সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া হতদরিদ্র আলমাসের দুই কোমলমতি শিশু রবিউল ও
সজিব আবার লেখাপড়া করতে চায়। বাবার মৃত্যুর পর ৭ মাস ধরে তাদের দু‘ভাইয়ের
লেখাপড়া অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে । জানাযায়, হত দরিদ্র রিক্সা-ভ্যান চালক
আলমাসের সাত মাস আগে ক্যান্সার রোগ ধরা পরে। উপায় অন্ত না থাকায় তার
চিকিৎসা ব্যয় ও সংসারের খরচ যোগাতে অষ্টম শ্রেণিতে পড়–য়া রবিউল ইসলাম
(১৪) ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়–য়া সজিব (১৩) বইখাতা ফেলে ও স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়ে
বাবার রিক্সা-ভ্যান চালাতে শুরু করে। সারা দিন রিক্সার প্যাডেল মেরে যে আয় হয় তা
দিয়ে চলে ক্যান্সার আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা। এর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ১১ নভেম্বর
মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আলমাস। এখন সংসারের বোঝা তাদের দু‘ভাইয়ের কাধে।
সংসার চালাতে তাই তারা এখন রিক্সা চালাচ্ছে। ফলে অল্প বয়সেই তাদের দু‘ভাইয়ের
লেখাপড়া ও স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়েগেছে। কিন্তু তারা এখনও লেখাপড়া করতে চায়।
সংসারের অভাবের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা আর পড়পলেখা করতে পাড়ছেনা।
নিহত আলমাসের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানায়, অভাবের সংসার। তবুও সুখ ছিল।
ভ্যান চালিয়ে আলমাস যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আড্ডায়
মেতে উঠতো। সারাদিনের জমানো কথা নিয়ে চলতো নানা হাসিঠাট্টা। এসবের
মাঝেও খোঁজ রাখতেন সন্তনদের লেখাপড়ার। ঠিকমতো তারা স্কুলে যাচ্ছে কিনা বা
স্কুলে কারো বেতন বকেয়া আছে কিনা তার খোজ নিতো প্রায় সময়।
কোনো দিন এমনও হতো সকালে ভ্যান নিয়ে কাজে বের হওয়ার সময় দুই সন্তানকে
ভ্যানে তুলে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তারপর কাজে যেতো। আর এমন অভাবের মাঝেও দুই
ভাই তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল ভালো ভাবেই। তিনি আরো বলেন, সাত মাস
আগে হঠাৎ করে তার স্বামী আলমাস অসুস্থ হয়ে পড়লো। থমকে গেল পরিবারের সবার
জীবন চাকা। ভ্যানের চাকা ঘোরা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে তাদের আদরের
দু‘সন্তানেরও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেল।
এলাকাবাসীর সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আলমাসকে নেয়া হলো বগুড়া
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে
ধরা পড়লো আলমাস ক্লোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতাল থেকে বলা হলো ২১
দিন পর পর তিন মাস কেমো থেরাপি দিতে হবে। প্রতিবার থেরাপির জন্য খরচ হবে ৮
হাজার টাকা। এভাবে মোট ৬টি থেরাপি দিতে হবে তাকে। এরপর সংসারে অভাবের
মাত্রা আরো বেড়ে গেল। তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে লাগলো। তাদের
সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিল সামাজিক সংগঠন সার্কেল শাহজাদপুরের একদল
তরুণ যুবক। তারা তাকে রক্ত দিয়ে ও সামাজি যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থ
সাহায্য তুলে চিকিৎসা ব্যয় বহনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু শেষ রক্ষা
হলোনা, আলমাস শেষ পর্যন্ত গত ১১ নভেম্বর মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লো। সংসারের
বোঝা নেমে এলো দু‘ভাইয়ের উপর তারা এবার জীবন জীবিকার জন্য বাবার রেখে
যাওয়া ভ্যানটি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। সেই থেকে দু‘ভাই এখন ভ্যান চালক।
কিন্তু ওরা এখনও লেখাপড়া করতে চায়। এবার সার্কেল শাহজাদপুরের ছেলেরা তাদের
বিনা খরচে স্কুলে পড়ালেখার ব্যবস্থা করে দিল। তারা দু‘ভাই আগামী ১লা জানুয়ারী
থেকে আবার স্কুলে যাবে। সার্কেল শাহজাদপুর সংগঠনের ফারুক হোসেন কাহার ও
রাজীব রাসেল জানায়, আলমাসের চিকিৎসার সময় পরিবারটি বিভিন্ন ব্যাক্তির
কাছে বেশ কিছু টাকা ঋণ হয়ে গেছে। এ দু‘ভাই এখন ভ্যান চালিয়ে সে সব
ঋণ পরিশোধ করছে এবং সংসার খরচ চালাচ্ছে।
তাই রবিউল ও সজিব আর স্কুলে যায় না। বাবার রেখে যাওয়া ভ্যান নিয়ে প্রতিদিন
সকালে বাড়ি থেকে বের হয় আর কাজ শেষে অনেক রাতে বাড়ি ফেরে। কিন্তু
পড়ালেখার নেশা তাদের ছাড়েনি। তাই রোজ রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে দু‘ভাই বই
নিয়ে পড়তে বসে। গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করে ঘুমিয়ে পরে। এরপর সকালে আবার
বের হয় ভ্যান নিয়ে। এ ভাবে চলছে দু‘ভাইয়ের জীবন। কাহার ও
রাজিব বলেন, হৃদয়বান ভ্যাক্তিরা এ মুহূর্তে ওদের পাশে দাঁড়ালে ওরা আবার স্কুলে
যেতে পারবে, আবার লেখাপড়া করতে পারবে। হয়তো সকলের সহযোগীতায় ওরাও
একদিন বড় মাপের মানুষ হয়ে উঠবে। তাই তারা স্বচ্ছল ব্যাক্তিদের ওদের পাশে দাড়ানোর
আহব্বান জানিয়েছেন। রবিউল ও সজিব
জানায়, তারা দু‘ভাই আবার স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু এখন স্কুলে গেলে তাদের
সংসারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা এখন
স্কুলে যেতে পারছেনা।
রবিউল ওসজিবের মা মনোয়ারা বেগম জানান, আমার ছেলেরা স্কুল বাদ দিয়ে ভ্যান
চালাচ্ছে। এ দেখে আমার বুকে ফেটে যায়। কিন্তু আমি অসহায় ছেলেদের জন্য
কিছুই করতে পারছিনা। আমার স্বামীর খুব ইচ্ছে ছিল ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে
মানুষের মতো মানুষ করে গড়েতোলার। কিন্তু অভাবের জন্য তা পারলামনা। তাই দুই
ভাইকে বাধ্য হয়েই ওর বাবার রেখে যাওয়া ভ্যান নিয়ে কাজে বের হয়। তিনিও ওদের
পড়ালেখার খরচের জন্য সহৃদয়বানদের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন। সহায্য
পাঠানোর ঠিকানা : যোগাযোগ ঃ মনোয়ারা বেগম 01778-857299 ।