দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার খট্টা মাধবপাড়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রাম
এবং বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের চৌঘরিয়া গ্রাম। বাংলাদেশ ও ভারতের
মধ্যে বয়ে যাওয়া সীমান্তবর্তী শাখা যমুনা নদী দুই ইউনিয়নকে ভাগ করেছে।
হাকিমপুর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসন থেকে
নদীর দুই পাড়ের দুই ইউনিয়নের বালু মহল দুইটির ইজারা নিয়েছেন উপজেলার
নয়ানগর গ্রামের মিজানুর রহমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাকিমপুর উপজেলা খট্টামাধবপাড়া
ইউনিয়নের নয়ানগর এবং মাধবপাড়া গ্রামের ৫০০ গজ পশ্চিমে শাখা যমুনা
নদীতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে নদীর মাঝ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। ওই এলাকায়
রয়েছে খট্টা মাধবপাড়া ও কাটলা দুই ইউনিয়নের লোকজনের পারাপারের নৌকা
ঘাট। বালু উত্তোলন এবং পরিবহনের ফলে সেখানকার ফসলী জমি, মংলা-কাটলা
রাস্তা, মাধবপাড়া গ্রামের ভেতরের পাকা রাস্তা এবং ড্রেন ভেঙ্গে ও বিলীন হয়ে
গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে অন্য জমিজমাসহ স্থাপনাগুলো।
নয়ানগর ও চৌঘরিয়া নৌকা ঘাটের ইজারাদার নাসির উদ্দিন (৬৫) বলেন,
প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ঘাট চালাচ্ছেন। গত ১০-১২ বছর ধরে ঘাটের পাশ-পাশ
এলাকা থেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু মাহলের ইজারাদার মিজানুর বালু তুলছেন।
শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তোলায় নদীটির পশ্চিম দিকের পাড় ভাঙতে-ভাঙতে প্রায়
৫০০ গজ সরে এসেছে।
চৌঘুরিয়া গ্রামের রেহানা পারভীন (৫০) বলেন, শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু
তোলায় নদীটির বিভিন্ন স্থানে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন বছর আগে
গ্রামের এক শিশু নদীর খাদে পড়ে মারা যায়। তখন থেকে গ্রামের মানুষ বালু
তোলা বন্ধের দাবী জানালেও বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সাথে বালু
ইজারাদার মিজানুরের লোকজনের মধ্যে মারামারিসহ মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে।
ইতোমধ্যে গ্রামের আবু সাইদের দুই একর, সামছুল হকের দশ কাঠা ও নাসির
উদ্দিনের দুই বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অপর বালু মাহল মাধবপাড়া গ্রামের পার্শ্বের নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়,
সেখানে শ্যালো দিয়ে তোল বালু নিতে এসেছে কয়েকটি ট্রাক্টর। ট্রাক্টর চালকরা
জানায়, মোটা বালু ৫০০ টাকা এবং বিট বা রাবিশ বালু ৩০০ টাকায় কিনে
হিলিতে প্রতি ট্রাক্টর বালু ১হাজার ২০০ টাকা এবং রাবিশ বালু ৭০০ টাকা দরে
বিক্রি করেন। এই ঘাট থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক্টর বালু পরিবহন করা
হয়।
কাটলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের জুয়েল মিয়া (৩৫) ও খট্টামাধপাড়ার হাসান
বাবু (৩২) বলেন, শ্যালো দিয়ে বালু তোলায় নদী তীরবর্তী বহু লোকের জমিজমা নদী
গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে কথা বলতে গেলেই বালু
মাহলের ইজারাদার পুলিশ দিয়ে সায়েস্তা করার হুমকি দেন। এ কারণে ভয়ে অনেকে
প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
খট্টা মাধবপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোকলেছুর রহমান বলেন,
এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংসদ শিবলী সাদিক বালু
উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত শ্যালো মেশিন আটকের নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) -এর কাছে
সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি।
বালুমহাল ইজারাদার মিজানুর রহমান বলেন, তিনি একজন প্রথম শ্রেণির
ঠিকাদার। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা নিয়ে বালু তুলছেন। জেলা
প্রশাসনের লোকজন তাকে জানিয়েছেন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার হলে নদীতে
শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তুলতে পারবেন। তাই তুলছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শুকরিয়া পারভীন বলেন,
হাকিমপুুরে কাউকেই শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া
হয়নি। দ্রুত এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।