শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নিষিদ্ধ হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার রাজধানীতে নিষিদ্ধঘোষিত হিজবুত তাহরীরের ২ সদস্য গ্রেপ্তার বগুড়ায় আইন কর্মকর্তা নিয়োগ বিএনপি-জামায়াতপন্থি ১০৭ জন অতি বৃষ্টির কারণে লালমনিহাট জেলায় বন্যা নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত বগুড়ায় ট্রাক পরিবহনের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার আত্মসাৎ ও মামলা টিএমএসএস সদস্যদের (RAISE) প্রকল্পের উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দীর্ঘ ১৩ বছর পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে চাকুরী ফেরত পেলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক আশুলিয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিত্যক্ত চুল পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাগ্য বোনার চেষ্টা আদিতমারীর নারীদের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর হলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম

বিক্রী হয়ে গেল হাজারো শহীদের আর্তনাদের বদ্ধভূমি খুনিয়াদিঘি

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭
  • ১৩১ বার পড়া হয়েছে
SAMSUNG CAMERA PICTURES

 

আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাওয়ের বৃহৎ বদ্ধভূমি

হাজারো শহীদের আর্তনাদের রাণীশংকৈল খুনিয়াদিঘি বিক্রী হয়ে

গেছে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে দেশ স্বাধীকার যুদ্ধে

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধে। নির্বিচারে প্রাণ দিতে হয় দেশের নীরিহ

মানুষকে। লড়াইয়ের নামে হানাদার পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর

শ^াসরুদ্বকর তুমুল লড়াই চলে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে স্বাধীন সার্বভৌম

মানচিত্র লাভ করে বাঙ্গালী জাতি। বিনিময়ে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত ও ২ লক্ষ ৬৯

হাজার অধিক মা বোনের সম্ভ্রম’র বিনিময়ে অর্জিত হয় লাল সবুজের

পতাকার বাংলাদেশ।

সেই মহান মুক্তিযুদ্বের সময় পূর্ব পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর

সেনারা বর্বরতা পরিচয় দেয়। লোম হর্ষক নির্যাতন চালায়

খুনিয়াদিঘিতে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা সহ এলাকার শান্ত সহজ সরল

মানুষগুলোকে ধরে এনে রাণীশংকৈল থানায় আটক করে রাখত। তিন

চারদিন অনাহারে থাকার ফলে ক্ষুধার জ্বালা আর পিপাসায় কাতর হয়ে

ছটপট করতে থাকত। এমন সময় সন্ধ্যার পর নিরিহ লোকগুলোর চোখ বেঁধে

খুনিয়া দিঘি পাড়ে আনা হতো। তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন

চালানোর পর চোখ বেঁধে সারিবদ্ধ ভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার

করে মেরে ফেলা হতো। বন্ধুকের ব্যালটের খোচা আর নির্যাতনের যন্ত্রণায়

এলাকার আকাশ বাতাস করুন আর্তনাদে প্রকম্পিত হয়ে যেত।

আর্তনাদ শুনে পশু পাখিও যেন অশান্ত হয়ে উঠতো। নারী পুরুষ যাকে

যেখানে পেতো নিয়ে আসতো তাদের ক্যাম্পে। নারীদের করতো সম্ভ্রম

হারা আর পুরুষদের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদ

বলানোর চেষ্টা করতো । পাক শ্বাসকদের অত্যাচার আমলে না নিয়ে

বাঙ্গালীর তাদের কথা না শুনলেই তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলে দিতো যত্রতত্র।

এমনিই লোহমর্ষক নির্মম নির্যাতন’র উপজেলার খুনিয়া দিঘী।

ইতিহাস সমৃদ্ব এই দিঘীটি বর্তমান উপজেলা পরিষদ হতে দক্ষিণে

প্রায় ১ কিঃমিঃ পথ অতিক্রম করলেই রাস্তার পাশে সবার চোখে পড়ে।

বিশাল আকৃতির শিমুল গাছের ছায়ার নীচে বড় অক্ষরে লিখা খুনিয়া

দিঘি স্মৃতিসৌধ। এ দিঘীর স্বৃতিসৌধ হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর

বিজয় দিবস ও ২৬ র্মাচ স্বাধীনতা দিবস শহীদদের শ্রদ্বাভরে স্মরণ করেন

উপজেলা প্রশাসনসহ রাণীশংকৈলবাসী।

মুক্তিযুদ্ধ কালিন কমান্ডার মো. সিরাজুল ইসলাম’র সাথে কথা বলে

জানা যায়, এই খুনিয়া দিঘী মুক্তিযুদ্ধের স্বাক্ষী বহন করে আসছে।

বাঙ্গালী ও মুক্তিযোদ্বাদের করার স্থান। উপজেলা সহ পাশ^বর্তী উপজেলা

হরিপুরের স্বাধীনতাকামী পক্ষের লোকদের ধরে এনে চালাতো লোহমর্ষক

নির্যাতন। দিঘীর পাড়ে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে লাশ দিঘীর

