নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে খেজুর রস দ্বারা তৈরীকৃত গুড়ের ব্যবসা
এখন জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর শীত মওসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী
গাছীয়ারা চিনিমুক্ত লালি, পাটালী ও খুড়ি গুড় তৈরী করে থাকেন। এসব গুড় এলাকার চাহিদা
মিটিয়ে বর্তমানে রাজধানী ঢাকা, সিলেট, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছেন
ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোমবার ও বৃহস্পতিবার উপজেলার নাজিরপুরে জমজমাট হাট বসে। হাটে
শতশত এ্যালুমোনিয়ামের পাতিল বোঝাই খেজুর রসের তৈরী চিনিমুক্ত লালি, পাটালী ও খুড়ি গুড়
আমদানি করা হয়। গাছীয়ারা প্রতিদিন বিকেলে শতাধিক খেজুর গাছ ঝুরে মাটির কলস পেতে
ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা শেষে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। পরে তা বাড়িতে নিয়ে আগুনের তাপে
প্রথমে লালি গুড় ও পরে পাটালী এবং খুড়ি গুড় তৈরী করে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর, কুমারখালি, দুধগাড়ি, বিয়াঘাট, মোল্লাবাজার, বৃন্দাবনপুর,
মামুদপুর, গোপিনাথপুর সহ পার্শ্ববর্তী সিংড়া উপজেলার সোনাপুর, বাহাদুরপুর, চামারী ও
বড়াইগ্রাম উপজেলার জালশুকা এলাকা থেকে এসব গুড় আমদানি হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বানিজ্যিক এলাকা চাঁচকৈড় মোকামের বিশিষ্ট গুড় ব্যবসায়ী হাজী মো.
বাদশা শাহ, আজিজ সোনার, আসাদ সোনার ও মুক্তার শাহ জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ তাঁরা
নাজিরপুর, জালশুকা ও চাঁচকৈড় হাটের লালি, পাটালী ও খুড়ি গুড় কিনে রাজধানী ঢাকা সহ
সিলেট এবং ভৈরব জেলা এলাকায় সরবরাহ করে থাকেন এই সুস্বাদু গুড়।
নাজিরপুরের গুড় ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন, জয়নাল আবেদিন, ওসমান ফকির জানান- খেজুর রসের
লালিগুড় প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, পাটালী ও খুড়ি গুড় ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে খুচরাভাবে
বিক্রি হচ্ছে। তারা হাজার হাজার মণ লালিগুড় কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে ওই উপার্জন
দিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন।
কুমারখালির খুচরা গুড় বিক্রেতা হাসমত আলী ও আবুল কালাম জানান- তারা এলাকার বিভিন্ন
গাছীয়াদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে খুড়ি ও পাটালী গুড় কিনেন। পরে উপজেলার
বিভিন্ন হাট-বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে তা বিক্রি করেন।
মোল্লাবাজারের খেজুর গাছিয়া আমজাদ হোসেন জানান- তিনি নিজের ১১টি গাছসহ আরো
৫০টি খেজুর গাছ ইজারা নিয়ে সেখান থেকে রস সংগ্রহের মাধ্যমে গুড় তৈরী করে বাজারজাত
করেন। এ কাজ করে সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবার নিয়ে তিনি এখন অনেক সাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।