জাকির হোসেন,পীরগঞ্জ(ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : স্বাস্থ্য ও পরিবার
পরিকল্পনা বিভাগের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের
জাবরহাট উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পদায়নকৃত চিকিৎসকগনকে
প্রেষণে টেনে নেওয়ায় প্রায় তিন বছর থেকে চিকিৎসকের অভাবে
ধুকছে উপজেলার জাবরহাটসহ আশপাশের চার ইউনিয়নের ২৫-৩০ গ্রামের
মানুষ।উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,
উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের জাবরহাট স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ
কেন্দ্রটি ২৫-৩০ গ্রামের মানুষের চিকিৎসার বিবেচনায় ‘পল্লি দাতব্য
চিকিৎসালয়’ (আরডি) হিসেবে চালু রয়েছে। দশ শয্যার মাতৃসেবা
ইউনিটও নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে।এজন্য সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগ
থেকে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপ-সহকারি কমিউনিািট
মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), একজন ফার্মাসিষ্ট, একজন ‘মিড
ওয়াইফ’ (নার্স) ও এমএলএসএস পদে লোক পদায়ন করা হয়েছে। পরিবার
পরিকল্পনা বিভাগ থেকে একজন স্যাকমো, একজন পরিবার কল্যাণ
পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি), নিরাপত্তা প্রহরী ও আয়া পদায়ন করা হয়েছে
সেখানে।কিন্তু জাবরহাট উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২০১৪ সালে যোগদান করার
দুই দিনের মাথায় মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ফারহানা কে
প্রেষণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তৎকালিন উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। ওই কেন্দ্রে পদায়নকৃত স্যাকমো সারা হেমব্রমকে তিন
বছর আগে, ‘মিড ওয়াইফ’ (সেবিকা) সাজেদা আকতার কে গত
বছরের(২০১৬) সেপ্টেম্বর এবং একই কেন্দ্রের ফার্মাসিষ্ট বকুল হোসেনকে
২০১৪ সাজের জুলাই (আড়াই বছর) থেকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
প্রেষণে রাখা হয়েছে।উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকগনকে প্রেষণে টেনে
নেওয়ায় ঐ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসকের অভাব পূরণ করতেন
সেখানে পদায়নকৃত স্যাকমো ডাঃ সফিকুল ইসলাম। কিন্তু ঐ একমাত্র
চিকিৎসকও একই ঘটনার শিকার হয়েছেন। জাবরহাট পরিবারকল্যাণ
কেন্দ্রের স্যাকমো ডা. সফিকুল ইসলামকেও গত অক্টোবরে ঠাকুরগাঁও সদর
উপজেলার আখানগর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে প্রেষণে নিয়েছেন
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।ঐ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা
কেন্দ্র চালাচ্ছেন ওই ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফ ডব্লিউভি
) মোছাম্মৎ আলোফা বেগম। সম্প্রতি দুপুরে জাবরহাট কেন্দ্রে গিয়ে
দেখা গেছে, সেখানে অর্ধশতাধিক রোগির ভিড়। কয়েকজন লাইনে
দাঁড়িয়ে।গত বুধবার বড়বাড়ি নমেনপাড়া গ্রামের সত্যরাম দেবশর্মা
(৪৫) মাথার ব্যথার চিকিৎসা নিতে এ কেন্দ্রে আসেন। কেন্দ্রের একমাত্র
চিকিৎসক ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফ ডব্লিউ ভি) আলেফা বেগম
তার হাতে কাগজে প্যাকেট করে কয়টি বড়ি দিলেন। দিলেন। এ সময়
লাইনের সামনে থাকা এনামুল হক(৪৮), রাবেয়া বেগম (৫৯) ও হাসান আলী
(৬৫)তাদের অসুখের কথা বললে তাদের হাতেও কয়েকটি করে বড়ি কাগজে
মুড়িয়ে ধরিয়ে দিলেন তিনি।রোগির ভিড় কমে যাওয়ার এ ব্যাপারে প্রশ্ন
করা হলে আলেফা বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগের ও পরিবার
পরিকল্পনা বিভাগের অর্ধশতাধিক রোগি এখানে আসে। আমাকে একাই
এসব রোগিকে সামলাতে হয়। রোগির ভিড়ে আমার কষ্টের শেষ নেই। একজন
ডাক্তারের পোস্টিং হলেও এলাকার মানুষ শান্তি পায়।’চিকিৎসক পদায়ন করা
থাকলেও তাদেরকে প্রেষণে টেনে নেওয়ায় প্রায় তিন বছর থেকে চিকিৎসা
সংকটে ধুকছেন জাবরহাট সহ আশপাশের হাজারো মানুষ।
জাবরহাট ইউপি সদস্য সাহের আলী জানান, জাবরহাটের ১৪ গ্রামসহ
বৈরচুনা, সেনগাঁও ও দৌলতপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের মানুষ এ
কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসে। ১২ কিমি দূরে পীরগঞ্জ হাসপাতাল। খরচ
করে সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া অনেকের পক্ষে অসম্ভব। উপজেলা
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে রাখা এখানকার ডাক্তার-নার্সকে ফেরত দেওয়ার দাবি
এলাকার মানুষের।উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুস্তম
আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘আগের উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পারিকল্পনা
কর্মকর্তা তাদেরকে প্রেষণে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাদেরকে
ফিরিয়ে দেওয়ার বিষযে চিন্তাভাবনা করছি। এ ব্যাপারে কর্তপক্ষের কাছে
লিখব।’