পানিতে ফেলো দিতো । দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক পরেও দিঘীর পানি

শহীদদের রক্তের লাল হয়ে থাকতো। দিঘীর চারপাশে পাওয়া যেতে শহীদদের হাড়

হাড্ডি। জেলার সর্ব বৃহৎ বদ্ধভূমি খুনয়িা দিঘীর ইতিহাস পড়লেই নতুন

প্রজন্ম মুক্তিযোদ্বের ইতিহাস জানতে পারবে। তারা জানবে মুক্তিযুদ্ধের

ভয়াবহতা আর পাক বাহিনীর অশোভনীয় নির্মমতার কথা। অথচ

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও বদ্ধভূমিটি সরকারের নজরে না এসে কিছু

অর্থলোভী অমানুষদের হস্তক্ষেপে বিক্রী হয়ে যায়, চলে যায় ভূমি দস্যুদের

দখলে। বদ্ধভূমির সংরক্ষণ না করে নিজেকে আড়াল করে দায়সারাভাবে সময় পার

করার চেষ্টা করছেন উপজেলার কর্তা বাবুরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, দিঘীটি খাস খতিয়ান ১ এর দুটি দাগে ৩৭৭ পারেড়

জমি ৩ একর ৫০ শতক এবং ৩৭৭ এর বাটা ১০৯১ দাগে দিঘীটি ২ একর

১৮ শতক যার মোট জমি ৫ একর ৬৮ শতক। সেটেলমেন্ট অফিস সুত্রমতে,

২০০৬ সালের ভূমি জরিপে জমিটি এখনো নতুন ১৭৯ ও ১৮০ হালদাগে

খাস খতিয়ান হিসেবেই তাদের দপ্তরে লিপিবদ্ব রয়েছে। এর মধ্যে

দিঘীটি মিস কেসে ভুমি উন্নয়ন কর চালু রয়েছে বলে জানান ৩নং

ইউনিয়ন ভুমি অফিস।

যারা দেশের জন্য তাজা প্রাণ দিয়েছেন আমরা শুধু তাদের স্বৃতিটুকু

আগলিয়ে রাখতে পারবো না ! আমরা এ কেমন বাঙ্গালী !

এ নিয়ে কথা হলে বীর মুক্তিযোদ্বা আবু সুফিয়ান, মুক্তিযোদ্বা

হামিদুর রহমান ক্ষোভের সাথে সরকারের কাছে জোর মিনতি করে বলেন,

খুনিয়া দিঘি কয়েক হাজার স্বাধীনতাকামি শহীদ বাঙালীর করুন

আর্তনাদ বিজড়িত বদ্ধভূমি। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্বাদের বুকে

আগলিয়ে রেখেছেন। দিচ্ছেন সন্মানীভাতাসহ নানান সুবিধা। শহীদ

ভাইদের স্বৃতি রক্ষা করার জন্য সরকারের সু-দৃষ্টি কামনা করছি ।

প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করে হলেও জমিটি প্রশাসনের হেফাজতে নেন।

প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্বাদের সন্মানীভাতার অর্থ দিয়ে জমিটি ক্রয় করা

হোক। তবু মুক্তিযুদ্বে শহীদদের স্বৃতি ধুলিস্যাৎ হতে দেওয়া যায় না,

যাবে না।

কথা হয় মুক্তিযুদ্ধ’র ইতিহাস সংগ্রাহক অধ্যক্ষ মো. তাজুল ইসলামের

সাথে। তিনি বলেন জেলার বৃহৎ বদ্ধভূমি খুনিয়াদিঘি কি করে ব্যক্তি

মালিকানায় চলে যায় ! এটা জাতির বিবেকের বিরুদ্ধে অবস্থান

নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত সর্বোচ্চ

শাস্তি দাবি করেন। যত দ্রুত সম্ভব খুনিয়াদিঘি সরকারের আওতায়

নেওয়ার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।

খুনিয়া দিঘী বিক্রেতা হামিদুর রহমান প্রকৃত তথ্য এড়িয়ে গিয়ে

বলেন, আমি রেকর্ডীয় সুত্রে মালিক হিসেবে দিঘীটি বিক্রি করেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোঃ নাহিদ হাসান বলেন,

খুনিয়া দিঘী প্রকৃত পক্ষে খাস সম্পত্তি। এডিসি রেভিনিউ

দিনাজপুর ১৯৮২ সালে এই দিঘিতে মাছ ধরার স্বত্তে তাদের নামে একটি

আদেশ দেন। উক্ত আদেশের বলে হামিদুর রহমান’র নামে খাজনা খারিজ করে

সম্প্রীতি জমিটি বিক্রী করেছেন তিনি। খুব তাড়াতাড়ি দিনাজপুর

এডিসির অর্ডারের বিরুদ্ধে আদালতি প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451