কাজী নজরুল ইসলাম,ফেনী প্রতিনিধি:
ফেনীতে ফুড সাপ্লিমেন্ট ব্যবসা রমরমা হয়ে উঠেছে। পুষ্টিপূরণের জন্য খাদ্যের সম্পূরক হিসেবে ব্যবহৃত এই ভিটামিন ও খনিজ পণ্যে জেলার ওষুধের দোকানগুলো সয়লাব হয়ে গেছে। এনিয়ে একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও বন্ধ হচ্ছে না অনুমোদনহীন এই ব্যবসা। দোকান মালিকরা জানিয়েছেন, নামীদামী ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে (প্রেসক্রিপশন) এসব ভিটামিন লিখায় দোকানে রাখতে হয়।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, অত্যাধুনিক মোড়কে প্লাস্টিক বোতলভর্তি বিদেশী ফুড সাপ্লিমেন্ট আসছে বৈধ ও অবৈধ পথে। এসব ভিটামিনের কোন প্রয়োজন না হলেও ব্যবহারের পরামর্শ দেন ‘বিশেষজ্ঞ’ ডাক্তাররা। ওষুধ বিক্রেতারা জানান, বেশিরভাগ রোগীদের ব্যবস্থাপত্রেই একাধিক ফুড সাপ্লিমেন্টের নাম লেখা থাকে। এ অবস্থায় উচ্চমূল্য দিয়ে রোগীরা এগুলো কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ভেজাল ও মানহীন পণ্যের কারণে স্বাস্থ্যহানিও ঘটছে। ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রতারণা হলেও ওষুধ প্রশাসন দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ফেনীর ড্রাগ সুপার সালমা সিদ্দিকা ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রয় বন্ধে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকের দুই ঘন্টা পরই শহরে জেলা প্রশাসনের অভিযানে ৫টি ফার্মেসীতে অভিযান চালানো হয়। এসব দোকান থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের পাশাপাশি ফুড সাপ্লিমেন্ট উদ্ধার করা হয়। এর পূর্বে দৌলত ট্রেডিং কর্পোরেশন থেকে বিপুল পরিমান ফুড সাপ্লিমেন্ট উদ্ধার করে।
জানা গেছে, কমিশন সহ লোভনীয় অফারে এসব ফুড সাপ্লিমেন্ট ব্যবস্থাপত্রে লিখেন ডাক্তাররা। ডাক্তারদের মধ্যে ডা: মিজানুর রহমান বেগ, ডা: এম এ হালিম, ডা: সাইফুদ্দীন. ডা: আবু ইউসুফ ও ডা: তাসলিমা আক্তার, ডা: সিকান্দার আবু জাফর, ডা: মোজাম্মেল হোসেন, ডা: আরপি সাহা, ডা: মুহাম্মদ যোবায়ের হুসায়েন, ডা: আরাফাত হোসেন, ডা: মাহবুবা খানম, ডা: গোলাম মাওলা ও ডা: শফিকুল ইসলাম, ডা: জাসরিন আক্তার মিলি, ডা: নার্গিস সুলতানা, ডা: জয়ন্তী সাহা, ডা: নাজমুল হক মুন্না, ডা: ফাহমিদা ইয়াসমিন, ডা: জালাল উদ্দিন মেনন ও ডা: হাসিনা আক্তার স্বপ্না, ডা: সাইফুল ইসলাম ও ডা: শামীম আরা নাসরিন, ডা: মলয় কান্তি, ডা: হাবিবুর রহমান, ডা: আফজাল হোসেন, ডা: অজয় কুমার ঘোষের নাম ফার্মেসী মালিক জানিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ফুড সাপ্লিমেন্ট কোম্পানীর আমন্ত্রনে ভারত সহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মঙ্গলবার ডা: আরপি সাহা শহরের পোষ্ট অফিস রোডের মিলন ফার্মেসীতে এক রুগীকে ক্যালসিয়ামের জন্য ব্যবস্থাপত্রে ৪শ ৮০ টাকা মূল্যের চায়না ফুড সাপ্লিমেন্ট লিখেন। বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের একই ক্যালসিয়াম বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। গতকাল দুপুরে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক এক সভায় ফেনী জেলা ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট সমিতির সভাপতি ও রাজ্জাক মেডিকেল হলের স্বত্ত্বাধিকারী নাছির উদ্দিন মিলন ওই ব্যবস্থাপত্রটি তুলে ধরেন। সভায় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভেজাল বিরোধী সভায় জেলা প্রশাসক মো: আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অনুমোদনহীন কোন প্রকার ঔষধ বিক্রয় করা যাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া ওই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ‘ফুড সাপ্লিমেন্ট ও অবৈধ আমদানীকৃত কোন ঔষধ বিক্রয় করা যাবে না। নকল, ভেজাল, অবৈধ ও সরকারি ঔষধ কোন অবস্থাতে দোকানে রাখা যাবে না। মোবাইল কোর্ট প্রতিনিয়ত চলবে। অনুমোদনহীন ঔষধ লিখিত ব্যবস্থাপত্র সংরক্ষণ করে সমিতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কোন প্রকার অপরাধের জন্য জরিমানা ও সাজার দায়-দায়িত্ব সমিতি গ্রহণ করবে না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী জেলা ড্রাগ সুপার সালমা সিদ্দিকা বলেন, অনুমোদনহীন ও অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।