রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অন্যের জমি বিক্রি করতে গিয়ে ভেন্ডার ও
স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছেন তিন প্রতারক। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে
রূপগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে। আটক তিন জন সম্পর্কে জামাই, ভায়রা ও শ্বশুর হন। স্থানীয়
জাল দলিল চক্রের সহায়তায় জমি সম্পাদন করতে গিয়ে আটক হন তারা। পরে জমির টাকা
ফেরত ও স্থানীয়দের কাছে মোচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছে তারা। তবে স্থানীয় জাল দলিল চক্রের
কোন বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ দালাল
চক্রের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশতাধিক লোক জমি ক্রয় করে হয়েছেন প্রতারিত। স্থানীয়
প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় জাল দলিলের চক্রটি এলাকায় আছে বহাল তবিয়তে।
প্রতারক চক্রের সদস্যরা হলেন, দক্ষিণ কুমিল্লা থানার গোলচর এলাকার সামসুল হকের ছেলে
মোবারক হোসেন, নোয়ালয় এলাকার দুলা মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম ও সৈয়দপুর এলাকার
নাজির মিয়ার ছেলে বাহারুল আলম।
তেতলার এলাকার সিরু খাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম জানায়, তেতলাব মৌজার আর.এস ৩৫৯ ও
৩৫২ দাগের সাড়ে ৬ শতাংশ জমি স্থানীয় জমির দালাল সিডু, মোবারক হোসেন,
আজিজুল মাতবর ও আবুল হোসেন ডালির মধ্যস্থতায় কুমিল্লা দক্ষিণ থানার সৈয়দপুর
গ্রামের সৌদি প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের জমি সাড়ে দশ লাখ টাকায় ক্রয় করেন।
গত ১ বছর আগে জমির মালিক আনোয়ার হোসেনের শ্বশুর আবুল কাশেম বায়না বাবদ ৪ লাখ
টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার নামে ঘুরিয়ে আসছেন। জমির মালিক ও তার মেয়ের
জামাই সৌদি থেকে এসে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবে বলে তারিখ দেয়। গত ৮ জানুয়ারি
আবুল কাশেম স্থানীয় দালালদের পরামর্শে তার ছোট মেয়ের জামাই বাহারুল আলমকে তার বড়
মেয়ের জামাই সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করিয়ে দেয়ার জন্য জমির ক্রেতার কাছে আসেন।
পরে বাকি ৬ লাখ টাকা জমির দালাল সিডু, মোবারক হোসেন, আজিজুল মাতবরের সামনে
আবুল কাশেম ও তার কথিত মেয়ের জামাই আনোয়ার নামধারী বাহারুলের কাছে বুঝিয়ে
দেয়।
পরে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়ার পর জমি বিক্রেতা
বাহারুল আনোয়ার সেজে দলিল সম্পাদন করার সময় ভোটার আইডি কার্ড ও পিতা মাতার
নাম সঠিকভাবে বলতে না পারায় দলিল লেখকদের সন্দেহ হলে আসল না নকল মালিক তা চ্যালেন্স
করেন। এ ঘটনায় জমির ক্রেতা সাইফুল ও তার লোকজন প্রতিবাদ করলে বেরিয়ে আসে দালাল
চক্র ও আনোয়ারের শ্বশুরের জালিয়াতির ঘটনা। পরে রূপগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তাদের
আটক রেখে মুচলেকা রেখে ও টাকা ফেরত দেয়ার স্বীকারোক্তি দিলে তাদের নিয়ে আসা হয়
তেতলাব গ্রামে। পরে এ সংবাদ থানা পুলিশের কাছে পৌঁছলে পুলিশ উভয় পক্ষকে থানায়
নিয়ে যায়। জমির টাকা ফেরত দেয়ার পর ও মুচলেকা দিয়ে তারা ভবিষ্যতে এ কাজ করবে না বলে
লিখিত দিলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, তেতলার গ্রামের খলিল মাঝির ছেলে সিডু মাঝি,
হাসান আলী শেখের ছেলে মোবারক, হালিম মাতবরের ছেলে আজিজুলসহ একটি চক্র দীর্ঘ
দিন যাবত বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জমি ক্রয় করতে আসা লোকজনের সাথে জাল
দলিল ও জালিয়াতি করে প্রায় অর্ধশতাধিক লোককে পথে বসিয়েছেন। স্থানীয় কিছু
লোকের সহায়তায় এ চক্রটি প্রতিনিয়ত জাল দলিলসহ ভুক্তভোগিদের সাথে প্রতারণা
করছেন। জমি বিক্রিতাদের অপমান অপদস্ত করলেও দালাল চক্রটির কোন বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ
প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনগণ। তবে, অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা তাদের
বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, ইতি মধ্যে এ
ধরনের চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সকলে
সচেতন থাকলে প্রতারকরা কোন প্রকার পার পাবেনা।