রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত
আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রফিকুল
ইসলাম সেলিম শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রায়
৬ ঘন্টা ব্যাপি ওই তদন্ত করেন। এসময় উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের
কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান, ইজারাদার ও ঠিকাদাররা উপস্থিত থেকে
অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য প্রদান করেন।
রৌমারী ইউএনও’র বিরিুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যানদের অভিযোগ ও সরকারের
গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ প্রদান করা
হয়। জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন অভিযোগ গুলোর সরেজমিনে
তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে রৌমারী পাঠান বলে জানা গেছে।
ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদাদের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম
দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তাহলো, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন
মূলক কর্মসূচী থেকে শতকরা ১০ থেকে ২০ পার্সেন্ট ঘুষ আদারের।
টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ভিজিডি, এডিপি, বিশেষ বরাদ্দের প্রকল্প,
সরকারের ত্রাণ কর্মসূচী, অপ্রত্যাশিত ব্যয়সহ বিভিন্ন খাত থেকে লাখ
লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। দাঁতভাঙ্গা ও বন্দবেড় ইউনিয়নে চৌকিদার
নিয়োগে জনপ্রতি ৭০ হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করেন। সর্বশেষ
রৌমারী হাটবাজার ইজারায় সিডিউল বিক্রির প্রায় ১৩ লাখ টাকা
আত্মসাৎ করেছেন। এতে প্রতিটি সিডিউলের মূল্য ছিল ২০ হাজার
৪শ’ টাকা। সর্বমোট ৯৯টি সিডিউল বিক্রি হয়। সেখানে তিনি
ইউএনও রাজস্ব খাতে জমা দেন ৩৩টি সিডিউল বিক্রির টাকা। বাকী
৬৬টি সিডিউল বিক্রির ১৩ লাখ টাকা জমা হয়নি।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাশেম জানান, রৌমারী সোনালী
ব্যাংক শাখায় রাজস্ব খাতে গত বছর জুন ৭৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা
হয়েছে। এটাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ বাস্তবায়ন করার কথা
থাকলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর
(এডিপি) আওতায় চলতি অর্থ বছরে ৪০ লাখ টাকার ২০টি প্রকল্প ঘুষ
গ্রহণের মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়েছেন।
বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন অভিযোগ করেন, আমার
ইউনিয়নে ৩জন চৌকিদার নিয়ে নিয়োগে আমার কাছে ৪ লাখ টাকা
দাবি করেন। এছাড়া আমার ইউনিয়নে বন্যা দুর্গতদের জন্য সরকারি ভাবে
৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। সেই টাকার অর্ধেকও খরচ করা হয়নি। ত্রাণ ও
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া আমার ইউনিয়নের
বন্যাদুর্গত এলাকা দেখতে আসেন। এতে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার ত্রাণ
কার্যক্রমে ইউএনও নয়ছয় করেন। ত্রাণের অর্ধেক টাকা ভুয়া বিল ভাউচারে
আত্মসাৎ করেছেন।
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি হারুন-অর রশীদ অভিযোগ করেন, হাট বাজার
উন্নয়ন বাজেটের আওতায় রৌমারী পশুহাটে সেড নির্মাণ করার কথা
বলে দুই লাখ টাকা প্রকল্পে ইউএনও আমার কাছে ২০ পাসেন্ট ঘুষ দাবি
করেন। চরশৌলমারী এলাকার কাজি আজিজুল ইসলামের লাইসেন্স বাতিলের
হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন ওই ইউএনও। যাদুরচর
ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সবুজ অভিযোগ করেন,
কর্তিমারী হাটবাজার ইজারার জামানতের টাকা ২৪ হাজার টাকা ফেরত
চাইলে তিনি ১০ পার্সেন্ট ঘুষ দাবি করেন।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ঘুষ দুর্নীতি
প্রসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম সেলিম
সাংবাদিকদের জানান, ইউএনও’র সামনেই ঘুষ দর্নীতির তথ্য প্রদান
করেছে চেয়ারম্যান ও ঠিকাদাররা। তারা স্বাক্ষ ও লিখিত তথ্য প্রমাণ
দিয়েছে। আমি সে হিসেবেই প্রতিবেদন দাখিল করব।