মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ জেলার ঝিনাইদহ
সদর,মহেশপুর,কোটচাঁদপুর,কালীগঞ্জ,শৈলকুপা,হরিনাকুন্ড উপজেলার প্রায় সব
গ্রামেই একসময় সচরাচর দেখা যেত ঢেঁকি। কিন্তু এখন আর তা মোটেও চোখে
দেখা যায় না।
প্রবাদে আছে, মাছে ভাতে বাঙ্গালী। আর বাংলার প্রধান খাদ্য ভাত, যার উপকরণ চাউল
। আর দুই দশক আগেও এই চাউল তৈরীর একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। কালের বিবর্তনে
তা আজ তেমন চোখে না পড়লেও কিছু কিছু গৃহস্থের ঘরে ঐতিহ্য হিসেবে আজও
শোভা পাচ্ছে।
ঢেঁকি কাঠ দিয়ে তৈরী। এটা তৈরীর পর পিছনে একটি ছিদ্র করে তার মধ্যে একটি
শলাকা জাতীয় কাঠ ঢুকানো হয়। যার নাম ‘আগশালী’ বলে এবং সামনের দিক উপর
নিচ করে ছিদ্র করে একটি কাঠ খন্ড ঢুকানো হয় এর নাম ‘মোহনা’ বলে।
দুটি কাঠ খন্ড মাটিতে পুতা হয় আগশালী রাখার জন্য যার নাম ‘পোয়া’ এবং
মোহনা যে জায়গায় রাখা হয় সেখানে একটি চাকা আকৃতির কাঠ মাটির
নিচে পুতে রাখা হয় যার নাম ‘গড়’ বলা হয়। এই গড় বেশীর ভাগই গাছের গুড়ি
দিয়ে তৈরী করা হয়। আর এই গড়ে ধান রেখে ঢেঁকির পিছনে পা দিয়ে চাপ দিলে
ধান ভানা শুরু হয় ।
এই ঢেঁকি দিয়ে শুধু যে ধান ভানা হয় তা নয়, শীতকালে কুমড়া দিয়ে বড়ি তৈরী,
গম দিয়ে আটা তৈরী, আলো চাউল দিয়ে গুড়া তৈরী ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়।
একসময় ঢেঁকির ঠক ঠক শব্দে ঘুম ভাঙ্গত শিশুদের। কিন্তু আজ তা আর চোখেই পড়ে
না। হাতে গোনা কিছু কৃষকের বাড়ীতে ঢেঁকি চোখে পড়লেও তার কোন ব্যবহার
নেই।
এমন এক সময় আসবে, গ্রাম বাংলার কৃষদের বাড়ীতে মোটেও আর ঢেঁকি দেখা
যাবে না এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই ঢেঁকি শুধু কাল্পনিক জগতের এক গল্প
হিসেবে ঠাই পাবে। সেই সাথে কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে শত বছরের এই
ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি।