মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে বিশ্বসমাজকে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া। তাঁর প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান এ বার্তা পাঠান।
গতকাল শনিবার দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ নির্যাতিত হয়ে আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সে দেশের সরকারি বাহিনী পরিচালিত সুপরিকল্পিত ও বর্বরোচিত জেনোসাইডের ঘটনায় আমি গভীরভাবে বেদনাহত ও উৎকণ্ঠিত। সংখ্যালঘু একটি জাতিগোষ্ঠীর ওপর এমন পৈশাচিক নির্মূল অভিযানে প্রতিটি বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত। তাদের সবার হৃদয় বেদনামথিত। এমন ঘৃণ্য ও নিষ্ঠুর কার্যকলাপের নিন্দা জানাবার কোনো ভাষা নেই।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আরাকান অঞ্চলে পরিচালিত এই গণহত্যা অভিযানে সরকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় ভিন্ন সম্প্রদায়ের দাঙ্গাবাজরাও অংশ নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিধর্ম-বিদ্বেষী আক্রোশ চরিতার্থ করতে তাদের গুলি ও জবাই করে এবং পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীদের। দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না।’
নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘গভীর পরিতাপ ও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কোনো সামরিক জান্তা নয়, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির নেতৃত্বে পরিচালিত মিয়ানমারের প্রশাসনই এ অমানবিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হোতা। যিনি নিজে দীর্ঘকাল নির্যাতিত হয়েছেন তিনি কি করে এমন পৈশাচিকতাকে অনুমোদন করছেন, ভেবে আমরা স্তম্ভিত হচ্ছি। অনতিবিলম্বে এই জেনোসাইড বন্ধের জন্য আমি মিয়ানমার সরকারের প্রতি উদাত্ত্ব আহ্বান জানাচ্ছি, যেন আর একটি মানুষও হত্যাকাণ্ড, উচ্ছেদ ও নির্যাতনের শিকার না হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওই অঞ্চলে শান্তি ফেরাতে হত্যা, উৎপীড়ন ও উচ্ছেদের জন্য দায়ী প্রতিটি ব্যক্তিকে আইনামলে এনে উপযুক্ত শস্তি নিশ্চিত করারও আহ্বান জানাচ্ছি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘মিয়ানমারের এই জেনোসাইডের বিরুদ্ধে আমি আমার প্রিয় দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষদের সোচ্চার হওয়ার এবং নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াবার আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি মানবতাবাদী রাষ্ট্রের সরকার, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব, জাতিসংঘ ও ওআইসিসহ প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার আহ্বান, কেবল কথামালা নয়, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বলিষ্ঠ এমন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসুন, যাতে মিয়ানমার সরকার গণহত্যার কালো হাত গুটিয়ে নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অপরাধীদের শাস্তিবিধানে বাধ্য হয়।’
বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা সব সময়েই নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশকে স্পর্শ করেছে। ঘনবসতিপূর্ণ এবং লোকসংখ্যা অনুপাতে বাসযোগ্য জমির ক্রমসংকোচনের এ দেশে এখনো অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী আগে থেকেই আশ্রয় নিয়ে আছে। এতে আমাদের সামাজিক অনেক সমস্যাও ভোগ করতে হচ্ছে। তা সত্ত্বেও গণহত্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনকারী জাতি হিসেবে জীবন রক্ষায় আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কারণে যত দূর সম্ভব আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবেশী অন্যান্য দেশ এবং মুসলিম বিশ্বের প্রতিও আমি অভিন্ন আহ্বান জানাচ্ছি।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, কেবল শরণার্থীদের আশ্রয় ও সাহায্য দেওয়ার মধ্যেই কোনো সমাধান নিহিত নেই। রোহিঙ্গারা যাতে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে জীবন-সম্পদ-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিয়ে নিজ মাতৃভূমিতে বসবাস করতে পারে সেই নিশ্চয়তা বিধান কল্পে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমি বিশ্বসমাজকেও অবিলম্বে সক্রিয় হওয়ার এবং এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’