আজ ৮ ডিসেম্বর নড়াইলের লোহাগড়া থানা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১
সালের এই দিনে লোহাগড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানী
বাহিনীকে পরাজিত করে লোহাগড়া থানাকে হানাদার মুক্ত করে উড়িয়েছিল লাল
সবুজের পতাকা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে,স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও
লোহাগড়ায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয় নাই কোন স্মৃতিস্তম্ভ বা
স্মৃতিসৌধ। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সহ সুশীল সমাজ বিভিন্ন সময়ে
নানা উদ্যোগ গ্রহন করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গে নাই।
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে, নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে লোহাগড়া থানার
উত্তরাঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়। এরপর পাক-হানাদার বাহিনী লোহাগড়া থানায় সশস্ত্র
অবস্থান গ্রহন করে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মধুমতি নদীর
কালনাঘাটে ৭ ডিসেম্বর রাতে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয় এবং বৈঠকে সিদ্ধান্ত
হয় যে, ৮ ডিসেম্বর গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে লোহাগড়া থানা আক্রমন করা হবে।
মুজিব বাহিনীর তৎকালীন প্রধান ও সাবেক সংসদ সদস্য শরীফ খসরুজ্জামান,
কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী, লুৎফর রহমান, ঈমান আলী, আবুল হোসেন খোকন, কবীর
হোসেন, দিদার হোসেন, হাবিবুর রহমান, মোস্তফা কামাল তাজ সহ ৪০/ ৫০জনের
একদল সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ৮ ডিসেম্বর ফজরের আযানের সাথে সাথে পশ্চিম দিক থেকে
লোহাগড়া থানা আক্রমন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পিত আক্রমনে হতচকিত হয়ে পড়ে
পাক বাহিনীর রেঞ্জার সদস্যরা। এ সময় থানায় অবস্থানরত রেঞ্জার বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র ও
গোলাবারুদ নিয়ে থানার পূর্ব দিকে অবস্থান নেয়। শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা ও
পাকবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ। ৫ ঘন্টাব্যাপী এ যুদ্ধ চলাকালে থানা অভ্যন্তরে সম্মুখ যুদ্ধে
কোলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান (২০) ও যশোর সদর উপজেলার জঙ্গল
বাঁধাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল তাজ (২৮)শহীদ হন।
প্রসঙ্গত: উলেখ্য যে, নিহত হাবিবুর রহমানকে লোহাগড়া থানার অভ্যন্তরে এবং
মোস্তফা কামাল তাজকে ইতনা স্কুল ও কলেজ চত্বরে সমাহিত করা হয়। ১৯৯০ সালে
তৎকালীন ওসির সহযোগিতায় হাবিবুর রহমানের কবরটি টাইলস দিয়ে বাঁধানো
হলেও ইতনায় শহীদ মোস্তফা কামালের কবরটি পড়ে রয়েছে অবহেলা আর অনাদরে। থানা
আক্রমনের সময় মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে কুখ্যাত রাজাকার ও পুলিশ সদস্য খালেক এবং
নড়াইলের আশরাফ রাজাকারসহ প্রায় ২০ জন মানুষকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে
গ্রেফতার হয় ১০ জন পুলিশসহ ২২ জন রাজাকার । এসময় মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল সংখ্যক
অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে নিজেদের আয়ত্বে আনেন। সকাল ৯টার দিকে বীর
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ইউনুস আলী থানা চত্ত্বরে বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন।
লোহাগড়া থানা হানাদার মুক্ত হবার খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে উল্লসিত জনতা
রাজপথে বিজয় মিছিল করে।
আজ ৮ ডিসেম্বর লোহাগড়া থানা মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা
সংসদের উদ্যোগে দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। কর্মসূচীর
মধ্যে রয়েছে পতাকা উত্তোলন, র্যালী, কবর জিয়ারত, স্মৃতিচারণ মূলক সভা ও দোয়া
মাহফিল।