স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ:
নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে নিঃস্ব হওয়া ঝিনাইদহের সেই মুনছুর আলী মন্ডল
(৬৬) অবশেষে মারাই গেলেন। ঝিনাইদহের ইউপি নির্বাচনের পর পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে
না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সে সময় তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তিও করা
হয়েছিল। কিন্তুু মানসিক যন্ত্রনায় তীব্র কাতর আর হতাশায় ভরা আওয়ামী লীগ নেতা
মুনছুর আলী মন্ডল সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন পরপারে। মৃত্যুর ৮ দিন পর বিষয়টি
নিশ্চিত করেন তার বড় ছেলে ওবাইদুর রহমান।
তিনি জানান, গত ১৬ জুন তার বাবা ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে ঝিনাইদহ জেলা
আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ তার বাড়িতে যান সমবেদনা জানাতে। মুনছুর আলী মন্ডল
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা
প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করে পথে বসেন।
নৌকা প্রতিক পেলেও ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের আওয়ামীলীগের নেতারা তার
পক্ষে কাজ করেনি বলে তিনি জীবিত থাকতে অভিযোগ করেন। ফলে গরু ছাগল ভিটে
বাড়িসহ ১৩৮ শতক জমি বিক্রি করেও দেনা রয়েছে ৪ লাখ টাকা। দেনা পরিশোধ করার মতো
তার কোন সম্বল নেই। শেষ সম্বল ভিটে বাড়ি বিক্রি করে তিনি নির্বাচনী ব্যায়
মিটিয়েছেন। এই দেনার চিন্তায় মুনছুর আলী অসুস্থ হয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত
মৃত্যুসুধা পান করেন।
রঘুনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুনছুর আলী আক্ষেপ করে এ প্রতিনিধির
কাছে বলেছিলেন, ছাত্র জীবন থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। ১৯৭২
সালে তিনি মেট্রিক পাস করেন। ১৯৭৫ ও ১৯৯৬ সালে মেম্বর নির্বাচন করে পরাজিত হন।
তারপরও তিনি দমে থাকেন নি। পকেটের টাকা খরচ করে জনকল্যানে কাজ করেছেন তিনি। দল
ও সামাজিকতার কারণে ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৫৬টি মামলা করা
হয়।
তিনি জানান, দলীয় নেত্রীর কাছে ওই সব মামলার কপি দিয়ে সহানুভুতি অর্জন করতে
সক্ষম হন। পেয়ে যান নৌকা প্রতিক। নৌকা প্রতিক পেয়ে আশান্বিত হয়ে রঘুনাথপুর
ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন মুনছুর আলী মন্ডল। চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হওয়ার বাসনা নিয়ে তিনি নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন। কিšু‘ দলের নেতারা তার সাথে
বিশ্বাস ঘাতকতা করেন।
লাখ লাখ টাকা নিয়েও নৌকার পক্ষে কর্মীরা ভোট করেন নি বলে তিনি সে সময় জানান।
মুনছুর আলীর স্ত্রী জহুরা খাতুন জানান, তার স্বামী সারা জীবন দলের জন্য কাজ করেছে।
অথচ ভোটের সময় নেতারা তার পাশে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এই শোকেই তিনি মারা
গেলেন। উল্লেখ্য মুনছুর আলীর পরাজয় নিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় একটি সচিত্র
প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।