মোঃ বাবুল হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বিএমআই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেলেন জেষ্ঠ্য শিক্ষক সেলিনা আখতার
চৌধুরী । মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যরা সভাপতি পদে
থাকতে পারবেন না উচ্চ আদালতের এমন রায়ের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন
হয়ে পরে। ফলে ৮ মাস ধরে বিল বেতন থেকে বঞ্চিত হন শিক্ষক কর্মচারীরা। গতকাল শনিবার
বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে শিক্ষক কর্মচারীরা সভা করে জেষ্ঠ্য শিক্ষক সেলিনা আখতার
চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে ও কলেজ পরিচালনার জন্য এ্যাডহক
কমিটি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাগজ পাঠন।
১৯৯৭ সালে কলেজটি প্রতিষ্টার পর থেকে শাহিনুর রহমান অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। শুরু
থেকেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি জেঁকে বসে প্রতিষ্ঠানটিতে। অর্থনীতি বিষয়ে
অনার্স মাষ্টার্স পাস করা বেগম নাসিমা সুলতানাকে ২০০৪ সালে নিয়ম বহির্ভুত
ভাবে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন। একই সেশনে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে
শাহিন আলম নামে আরো একজনকে নিয়োগ দেন। শাহিন আলমের কাগজ পত্র এমপিও
ভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পাঠানো হয়। একই বিষয়ে দুই
শিক্ষক নিয়োগের ঘটনা সন্ধেহ জনক হওয়ায় ২০০৭ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শন ও
নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মোঃ আকবর আলী খান ও উপ-পরিচালক সাইফ উদ্দিন
আহম্মেদ চৌধুরী পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনে বেগম নাসিমা সুলতানার শিক্ষাগত
যোগ্যতার সনদ ও নিয়োগ পত্র জালিয়াতির মাধ্যমে পরিবর্তন করে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের
প্রভাষক দেখিয়ে এমপিও ভুক্ত করার অভিযোগ প্রমানিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ
শাহিনুর রহমান ও প্রভাষক নাসিমা সুলতানার এমপিও বাতিল করাসহ দন্ড বিধি
৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় মামলা দায়ের করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ
প্রদান করেন। তৎকালিন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ ১৬ আগষ্ট ২০০৭
সালে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৬০৯/৩/০৭)।
৬ আগষ্ট ২০০৭ সালে ম্যানেজিং কমিটির সভায় অধ্যক্ষ শাহিনুর ও প্রভাষক বেগম
নাসিমা সুলতানাকে সাময়িক বরখাস্ত করায় মাউশি কর্তৃক তাদের এমপিও বাতিল করা
হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রতিষ্টানের সভাপতি হওয়ার সুবাদে দীর্ঘ ৭ বছর পর শাহিনুর
রহমান মহামান্য আদালতের কোন আদেশ কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ কারিগরি
বোর্ডের আদেশ নির্দেশ ছাড়াই ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সাল থেকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন
করেন। দায়িত্ব নেয়ার আড়াই বছরের মধ্যে ৪ জন প্রভাষক ও স্কুল শাখায় ৩ জন শিক্ষক
নিয়োগ দিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেন। উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা নূর উদ্দিন আল ফারুক বলেন, অধ্যক্ষ শাহিনুর ২ ফেব্রুয়ারী ২০১২ তারিখের
আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে আপিলেট ডিভিশনে রীট করলে ১৫ নভেম্বর
২০১৫ তারিখে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন শুনানী অন্তে হাই
কোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখে মূল মামলা খারিজ করে দেন। সাময়িক বরখাস্তকৃত
অধ্যক্ষ শাহিনুর রহমানের দায়িত্ব পালন করা বিষয়ে তিনি বলেন বে-সরকারি কারিগরি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রবিধান মালা ২০০৯ এর ৩৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার
কর্তৃক প্রদত্ত কোন আদেশ, সিদ্ধান্ত এবং জারিকৃত কোন আদেশের সহিত
অসংগতিপূর্ণ হলে ব্যবস্থাপনা কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্ত অকার্যকর ও বাতিল যোগ্য বলে
গণ্য হবে। এরই প্রেক্ষিতে শিক্ষক কর্মচারীরা অবৈধ অধ্যক্ষ শাহিনুরের অধিনে বিল
বেতনে স্বাক্ষার না করে অনস্থা জ্ঞাপন করে। ফলে গত ৮ মাস ধরে বিল বেতন বন্ধ থাকে।
অবশেষে আজ শনিবার শিক্ষক কর্মচারীরা সভা করে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক সেলিনা আখতার
চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে ও এ্যাডহক কমিটি চেয়ে সংশ্লিষ্ট
দপ্তরে কাগজ পত্র পাঠান