ক্রাইমরিপোর্টার নীলফামারীঃ- নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদী থেকে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনকারী জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া-আওয়ামী লীগ নেতা-রফিকুল ইসলাম রফিক (৪৫)নামের একজন কে আটক করেছে ডিমলা থানা পুলিশ।সে উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একই এলাকার পুর্বখড়িবাড়ী গ্রামের মৃত তফির উদ্দিনের পুত্র।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, সোমবার(২৩শে জানুয়ারী) সন্ধ্যায় উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের শুটিবাড়ী বাজার হতে ডিমলা থানার সিনিয়র সাবইন্সপেক্টর শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃত রফিকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে প্রভাব খাটিয়ে অবাধে অবৈধ ভাবে দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা নদীর কমান্ড অববাহিকায় কখনো বোমা মেশিন কখনো নৌকায় সেফ এর মাধ্যমে পাথর উত্তোলনের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করা এক সময়ের সামান্য ক্ষুদ্র সার ব্যবসায়ী রফিক কোনো রকমে খুচরা বিক্রেতা হিসেবে সারের দোকান করে জীবন-যাপন করতেন।কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত টেখাখড়িবাড়ির ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তিস্তা নদীসহ কমান্ড এলাকা হতে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে ইতোমধ্যে তিনি বিপুল পরিমানের অর্থ-সম্পদের পাহার গড়েছেন।
আর টাকার গরমে তিনি এলাকার ময়মুরুব্বি, বড়-ছোট,রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে আন্তরিক সুলভ আচরন,সম্প্রীতি ভুলে গিয়ে এখন আর ভালো-মন্দ’র এত হিসেব করেন না!
তার কাছে শুধু তার নিজস্ব সিদ্ধান্তই একেবারে চুরান্ত!
আর তার এলাকায় তার সিদ্ধান্তের বাহিরে যে কেউ গেলেই নিশ্চিত তাকে হতে হয়েছে নানান ধরনের ক্ষতিরসাধন, হেনেস্তা, স্বরযন্ত্রমুলক হয়রানির শিকার ও খুইয়েছেন অর্থও এলাকাবাসীর এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তিনি দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে কায়েম করেছেন নেতাগিরির রাজত্ব।
ইউনিয়নে অপরাজনীতি করেই ভাব নিয়েছেন অনেক বড় দাপটে নেতার!
তার ইউনিয়নের একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক হয়ে এই প্র্রতিবেদককে অভিযোগ করে জানান,রফিক আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন কমিটির একজন যুগ্ন সাধারন সম্পাদক হয়েও তিনি স্ব-দলীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে এবং তাদের সাথে কোনো রকমের যোগাযোগ সহ সু-সম্পর্ক তৈরী না করে সর্বদাই স্হানীয় বেশ কিছু বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে ও আতাত করে এলাকায় যা খুশি তাই করে চলেছেন।
আর তার ভয়ে সে অন্যায় ভাবে অনেক কিছু করলেও কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করবার সাহস পায়না।
গত কয়েক বছরে তার সাথে যত ঝগড়া-বিবাদ, মত পার্থক্য ও দ্বন্দ্ব হয়েছে তার অধিকাংশই ত্যাগী,সক্রিয়,মাঠ পর্যায়ের পরিক্ষিত তৃনমুল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীই!
অবশ্য তার বিরুদ্ধে তৃনমুল নেতাকর্মীদের এমনটা অভিযোগের সত্যতা মিলেছে রফিকের নিজস্ব ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটেও।
তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখা গেছে, তিনি তার ফেসবুক আইডিতে এ পর্যন্ত যে অর্ধ শতাধিক
ছবি পোষ্ট করেছেন তার দুই তৃতীয়াংশ বিএনপি নেতাদের সাথে তার একান্ত ছবি! যা অবাক হবার মতই।
এ দিকে জিরো থেকে হিরো রফিকের গ্রেফতারের বিষয়টি জানা-জানি হয়ে গেলে গয়াবাড়ির শুটিবাড়ী বাজারে অনেকেই খুশিতে উল্লাসিত হয়ে একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছেন ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
এবং রফিকের গ্রেফাতারের বিষয়ে তার একটি ছবি এই প্রতিবেদক ফেসবুকে পোস্ট করলে, তার এলাকার অনেকেই সেখানে কমেন্ট করেন ও সাংবাদিকদের ফোন করে জানান,এই রফিক গত ১০-১৫ বছর পুর্বে গরু চুরির একটি মামলায় প্রধান আসামীও ছিলেন!
ডিমলা থানা সিনিয়র সাব-ইন্সপেক্টর শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ জানান,আটককৃত রফিকের বিরুদ্ধে তিস্তা নদীসহ নদীর বিভিন্ন কমান্ড এলাকায় অবৈধ ভাবে সরকারী সম্পত্তি ব্যবহার করে ধ্বংসাত্বক ভাবে পাথর উত্তোলনের সত্যতা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এবং তার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে যাহার মামলা নং-(১৪)।
ডিমলা থানার ওসি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,মঙ্গলবার সকালে আটককৃত কে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে প্রেরন করা হবে।
উল্লেখ্য যে,তিস্তা নদী হতে অবাধে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলনের কারনে এক দিকে যেমন উপজেলার সব প্রধান সড়ক সহ পাইবাস সড়ক গুলো বেয়াল দশার শিকার হয়েছেন অন্যদিকে এবারের বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে উপজেলার প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ বন্যায় তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন।