অনলাইন রিপোর্ট ঃ
দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই এতো উন্নয়ন হচ্ছে। যদি গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই থাকতো তাহলে তারা এতো কথা বা সমালোচনা করতে পারতেন না। গণতন্ত্র রয়েছে বলেই তা সম্ভব হচ্ছে। বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
যারা দেশে গণতন্ত্রের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, কারো কারো মুখে শুনি তাদের গণতন্ত্র লাগবে। আসলে দেশে সামরিক শাসক থাকলে তাদের কাছে তখন পরিস্থিতিটা অনেকটা গণতান্ত্রিক মনে হয়। কারণ ওই শাসকদের পদলেহন করে তারা বাড়তি সুবিধা নিতে পারবেন। অস্বাভাবিক একটা ক্ষমতা পেলে তাদের গুরুত্ব বাড়তে পারে বা তারা একটা পতাকা পেতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর তাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দেয়ার ষড়যন্ত্রের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, তার সরকারের উদ্যোগে টেলিভিশনকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়াতেই আজকে অনেক বেসরকারি টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং তারা সমালোচনা বা বিরোধিতা করতে পারছেন।
আমাদের পূর্বে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা এ উন্নয়নটা করতে পারেনি কেনো, প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।সরকার প্রধান বলেন, আমরা ৮ বছরে যা পারলাম তা ২১ বছরেও কেনো করতে পারেনি তাদের সেই জবাবটা আগে দিতে হবে যারা আজকে সমালোচনা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি আর প্রতিটি কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করি। আর যা কিছু করি তা জনগণের স্বার্থে। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চিন্তা করি না। পতাকা পেলাম কি পেলাম না সেটারও চিন্তা করি না।২০০১ সালের নির্বাচনের আগে গ্যাস বিক্রির ষড়যন্ত্রে সাড়া না দেয়ায় আর ক্ষমতায় আসতে পারেননি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
দেশে গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এতো উন্নয়ন করার পর যারা তৃপ্তি পান না তারা আসলে কি চায়? আমাদের চেষ্টার ফলে তাদের গরিব দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা আনার ব্যবসাটা যদি শেষ হয়ে যায়, এটাই তাদের শঙ্কা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দেশের মানুষ জানতো বঙ্গবন্ধু দেশের কল্যাণে কাজ করছেন। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী তাকে সময় দিতে চাইলো না।
তারা বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করতে লাগলো। এতে স্বাধীনতা বিরোধীরা সুযোগ পায়। আমরা ১৫ আগস্ট দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এরপর স্বাধীনতা বিরোধীরা সরকারে আসে।
তারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পরিবর্তে পুরস্কৃত করে। সংসদে বসিয়েছে, গাড়িতে জাতীয় পতাকা দিয়েছে।তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে গ্রামগঞ্জে ঘুরে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করি। এর আলোকে পরিকল্পনা নিয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পরিকল্পনা গ্রহণ করি। মানুষের কল্যাণই ছিল আমাদের লক্ষ্য।
এজন্য একটা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, বর্গাচাষিদের কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে জামানতবিহীন ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের বই ও উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা শিক্ষিত হয়ে পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করতে পারে।
সরকার মনে করে মানুষকে শিক্ষিত করতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচন তরান্বিত হবে। কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে সার, বীজ, কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রাংশ দেয়া হচ্ছে। কৃষকদের কৃষি উপকরণ কার্ড দেয়া হয়েছে।
১০ টাকায় কৃষকরা ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারছে। কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে যাতে তারা কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে এজন্য ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষদের সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলা হচ্ছে।
তারা যদি ২শ’ টাকা সঞ্চয় করে, সরকার এর সঙ্গে আরো ২শ’ টাকা দিচ্ছে। গ্রামের মানুষের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর দ্রুত দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। এরপর ২০০৯ সালের পর যতো দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে অতীতে আর কোনো সরকারের সময় এমনটি হয়নি।
