অনলাইন ডেস্কঃ
নিচুমানের খাবারের পসরা সাজিয়েছে বাণিজ্যমেলায় খণ্ডকালীন রেস্টুরেন্ট ও ফুড স্টল। এসব রেস্টুরেন্ট ও ফুড স্টলের ব্যবসায়ীরা এককালীন আয়ের প্রত্যাশায় গ্রাহক ঠকিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বেশি দরে নিচুমানের খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন আগত ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা।
এবারের বাণিজ্যমেলায় ফুড স্টল (এফএস) রয়েছে ২৪টি। ব্যবসায়ীরা স্টল বরাদ্দ নেয়াকালে নিজস্ব পণ্য বিক্রির কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। বেশিরভাগ ফুড স্টলের পণ্য নিয়ে আসা হয়েছে রাজধানীর চকবাজার ও পুরাতন ঢাকার অখ্যাত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন। বিক্রয়কর্মীদের মিষ্টি ভাষা ও লোভনীয় প্যাকেজ ফাঁদে পড়ে যাচাই-বাছাই না করে কিনে ঠকে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলছেন, যেহেতু বাণিজ্য মন্ত্র্যণালয় ও ইপিবি’র আয়োজনে মেলা সেহেতু এখানে পর্যাপ্ত মনিটরিং থাকার কথা। কিন্তু বিশ্বাস করে যাচাই-বাছাই না করে পণ্য কিনে রীতিমতো ঝগড়া বেধে যাচ্ছে বিক্রেতাদের সঙ্গে।
এদিকে, প্রতিবারের মতো এবারো হাজি বিরিয়ানি নাম দিয়ে প্রতারণায় জোট বেধেছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বেশি দামে নিচুমানের খাবার বিক্রির অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। তবে এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে উচ্ছ্বিষ্ট খাবার ও ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ পলিসি। আর এসব পলিসির কাছে হেরে গিয়ে রীতিমতো ঝগড়া হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে।
রেস্টুরেন্ট মালিকরাও বেশ চালাক। সাইন করা সাদা মেমোতে দাম লিখে তুলে নিচ্ছেন বিল। আর ক্রেতাদের অভিযোগ নিয়ে ভোক্তা অধিকারের অফিসাররা গেলে রীতিমতো দায় অস্বীকার করেন রেস্টুরেন্ট ম্যানেজাররা।
মেলায় দেখা গেছে, হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব, অনিক হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউজ, নিউ হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড নিউ কাবাব ঘর, হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব রোস্তারাঁ, হাজি রেস্তোরাঁ, হাজি বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব ঘর’ নামে একাধিক খাবারের দোকান রয়েছে। বেশির ভাগই মৌসুমী ব্যবসায়ী।
পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের হাজি বিরিয়ানির মূল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্যমেলায় তাদের কোনো দোকান নেই। অনেকে হাজি বিরিয়ানির নাম ভাঙিয়ে দর্শনার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে ।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খাবারের দোকানে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য তৈরি হচ্ছে। বাসি খাবার গরম করে ক্রেতাদের কাছে পুণরায় বিক্রি করা হচ্ছে। মেলায় নির্ধারিত মূল্যের ৩/৪ গুণ বেশি দামে খাবার বিক্রি হচ্ছে। নামীদামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দিচ্ছে এসব রেস্টুরেন্ট। অনেকে না জেনে খাওয়া শেষে বিল দিতে গিয়ে রীতিমতো বিপদে পড়ছেন। এ নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বিক্রেতাদের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হচ্ছে।
ফেসবুকে অন্য দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের মেলায় কিছু না খেতে এবং খাওয়ার আগে দাম জেনে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ভুক্তভোগিরা। অনেকে খাবারের বিল ফেসবুকে পোস্ট করে মেলার আয়োজকদের তীব্র সমালোচনা করছেন।
এদিকে, বাণিজ্যমেলায় খাবার কর্নারে অতিরিক্ত দাম এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ও ঝুটা খাবার বিক্রির দায়ে ৫ প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও এক মালিককে ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মেলা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত দামের তালিকা থেকে জানা গেছে, নান রুটি স্পেশাল ৬০ টাকা, সাধারণ ৩০, দেশি মুরগির চিকেন টিকা ৩০০, চিকেন বিরিয়ানি হাফ প্লেট ১৫০ আর ফুল প্লেট ২৯০ টাকা, মাটন বিরিয়ানির দামও কাছাকাছি, বিফ কাচ্চির দাম ১৪০ হাফ এবং ফুল ২৭০ টাকা। কোমল পানীয় ও মিনারেল ওয়াটারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫ টাকা বেশি।
খাবারের এ মূল্য তালিকা মেলার বিভিন্ন স্থানে বিশাল লম্বা সাইনবোর্ডে সাঁটানো থাকলেও কোনো দোকানে তা দেখা যায়নি। এমনকি প্রত্যেক দোকানের খাবারের টেবিলে মূল্য তালিকা দেয়ার নির্দেশ থাকলেও কেউ তা মানছেন না। অধিকাংশ দোকানেই ভোক্তাদের কাছ থেকে ২/৩ গুণ বা কখনো তারও বেশি দাম আদায় করছে খাবারের দোকানগুলো।
অথচ মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রতিটি খাবার স্টল-প্যাভিলিয়নকে নির্দেশনা দিয়েছে সামনে এবং টেবিলে খাবারের মেন্যু’র সঙ্গে ইপিবি নির্ধারিত দাম প্রদর্শন করতে। কিন্তু কে মানে কার নির্দেশনা। আন্তর্জাতিক মানের মেলা এটি, অথচ সেখানে দিনে-দুপুরে দর্শকের পকেট থেকে ডাকাতি করা হলেও কারো যেনো এ বিষয়ে কিছুই করার নেই। যখন কোনো অভিযান পরিচালনা হয় তখন তারা মূল্য তালিকা দেখান। তবে অভিযানের কর্মকর্তারা চলে গেলে প্রত্যেক টেবিল থেকে মূল্য তালিকা উঠিয়ে ফেলেন। উল্টো জরিমানা দেয়া টাকা উঠাতে আরো মরিয়া হয়ে পড়েন দোকানিরা। ওজনেও কম দিচ্ছেন তারা।
ক্রেতারা বলছেন, জরিমানা করার পর উল্টো এসব রেস্টুরেন্ট মালিকরা ক্ষেপে উঠেছেন। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের উপর। ভোক্তা অধিকার আইনে খাদ্যে ভেজালে মৃত্যুদণ্ডের কথাও বলা আছে। কিন্তু চোখের সামনে এতো অপরাধ দেখার পরও শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দেয়ায় কয়েকদিন ঠিক থাকলেও ফের আগের মতো ব্যবসা করছে রেস্টুরেন্টগুলো।
ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে মেলায় অস্থায়ীভাবে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থাকলেও তাদের পর্যাপ্ত মনিটরিং নেয় বলে ক্রেতারা মনে করছেন।