প্লাবন গুপ্ত শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে হাত-পা ভাঙ্গা ও দগ্ধ অবস্থায় তপতী রাণী চৌধুরী (৫০)
নামের এক গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে
৯টায় পৌর এলাকার সুজাপুর তেঁতুলতলা সেতু সংলগ্ন রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বের
বাঁশের ঝোঁপ থেকে ওই মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তপতী রাণী চৌধুরী সুজাপুর
গ্রামের পল্লী চিকিৎসক সাধনা নন্দ চৌধুরীর প্রথম স্ত্রী।
ঘটনার সাথে জড়িত থানার সন্দেহে তপতী রাণী চৌধুরীর স্বামী পল্লী
চিকিৎসক সাধনা নন্দ চৌধুরী (৫৫), তার দ্বিতীয় স্ত্রী প্রতিমা রাণী চৌধুরী
(৪০) ও ছেলে আকাশ নন্দ চৌধুরীকে (২০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে
পুলিশ।
স্থানীয়রা বলেন, সকালে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ওই মৃতদেহ দেখতে
পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশ এসে হাত-পা ভাঙ্গা ও গদ্ধ অবস্থায়
পড়ে থাকা তপতী রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য দিনাজপুর মর্গে
প্রেরণ করেছে। ঘটনাস্থল ফুলবাড়ি সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল
ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাসিম হাবীব ও পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর
রহমান পরিদর্শন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিবেশি বলেন, তপতী রাণীর সাথে
সাধনা নন্দের বনিবনা না হওয়ার কারণে সাধনা নন্দ দ্বিতীয় বিয়ে করে বাড়ি
ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করে আসছেন। দুই স্ত্রীরই একটি করে ছেলে সন্তান রয়েছে।
কিন্তু ভরণপোষণের অর্থ আনতে পৌর বাজারের ননী গোপাল মোড়েস্থ সাধনা নন্দের
চিকিৎসালয়ে যাতায়াত ছিল তপতী রাণীর। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি
সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে সাধনা নন্দের উপস্থিতিতে তপতী রাণীর সাথে
দ্বিতীয় স্ত্রী প্রতিমা রাণী ও ছেলে আকাশ নন্দের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।
এরপর সেখান থেকে তপতী রাণী বাড়ি ফিরে আসেন।
সাধনা নন্দ চৌধুরী বলেন, তার উপস্থিতিতে তার চিকিৎসালয়ে দুই স্ত্রী ও
ছেলে মধ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এরপর তপতী সেখান থেকে বাড়ি চলে
যায়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় রাত ৯টা পর্যন্ত বাড়ি ফেরেনি। এ কারণে
খোঁজাখুঁজির পর রাত সাড়ে ১২টায় থানায় একটি নিখোঁজ হওয়ার জিডি
দায়ের করেছেন। পরদিন (গতকাল শুক্রবার) শুনছেন তপতীর মৃতদেহ বাঁশ ঝোপের মধ্যে
হাত-পা ভাঙ্গা ও দগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। ৩০বছর আগে তপতী রাণীর সাথে তার বিয়ে
হয়। তার গর্ভের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু দাম্পত্য কলহের কারণে প্রতিমা
রাণীকে বিয়ে করে পৈত্রিক ঘরবাড়ি ছেড়ে পৌর শহরের মধ্য গৌরীপাড়া গ্রামে
বসবাস করে আসছেন। এই স্ত্রীর গর্ভেরও একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। কি কারণে
এবং কারা তপতীকে হত্যা করেছে তা তিনি বুঝে ওঠতে পারছেন না। তবে সঠিক
তদন্ত হয়ে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি সনাক্ত হবে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাসিম হাবীব ও পরিদর্শক (তদন্ত)
আব্দুর রহমান বলেন, হাত-পা ভাঙ্গা এবং আগুনে দগ্ধ অবস্থায় মৃতদেহটি উদ্ধার করা
হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে স্বামী সাধনা নন্দ, তার দ্বিতীয়
স্ত্রী প্রতিমা রাণী ও ছেলে আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
সাধনা নন্দ চৌধুর তার প্রথম স্ত্রী তপতী রাণীকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে
নিখোঁজ দাবি করে রাত সাড়ে ১২টায় থানায় জিডি দায়ের করেছেন। কেউ
নিখোঁজ হওয়ার তিন ঘন্টার মধ্যে থানায় জিডি দায়ের করে না। কিন্তু সাধনা
নন্দ সেটি করেছেন।