এপিবিএন ও জেলা-উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযান চলছে। যেখানে সেখানে ওষুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠান ফার্মেসি
ব্যবসা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করছে লাইসেন্সের শর্ত। বিক্রি করছে
বেআইনি ওষুধ,কিন্তু নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখার জন্য বিধিবদ্ধ নিয়ম থাকলেও সে ব্যবস্থা নেই বেশিরভাগ ফার্মেসিতে।
গত এক মাস ঢাকা জেলার বেশকিছু এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ ফার্মেসিতে লাইসেন্স
নেই। শুধু তাই নয় সারাদেশেই গ্রামের বা জেলা শহরের ৯০% ফার্মেসিরই কোনো লাইসেন্স নেই। ফলে নিয়মনীতির
তোয়াক্কা না করে ফার্মেসিগুলোর অধিকাংশই বিক্রি করছে নি¤œমানের ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল অনমোদনহীন ওষুধ।
প্রশাসনের কাছ থেকে জানা গেছে, এসব বিষয়ে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে জনবলের অভাবে
পরিদর্শন সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য পড়েছে বড় ধরণের হুমকিতে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) গোলাম কিবরিয়া এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আনরেজিস্টার্ড,
মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে সারা দেশের ফার্মেসিগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন ওষুধ
প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব নিয়ে কাজ করছেন। সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫টি অভিযান চালানো
হচ্ছে। আমাদের পাশাপাশি র্যাব,এপিবিএন ও জেলা-উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ওষুধের দোকানে অভিযান চালাচ্ছেন।
আনরেজিস্টার্ড, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে আরও জোরালো ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, কাউকে ছাড় দেওয়া
হবে না।
বিশেষ করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে
লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৩টি ফার্মেসি রয়েছে। এগুলোয় বৈধ ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও
অনুমোদনহীন ওষুধও বিক্রি হচ্ছে। এমনকি ঢাকা রাজধানীর নামিদামি হাসপাতালের ফার্মেসিগুলোতেও অনুমোদনহীন ওষুধ
বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে নামিদামি হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে
অনুমোদনহীন অনেক ওষুধ জব্দ করেছেন একাধিকবার, জরিমানাও করা হয়েছে।
তথ্যে জানা গেছে, সারা দেশে ২৭৮টি অ্যালোপ্যাথিক, ২৬৬টি ইউনানি, ২০৫টি আয়ুর্বেদীক, ৭৯টি
হোমিওপ্যাথিক এবং ৩২টি হারবাল, ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। বিশেষ করে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো
বছরে ১৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন করে। এ ছাড়া বেশ কিছু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে বিপুল
পরিমান ওষুধ আমদানি করে। বিশেষ করে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করতে হলে এর জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর
থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স ছাড়া ফার্মেসি দেয়া যায় না। কিন্তু বর্তমানে গ্রামে, জেলা শহরে এমনকি রাজধানী
ঢাকা জেলা শহরে এবং সাভার আশুলিয়া, ধামরাইসহ যেখানে সেখানে ফার্মেসি দেখা যায়, চোখে পড়ার মতো! বেশিরভাগ
ফার্মেসির কোনো লাইসেন্স নেই। ফার্মেসির লাইসেন্স নিতে হলে একজন নিবন্ধিত গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ
দিতে হবে। কিন্তু অনেক ফার্মেসিতে কোনো নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট নেই। ফার্মসির লাইসেন্স নেওয়ার সময় কিছু শর্ত
থাকে, কেন এসব শর্ত মানছে না ফার্মসি ব্যবসায়ীরা?
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই পান-সুপারি, মুদি,চা স্টল, ও ফুটপাতে ওষুধ বিক্রি করা হয়ে থাকে। এসব দোকানে
মাঝে মধ্যে অভিযান চালায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট । গত বছর পান-সুপারির দোকানে ওষুধ বিক্রির খবর
পেয়ে প্রায় ২৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। সে অভিযানকালে কয়েকশ দোকানদারকে বিভিন্ন পরিমানের অর্থ জরিমানা
করা হয়। তথ্য মতে জানা গেছে, বর্তমান সময়ে ফার্মেসির সংখ্যা আরও অনেক বাড়ছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নজরদারি
বাড়ানো জরুরী বলে মনে করছেন সচেতন মহল।