স্পোর্টস ডেস্কঃ ৩১২। টেস্ট ম্যাচের এক ইনিংসে স্কোরটা কি একেবারেই ফেলনা? ৫ দিনে যেখানে ৪ ইনিংস খেলা হয় বা খেলার সুযোগ থাকে সেখানে এক ইনিংসে প্রত্যাশার তুলনায় কম রান উঠেছে বলে যেভাবে হা-হুতাশ শুরু হয়েছে চারদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অধিকাংশ গণমাধ্যমে যেভাবে সাকিব-তামিমদের তুলোধুনা করা হচ্ছে, তা বেশ হতাশার। বাংলাদেশ এখন পেশাদার পরিণত ক্রিকেট দল। এ দলকে ঘিরে আমরা যারা আছি-সমর্থক, দর্শক, শুভাকাঙ্খী, সাংবাদিক, সংগঠক-তাদেরও পরিণত ও পেশাদার আচরণে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হওয়া উচিত।ক্রিকেটের সবচে’ পাগুলে সমর্থকগোষ্ঠী যাদের আছে, সেই টেস্ট পরাশক্তি ভারতে সম্প্রতি কী হয়েছে? নিজেদের মাটিতে পরপর দু’ইনিংসে ১শ’ ১০ রানের মধ্যে ধসে পড়েছে বিরাট কোহলিরা। সেখানকার সমর্থকরা শোকে-দুঃখে নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু অন্য অনেকবারের মতো তারা কোথাও কোনো ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর কিছু করেননি। শান্ত থেকেছেন। তাদের মিডিয়া সমালোচনা করলেও সেই অর্থে চড়াও হয়নি। এ ধৈর্যে্যর প্রতিদান কিন্তু অশ্বিন কোহলিরা দিয়েছেন পরের ম্যাচেই। দুর্দান্তভাবে জয় তুলে নিয়ে সমতা ফিরিয়েছেন সিরিজে। শ্রীলংকা সফরের বাংলাদেশ দলকে নিয়ে এখনই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাবার তাই কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।কী করেছে বাংলাদেশ? একটা ফ্ল্যাট উইকেটে যেখানে অনায়াসেই ৪-৫শ’ রান করা যায়, সেখানে ৩শ’ রান করেছে এ তো? ক্রিকেটে এটা কি খুবই খারাপ কোনো পারফর্ম্যান্স? ভারত-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলও তো প্রায়ই ২শ’ রানের কোটা পেরোতে পারে না। তাতে কি তাদের সব শেষ হয়ে যায়?বাংলাদেশেরও কিছুই শেষ হয়ে যায়নি। ম্যাচে এখনো দু’দিন বাকি। এক ইনিংসে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে পরেরটাতেও পারবে না তা তো নয়। এ ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এখনো ভালোভাবেই টিকে আছে।দ্বিতীয় ইনিংসে লংকানদের টার্গেট থাকবে দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশকে বড় টার্গেট দেয়া। সেক্ষেত্রে সুযোগ আসতে পারে টাইগারদের সামনেও। পড়তে পারে টপাটপ উইকেট। আর যদি লংকানরা ধীরে সুস্থে খেলে বা উইকেট পড়ে যাবার পর রক্ষণ খোলসে ঢুকে পড়ে তাহলে তো ভালোই হয়। সময় যতো বেশি তারা পার করবে, ততো ৪র্থ ইনিংসে কম সময় পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে। পরিস্থিতিই বলবে টাইগারদের কী করতে হবে।অতীতে অনেক ম্যাচে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। কখনো সফল হয়েছে, কখনো ব্যর্থ। তবে বর্তমান বাংলাদেশ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে যেমন অভিজ্ঞ তেমনি দলটির রয়েছে নিয়মিত ভালো করতে পারার আত্মবিশ্বাস। আছে গেলো কয়েকবছরে টানা ভালো খেলার অনুপ্রেরণা। দলের অন্তত ৬ জন ব্যাটসম্যানের আছে বড় ইনিংস খেলার যোগ্যতা। তামিম-সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহদের আছে সেঞ্চুরি ও ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস। দাঁত কামড়ে এদের অন্তত দু’জনও যদি পড়ে থাকতে পারেন গলের ক্রিজে, ইতিবাচক ফল আসতে বাধ্য।আর প্রথম ইনিংসে ৫শ’র কাছাকাছি রান নিয়েছে বলে ২য় ইনিংসেও ভালো কিছুই করবে লংকানরা, এটাই বা ধরে নেয়ার কী আছে। ছোটখাট একটা ধস তো তাদের ইনিংসেও নামতে পারে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের ঝুলিতে কিন্তু কিছু উইকেট জমা পড়া বাকি আছে। একবোরেই খালি হাতে তিনি ফিরবেন বলে আমার মনে হয় না। আর কাটার মাস্টার মুস্তাফিজও সব চেয়ে দেখবেন, তাও মানি কী করে!সুতরাং রং কিছু এখনো ছড়ানোর বাকি আছে গল টেস্টে। আশা করি, তাতে রাঙায়িত হবে টাইগার ভক্ত-শুভাকাঙখীদেরই মন। ৫ দিন শেষে তারাই পিঠ চাপড়ে দেবেন মুশফিক বাহিনীর। এটাই তো ক্রিকেট, টেস্ট ক্রিকেট!