এমনকি অনেক এনজিও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করলেও তাদের পক্ষে এটা সম্ভব হয়নি। কিছু ব্যাংক ঋণ দিয়েছে, তাদের ঋণ নিয়ে কতো শতাংশ মানুষ ঋণ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে?তিনি বলেন, ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংক যারা প্রতি বছর ১ শতাংশ করে দারিদ্র্য হ্রাস করেছেন বলে দাবি করেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো ব্র্যাক এ দেশে কাজ করছে ১৯৭২ সাল থেকে, আর গ্রামীণ ব্যাংক শুরু করেছে ’৮৫ সাল থেকে। ’৭২ থেকে এখন ৪৫ বছর, আর ’৮৫ সাল থেকে এখন ৩২ বছর। এ দু’জায়গা থেকে যদি ১ শতাংশ করে হ্রাস পেতে পারে, ফলে ২ শতাংশ করে হ্রাস পেয়েছে। তাহলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য তো থাকেই না। শূন্যের কোটায় চলে যাবার কথা বহু আগেই, গেলো না কেনো?প্রধানমন্ত্রী জানান, এর সঙ্গে প্রায় আড়াই হাজারের মতো এনজিও জড়িত। তারাও নাকি দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করছে, তারাও নাকি দারিদ্র্য হ্রাসে করছে।
তাহলে তো দারিদ্র্য থাকারই কথা না। তাহলে তারা কি দারিদ্র্য বিমোচন করেছে, না লালন-পালন করেছে। ’৯৬ সালে সরকার গঠন করার সময় দারিদ্র্যের হার ৫৭ ভাগ ছিল, এখন দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগ। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস পেলে এতো দিনে দারিদ্র্য থাকারই কথা নয়।
গ্রামের মানুষদের ক্ষুদ্র ঋণের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আমাদের পদক্ষেপের ফলে ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে উঠে এসেছে।তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের ভাতা ও শিক্ষা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
আর্নিং এন্ড লার্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। শিশু জন্মানোর পর মাকে ভাতা দেয়া হচ্ছে।
যাতে শিশু মায়ের দুধ পায়, সে সঠিক পুষ্টি পায়। শিশু স্কুলে গেলে মাকে ভাতা দেয়া হচ্ছে। এজন্য মায়ের নামে একাউন্ট খুলে দেয়া হয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে যারা গাছ লাগাবে এবং পরিচর্যা করবে তাদের গাছের আয়ের ৭০ শতাংশ দেয়া হয়।
এগুলোও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজে লাগছে। বাংলাদেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার ১৪২টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে দারিদ্র্র্য বিমোচনের জন্য।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে গিয়ে কাউকে যাতে নিঃস্ব হতে না হয় তাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক খোলা হয়েছে। ডিজিটাল তালিকাভুক্তির মাধ্যমে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্মার্ট কার্ড নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে।তিনি বলেন, ৩৬২টি কলেজ সরকারি করা হয়েছে।
যেসব উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই সেখানে কলেজ সরকারি করা হচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, কোনো মতেই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে আমরা প্রশ্রয় দেবো না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। যেকোনো মূল্যে জঙ্গিবাদ নির্মূল করা হবে। ছেলেমেয়েরা যেনো বিপথে না যায় এজন্য সব অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকারের প্রতিটি স্তরে নারীরা নির্বাচিত হয়ে আসছে। গ্রামের মেয়েদের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের গৃহ দেয়া হচ্ছে। যাদের ভিটামাটি আছে তাদের জন্য ২ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়ে ঘর করে দেয়া হবে। একটি মানুষও গৃহছাড়া থাকবে না।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছে। গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হচ্ছে।তিনি বলেন, বর্তমানে ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
৪৫ লাখ সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সরকারের লক্ষ্য। উন্নয়ন বাজেটের ৯০ শতাংশ টাকা নিজেদের আয় থেকে ব্যয় করতে পারছি। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষের কল্যাণ।
তিনি তার সারাজীবন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে সুন্দরবন সুন্দরবন বলে চিৎকার করছেন। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন থেকে অনেক দূরে, ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা হচ্ছে রামপালে, সুন্দরবনে নয়। তাও আবার সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট হচ্ছে। এর চিমনীর ধোঁয়া এতো ওপরে চলে যাবে যা সুন্দরবনে কোনো দিন পৌঁছবে না।তিনি বলেন, এর ছাই যেটা হবে সেটাও কেনার জন্য এরই মধ্যে ভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানি যোগাযোগ শুরু করেছে। সেখানে কার্বন শোধনের জন্য ৫ লাখ গাছপালা রোপণ করা হবে যার দেড় লাখ এরই মধ্যে রোপণ হয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা আসলে কোনো দিনও ওই জায়গায় যাননি। কারণ, সেটা যাবার মতো জায়গাও ছিল না। ওটা পশুর নদীর পাড়ের পরিত্যক্ত ডোবার মতো জায়গা।
উঁচু করে আমরা সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি।মিউনিখে শহরের ভেতরেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তিনি দেখে এসেছেন, আমাদের দিনাজপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ‘কিছু লোক কাজ করার সময় শুধু ফ্যাকড়া বাধানোর পরিকল্পনায় থাকে, মানুষকে কাজে বাধা দেয়াটা অনেকের চরিত্র। তারা এটা করবেই বলেন প্রধানমন্ত্রী।