প্রতিনিধি, হেলাল শেখ ঃ
রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী সাভারে আবার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে
অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ
বিছিন্ন করার জন্য অভিযানে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপের সন্ধান পেলেও রাঘব বোয়াল ধরা ছোঁয়ার বাইরেই
থেকে যাচ্ছে। কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বৈধ গ্রাহক হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে, গত ৭ মাস
ধরে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন অভিযান চলছে।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাভার সদর ইউনিয়নের কলমা, আশুলিয়ার জামগড়া, ঘোষবাগ, জিরাবো
এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে এখনো। সাভার তিতাস গ্যাস
ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবির এবং
কোম্পানির ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। যে সকল এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাজার
হাজার অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করেছেন, সেই সকল এলাকায় আবার আগের মতোই অনেকেই অবৈধ ভাবে
গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করছেন। অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করতে তিতাস কোম্পানি অনেক বাসা বাড়িতে
এখনও কোনো প্রকার অভিযানে যায়নি বলে সুত্র জানায়।
জানা যায়, গত কয়েক মাস আগে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংযোগ দিতে এক একজনের কাছ থেকে প্রায় ৪০
থেকে ৫০ হাজার করে টাকা নিয়ে হাজার হাজার পরিবারের মধ্যে অবৈধ ভাবে সংযোগ দেয় প্রভাবশালী চক্র । এমন
খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এসব হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করেন তিতাস
কর্মকর্তারা। সুত্র জানায়, প্রতিটি গ্রাম মহল্লা থেকে অভিযানে এক থেকে দুই হাজার অবৈধ সংযোগ
বিছিন্ন করে আসছেন তিতাস কর্মকর্তারা। সুত্র জানায়, এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখেরও বেশি অবৈধ গ্যাস
সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য সাভারে নিয়মিত অবৈধ গ্যাসের একটি সংযোগ বিছিন্ন করতে গেলে সেখানে প্রায় ৫০ হাজার
অবৈধ সংযোগের সন্ধান পেয়েছেন তিতাসের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকার পাঁচটি
গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার সংযোগ ওই দিন দুপুর পর্যন্ত বিছিন্ন করা হয়। জানা যায়, আশুলিয়ার পুকুরপাড়
এলাকায় একটি অবৈধ সংযোগের সন্ধানে যান কর্মকর্তারা। সেই সংযোগটি বিছিন্ন অভিযানে গেলে
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপের সন্ধান পেয়ে যান তারা। এ ব্যাপারে সাভার আঞ্চলিক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন
এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিপণন শাখার ম্যানেজার ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওই দিন সকালে আমরা
পুকুরপাড় এলাকায় একটি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করতে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময়
সংযোগটি বিছিন্ন করতে গিয়ে ওভারলে থেকে আরো অবৈধ সংযোগ নেওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পরে
সেই মোতাবেক পুকুরপাড় ২২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ
গ্যাস সংযোগের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই মোতাবেক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার অবৈধ
সংযোগ বিছিন্ন করা হয় ওই দিনই। সেই সাথে দেড়, দুই ও আড়াই ইঞ্চি ব্যাসের নি¤œমানের পাইপ, রাইজার ও
চুলাসহ নানা রকম উপকরণ জব্দ করা হয়। আর বাকি অবৈধ সংযোগগুলো বিছিন্ন করতে সময় লাগবে বলে তিনি
জানান।
এ ব্যাপারে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়)
প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অভিযান নিয়মিত চলবে এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীর বিরুদ্ধে
আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে সরেজমিনে জানা যায়, বেশিরভাগ বৈধ গ্রাহকরা বলছেন, সারাদিন চুলায়
গ্যাস থাকে না, টিপ টিপ করে মমের বাতির মতো জ্বলে, এতে করে রান্না করা যায় না। রাতের ১২টার পর যদিও
গ্যাস আসে, ঠিক ভোর ৪টার দিকে আবার যা তাই, গ্যাস থাকে না তবুও গ্যাসের চুলার বিলতো দিতে হয়।
জানা গেছে, যারা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন তারা অনেকেই বলছেন, আমাদের
সংযোগ বৈধ ভাবে দিতেই ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই বলছেন, চোরে চোরে
খালাতো ভাই! তাই আমরা সবাই গ্যাস সংযোগের ব্যাপারে হয়রানির শিকার হইতাছি। অনেকেই বলছেন, গ্যাস
সংযোগ নিয়ে ভেলকিবাজী চলছে গত এক বছর ধরে। প্রশ্নঃ এইসব সংযোগ দেয়ার সময় অনেকেই জড়িত থাকলেও
এখন তারা কোথায়? উক্ত এলাকায় লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ দিতে দালাল চক্র চোরে চোরে খালাতো ভাইয়েরা লাখ লাখ
টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকা লোকসান করেছে তারা। কয়েকজন বলছেন, গ্যাস
সংযোগের বেশিরভাগ গ্রাহকই প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চান না
কেউ। বিভিন্ন কারণে এলাকায় গ্যাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষগুলো। বাসা বাড়ির
মালিকরা ঠিকই তাদের ঘর ভাড়া নিচ্ছেন, শিল্প এলাকায় ৮০% নি¤œ আয়ের মানুষ বসবাস করেন। বিবেকবান
মানুষের কাছে প্রশ্নঃ গ্যাস সংযোগ নিয়ে আর কত ভেলকিবাজি করবে ওরা? দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা
গ্রহণ করলে কোটি কোটি টাকা লোকসানের বিষয়টি পরিস্কার হবে। তবে গোপনীয় ভাবে তদন্ত করলে আরো
কেঁচো খুঁড়তে বড় বড় সাপের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে অনেকেই মনে করছেন।