্যাণে ব্যয় করা এবং (৮) খনির লভ্যাংশের প্রায় ২০
কোটি টাকা প্রফিট বোনাসের নামে ১৫০জন কর্মকর্তা-কর্মচারি ভাগ করে নিলেও
ইউনিয়ন পরিষদের ন্যায্য পাওয়া ট্যাক্স পরিশোধ না করায় ইউনিয়নবাসী প্রাপ্য উন্নয়ন
থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদের পাওনা পরিশোধ করা।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে দাবির সমর্থনে বক্তব্য রাখেন ইউপি চেয়ারম্যান
সাদেকুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সংগঠনের সভাপতি মশিউর
রহমান বুলবুল, সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম, যূগ্ম আহবায়ক লিয়াকত আলী, আব্দুল
গণি, সোলায়মান সানি, মোছা. জেমি আক্তার, আইয়ুব আলী, সুলতান মাহমুদ,
মামুনুর রশিদ, কয়লাখনি শ্রমিক নেতা রবিউল ইসলাম, আবু সুফিয়ান প্রমূখ।
জীবন, পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষা কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বুলবুল ও সদস্য
সচিব সাইদুল ইসলাম বলেন, মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে খনি কর্তৃপক্ষকে
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর ৮দফা দাবির বিষয়টি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো খনি
কর্তৃপক্ষ দ্রুত বাস্তবায়ন না করলে আগামীতে কঠোর আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলা
হবে।
খনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম নূরুল আওরঙ্গজেব বলেন, ইতোমধ্যেই
ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্তদের মানববন্ধন করার বিষয়টি
বোধগম্য নয়। তবুও বিষয়টি খনির সংশ্লিষ্ট কমিটি দেখবে।