প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাইছালরা উৎসব মুখর পরিবেশে ঐহিত্যবাহী চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র নাটোরের
গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ে বাইছালরা পলো দিয়ে মাছ ধরার মহাৎসবে মেতে
উঠেছে। বর্ষার পানি যখন একবুক পরিমাণ হয় তখনই এই উৎসব শুরু হয়।
যারা পলো দিয়ে মাছ ধরে তাদেরকে পলো বাইছাল বলে। প্রতিটি গ্রামে এই পলো বাইছালদের একজন সরদার
থাকে। তার নির্দেশ মতে কবে কোথায় মাছ ধরা হবে তা মাইকিং করে প্রচার করা হতো। বর্তমানে হাতে
হাতে মোবাইল ফোন থাকায় মাইকিং করে প্রচার বিলুপ্ত হয়ে গছে।
নদী ও বিলের একবুক পরিমাণ পানিতে সাড়িবদ্ধ লাইন হয়ে বাছাইলরা মাছ ধরা শুরু করে। তারা পাঁয়ে হেঁটে
৮/১০ কিলোমিটার দূরে মাছ ধরতে যায়। উপজেলার নাজিরপুর, খুবজীপুর, বিলসা, পিপলা, চরপিপলা,
বিয়াঘাট, মশিন্দা, শিধুলী, চলনালী, পলশুড়া, নারীবাড়ি, পাঁচশিষা, উদবাড়িয়া, চরকাদহ, ধারাবারিষা,
সোনাবাজু, পাটপাড়া, পারগুরুদাসপুর, আনন্দনগর, কাছিকাটা, হাঁসমারী, চাপিলা সহ পাশ্ববর্তী
উপজেলা মিলে প্রায় ৫০টি গ্রামের শৌখিন মানুষগুলো এ সময় পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেন।
পলো বাইছাল দলনেতা হামজা মেম্বার বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে পলো দিয়ে মাছ ধরি। নদীমাতৃক আমাদের
এই দেশে পলো দিয়ে মাছ ধরার সংস্কৃতিটা আমরা এখনো টিকিয়ে রেখেছি। পলো দিয়ে বড় বড় রুই,
কাতলা, মৃগেল, শোল, বোয়াল, গোজার, আইর, চিতলসহ অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এখন আর আগের
মত বড় মাছ পাওয়া যায় না। তবুও এভাবে মাছ ধরতে মজা লাগে। শত কষ্টেও তা ছাড়তে পারি নাই।
এভাবে অনেক বাইছালদের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতিদিন শত শত মানুষের সাথে মাছ ধরার মজাটাই
আলাদা। প্রতিবছর আমরা এই সময় চেয়ে থাকি কখন অগ্রহায়ন মাস আসবে আর মাছ ধরতে যাবো। সব
শ্রেনীর মানুষ এ অঞ্চলে পলো দিয়ে মাছ ধরতে যায় এবং এই উৎসবে মেতে উঠে। #