সিরিয়ার জনগণ সেদেশের বিমান ঘাঁটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাজধানী দামেস্কে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। জনগণ মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। একজন বিক্ষোভকারী বলেছেন, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সিরিয়ার যেসব সেনা নিহত হয়েছে তারা আমাদেরই সন্তান। তিনি বলেন, মার্কিন হামলা যুদ্ধাপরাধ এবং আমরা তা মেনে নিতে পারিনা। সিরিয়ার জনগণের বিক্ষোভের পাশাপাশি দেশটির সরকারও স্পষ্ট বলে দিয়েছে, মার্কিন আগ্রাসনের পর তারা এখন সিরিয়ার মাটিতে সন্ত্রাসী ও তাদের অনুচরদের অবস্থানের বিরুদ্ধে হামলা বাড়িয়ে দেবে। আমেরিকা শুক্রবার ভোরে ইদলিব প্রদেশে সন্দেহজনক রাসায়নিক অস্ত্র হামলার অজুহাতে সিরিয়ার হোমস প্রদেশের বিমান ঘাঁটিতে ৫৯টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে নয় বেসামরিক মানুষসহ অন্তত ১৪ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছে। মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমান ঘাঁটির পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপ দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। সিরিয়ার সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ ফ্রন্টে রয়েছে। অথচ আমেরিকা সিরিয় সেনাদের হত্যার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ হত্যা করছে এবং তাদের ঘরবাড়িও ধ্বংস করছে। অন্যদিকে জাবহাত আন্নুসরা ও দায়েশের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ায় ধ্বংসাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত। অর্থাৎ আমেরিকা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো একই অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।আমেরিকা দায়েশ বিরোধী কথিত জোট গঠন করে কিংবা সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়ে নানাভাবে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। অথচ সিরিয়ায় সেনা উপস্থিতির ব্যাপারে আমেরিকার সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়নি অথবা দায়েশ বিরোধী জোটের ব্যাপারেও কোনো চুক্তি বা সমঝোতা হয়নি। সিরিয়ার সরকারও এ ব্যাপারে আমেরিকার প্রতি কোনো আহ্বান জানায়নি। ট্রাম্পের শাসনামলে জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়াই সিরিয়ায় মার্কিন একতরফা হস্তক্ষেপের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় মার্কিন স্বেচ্ছাচারী আচরণ আন্তর্জাতিক আইন এবং দেশগুলোর সার্বভৌমত্বেরও লঙ্ঘন। আমেরিকা কোনো অজুহাতেই সিরিয়ায় তার অপরাধযজ্ঞ ধামাচাপা দিতে পারবেনা।
সিরিয়ার জনগণ মনে করেন, সন্ত্রাসী ও আমেরিকানরা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। তাদের উভয়েরই উদ্দেশ্য সিরিয়াকে খণ্ডবিখণ্ড করা এবং তারা নয়া মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়ায় মার্কিনীরা হামলা জোরদার করেছে এবং শুধু সিরিয়ার সরকার ও জনগণই নয় একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমাজও এ আচরণকে আমেরিকার উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ততপরতা বলে মনে করছেন। নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটনের এসব কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে।
সূত্র: পার্সটুডে।