গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকার দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও ৬ রাউন্ড
বুলেটসহ একটি ম্যাগাজিন কাদের খানের বাড়ির উঠোনের আমগাছের
নিচে মাটি খুঁড়ে বুধবার গভীর রাতে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে
একইদিনে ঢাকা থেকে পলাতক কিলার আনোয়ারুল ইসলাম রানাকে গ্রেফতার
করেছে পুলিশ। সে সুন্দরগঞ্জের ভেলারাকাজির ভিটা গ্রামের মৃত তমসের
আলীর ছেলে। ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কর্মরত ছিল। লিটন কিলিং মিশনে
সে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে। বৃহস্পতিবার ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সে
১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য হাজির করে পুলিশ। এদিকে কাদের খানের
পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে এবং যে পরিবহনের টিকিট কেটে কিলারদের
বগুড়া থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল সে টিকিটেরও কপি উদ্ধার করেছে
পুলিশ।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে সাংবাদিকদের তাৎক্ষনিক এক
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
বুধবার বিকেল থেকেই পুলিশ কাদের খানের গ্রামের বাড়ি সুন্দরগঞ্জের
ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে এমপি লিটন খুনে
ব্যবহৃত পিস্তলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে ব্যাপক তলাসী শুরু করে। এসময়
ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা বাড়ি সংলগ্ন ৩টি পুকুরের পানি সেচে ফেলে।
কিন্তু সেখান থেকে কোন আলামতই পাওয়া যায়নি। অবশেষে রিমান্ডে নিয়ে
কাদের খানকে চাপ সৃষ্টি করা হলে তিনি পিস্তলের কথা স্বীকার করেন এবং
তাকে সাথে নিয়ে রাতে বাড়িতে যাওয়ার পর তার নির্দেশিত আমগাছের
গোড়ায় মাটি খুঁড়ে অস্ত্র ও ম্যাগাজিন উদ্ধার হয়। মাটির নিচ থেকে
উদ্ধারকৃত পিস্তল ও ম্যাগাজিন দেখেই বোঝা যায় দেড় থেকে দু’মাসের
মধ্যেই এগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল।
সুন্দরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে কিলারদের প্রশিক্ষণ ঃ
সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে কাদের
খানের একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে
ছিল গ্রেফতারকৃত কিলার শাহীন। পুলিশকে দেয়া তাদের তথ্য অনুযায়ি
জানা গেছে, এই বাড়িতেই কিলারদের পিস্তল চালানো এবং কিলিং মিশন
সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিত কাদের খান। বাড়ি থেকেই অস্ত্রসহ গিয়ে এমপি
লিটনকে হত্যা করা হয়। সেদিন ওই পিস্তলটির ম্যাগাজিনে ৬ রাউন্ড বুলেট
ছিল। কাদের খানের বাড়িতে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অসাবধানতাবশতঃ
পিস্তল থেকে একটি বুলেট বেরিয়ে গিয়ে দেয়ালে লাগে। পুলিশের
অভিযানকালে ঘরের দেয়ালে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। ওই পিস্তলের
ম্যাগাজিনে থাকা ৫ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েই খুনিরা এমপি লিটনকে হত্যা করে।
আ’লীগ নেতা চন্দনকে খুঁজছে পুলিশ ঃ
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বামনডাঙ্গার মনমথ গ্রামের
সুশীল সরকারের ছেলে চন্দন সরকারকে পুলিশ এখন খুঁজছে। কাদের খানের জব্দ
করা মোবাইল ফোন ট্যাকিং করে তার সাথে এই চন্দন সরকারের ঘনিষ্ট
যোগাযোগ সম্পর্কে জানতে পারে পুলিশ। সেই মুলতঃ খুনের দিন এমপি
লিটনের বাড়িতে তার অবস্থান এবং অনুকুল পরিবেশের খবর মোবাইল ফোনে
খুনিদের জ্ঞাত করে। তার তথ্যমতে কিলিং মিশন সফল করে খুনিরা। উলেখ্য,
অত্যান্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান চন্দন সরকার উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর
সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে
জড়িয়ে পড়ে। ফলে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দল থেকে বহিস্কার করে
উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এই ক্ষোভে সে
সুন্দরগঞ্জে এমপি বিরোধী গ্র“পের সাথে যুক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন
স্থানে লিখিত অভিযোগ প্রদান এবং সভা, সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে এমপির চরম
বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। কাদের খানকে গ্রেফতার করার পর থেকেই সে এলাকা
থেকে গা ঢাকা দেয়। ফলে পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজেও পাচ্ছে না।
কাদের খানের অবৈধ অস্ত্রের খোঁজে পুলিশ ঃ
পুলিশ কাদের খানের অবৈধ অস্ত্রের সন্ধানে ব্যাপক তলাসী ও জিজ্ঞাসাবাদ
অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে লাইসেন্স করা পিস্তল এবং ১০ রাউন্ড বুলেট জব্দ
করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় আরেকটি লাইসেন্স বিহীন পিস্তল বাড়ি থেকে
উদ্ধার করা হয়। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে আরও আরেকটি লাইসেন্স বিহীন
পিস্তল এবং অন্যান্য অস্ত্র তার কাছে রয়েছে। তবে রিমান্ডে
জিজ্ঞাসাবাদকালে এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তারা জানতে পারবে বলে পুলিশ
আশাবাদি।
কে এই কাদের খান?
সুন্দরগঞ্জের এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা
গেছে, কাদের খানের পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ময়মনসিংহ জেলায়। তার
দাদা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম
ছাপড়হাটি গ্রামে জমি কিনে পরিবার-পরিজনসহ বসবাস শুরু করেন। কাদের
খানের পিতা হাসেন আলী খা। তার স্ত্রী ডাঃ নাসিমা আকতার একজন
গাইনী বিশেষজ্ঞ হিসেবে সরকারি চাকরি করছেন। সেনা বাহিনী থেকে
কাদের খান কর্ণেল হিসেবে অবসর নেয়ার পরে বগুড়ার রহমান নগর
দিলাদারপাড়ায় গরিব শাহ ক্লিনিক নামে একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে
স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ক্লিনিকটি পরিচালনা করেন। ক্লিনিকের সাথেই
তিনি বসতবাড়িও নির্মাণ করে বগুড়াতেই বসবাস শুরু করেন। এর পাশাপাশি
গ্রামের বাড়িতেও একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে তিনি মাঝে
মধ্যে এসেই বসবাস করতেন। এ সময়টিতে জাতীয় পার্টির হুসেইন
মুহাম্মদ এরশাদের সাথে পূর্ব পরিচয়ের সুত্র ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি
শুরু করেন মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে জামায়াত প্রার্থী সাবেক এমপি
মাওলানা আব্দুল আজিজকে পরাজিত করে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হন।
শেখ হুমায়ুন হক্কানী গাইবান্ধা থেকে ঃ