হেলাল শেখ ঃ-ঢাকা ঃ
রাজধানী ঢাকাসহ আশ পাশের এলাকায় শীতে বাড়ছে মশার দাপট! প্রজননস্থলগুলো পরিস্কার না হওয়া এবং
নিয়মিত ওষুধ না ছিটানোয় এই শীতে এবার মশার উপদ্রব বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শীতের
আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রব এখন অনেকটা বেড়ে গেছে। পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে শীতে মশার উপদ্রব বেড়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পাওে বলে মন্তব্য করেছেন
সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে মশার উপদ্রব বৃদ্ধির এ আশংকার কথা সমর্থন করেন ঢাকা দঃ সিটি করপোরেশন
(ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাউদ্দিন
বলেন,“বৃষ্টিতে মশার প্রজননস্থলগুলো নষ্ট হয়ে যায়, কারণ ভাসমান পানিতে মশা জন্মাতে পাওে না,আর
শীতে আবদ্ধ পানি কিংবা শুকনা স্থানে মশার প্রজনন বেড়ে যায়। তবে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রাখতে
আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, পর্যাপ্ত কীটনাশকও মজুদ আছে”
বিশেষ করে জানা গেছে, উক্ত ব্যাপারে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বাজেট বরাদ্ধ রাখা হলেও কোথাও
নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মশার ওষুধ
ছিটানো হয় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের পছন্দের এলাকায়।এর কারণে
পুরান ঢাকার লালবাগ, হাজারীবাগ, সুত্রাপুর, সদরঘাট, গেন্ডারিয়া, দয়াগঞ্জ, মিরহাজীরবাগ,
দোলাইরপাড়, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, কাফরুল, ভাসানটেক, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মিরপুর, গাবতলী,
আমিন বাজার, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গত এক মাস ধরে মশার উপদ্রব বেড়ে
গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।
গত ৭ দিন সরেজমিনে গিয়ে আলাপকালে মিরহাজীর বাগের বাসিন্দা আফসার হোসেন
বলেন,“মিরহাজীর বাগের মধ্য পাড়ায় গত ৬ মাসে মশার ওষুধ ছিটানো দেখিনি। আরও অনেকেই জানান,
সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ কোথায় কিভাবে ছিটানো হয় তা আমরা জানি না। মিরপুরের
রূপনগরের বাসিন্দা ইয়াসমিন, গাবতলীর বাশার মিয়া, সাভারের মিঠুন, ইসরাত, আশুলিয়ার সাইফুল,
গাজীপুরের শামীমা, রুবী, রানা, উত্তরার রনি, সোহেলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে
বিভিন্ন কল কারখানা, হোটেল, মিষ্টির দোকান, মাছ বাজার, কাঁচা বাজারের ময়লা, পলিথিন ফেলার
কারণে ময়লা পানি ড্রেনে ও খালে আটকে পড়ায় তা নিয়মিত পরিস্কার না করার কারণে মশার উপদ্রব দিন
দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. শেখ সালাহউদ্দিন
বলেন, মশা নিধন কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছে। কোথায় কোথায় মশা নিধনের ওষুধ ছিছটাতে হবে তা
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা দেখেন। কোনো এলাকায় যদি ওষুধ ছিটানো না হয় তাহলে কাউন্সিলদের
জানালে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। জানা গেছে, ঢাকার ২ সিটি করপোরেশন এলাকায় জলাশয় রয়েছে
প্রায় এক হাজার বিঘার মতো, এর মধ্যে ঢাকা দঃ ৪৮৭ বিঘা রয়েছে। এরকম প্রায় প্রতিটি এলাকায়
ছোটো বড় জলাশয় খাল রয়েছে। এগুলো নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না বলে অনেকেই জানান।এর ফলে শীত
মৌসুম এলে জলাশয়ের আবদ্দ পানি দুগন্ধময় হয়ে মশার প্রধান প্রজননস্থলে পরিনত হয়। অন্যদিকে
সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, ডিসেম্বরে এসব জলাশয় পরিস্কার করা হবে। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থ
বচরে (২০১৬-১৭) মশক নিধন কার্যক্রমের (মনিটরিং ও সার্ভিলেন্সসহ) বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে
ডিএনসিসির ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গত (২০১৫-১৬) অর্থবছরে এ খাতে বাজেট ধরা হয়েছিল ১৪
কোটি টাকা। সে বছরে ব্যয় হয় ১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছর মশক নিধন
কার্যক্রমের জন্য ডিএসসিসির বাজেট বরাদ্ধ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত বছর ১২
কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ
রাস্তার দু’পাশের ড্রেনের বেহাল অবস্থা,জলাশয় ও খালগুলো দখল করে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে
রাখছে। বাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নুংড়া পানি রাস্তায় ফেলে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তরা উক্ত ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিবেন কি?