গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : আগামী ২৫ এপ্রিল
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হতে যাচ্ছে। এ পৌরসভার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় তিরিশ
হাজার হলেও বর্তমান মোট ভোটার ১৪,৯৩৭ জন। এদের মধ্যে
৭,৪৮৮ জন পুরুষ এবং ৭,৪৪৯ জন মহিলা ভোটার। নয়টি
ওয়ার্ডে ৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪৫টি।
আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে ৬জন, সংরক্ষিত ৩টি মহিলা
আসনে ১৩জন এবং ৯টি কাউন্সীলর পদে ৪৪ জন প্রার্থী
প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। গত ৬ এপ্রিল প্রতিক বরাদ্দের পরেই
নির্বাচনী মাঠ বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে।
মেয়র পদে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা
প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের
সভাপতি এ্যাডঃ আতিকুর রহমান মিয়া। বিএনপি থেকে
মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন
করছেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোঃ মিজানুর
রহমান লিপু মিয়া। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মোবাইল
ফোন পেয়েছেন কমলাপুর গ্রামের আহাজ্জাদ মোহসীন
খিপু মিয়া, চামচ প্রতিক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন
মুকসুদপুর কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তিন নং
ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান মন্টু মৃধা, নারকেল গাছ
প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন ৫নং ওয়ার্ডের
গোপীনাথপুর গ্রামের ইব্রাহিম খলিল বাহার মিয়া এবং
জগ প্রতিক নিয়ে মাঠে নেমেছেন একই গ্রামের মোঃ
সাজ্জাদ হোসেন মিয়া।
যেহেতু মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি শক্ত
ঘাটি সেহেতু অনায়াসেই বলা যায় নৌকা প্রতিকের
প্রার্থী আতিকুর রহমান মিয়ার অবস্থান অন্য সকলের চেয়ে
বেশী দৃঢ়। প্রথম দিকে দলীয় কর্মীদের গাছাড়া গাছাড়া
ভাব থাকলেও গত এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সকলকেই সক্রিয়
হয়ে উঠতে দেখা গেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড
কমিটির পাশাপাশি প্রায় শতাধিক কর্মী নিয়ে
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। তারা নিয়মিত
ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন, যা
এরপূর্বে অন্য কোন নির্বাচনে দেখা যায়নি। এতো
বিপুল সংখ্যক কর্মীদের তৎপরতা দেখে অন্যান্য প্রার্থীরা
হিমসিম খাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী
নেতা জানান, আগামী ২/১ দিনের মধ্যে আরো বিপুল
সংখ্যক নেতা কর্মী মাঠে নামবেন। উপজেলা কমিটি ও
বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির নেতারা নিয়মিত
গনসংযোগ করে যাচ্ছেন। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ালীগের
প্রচার সম্পাদক বদরুল আলম বদর শুরু থেকেই নির্বাচনী
কার্যক্রম মনিটরিং করে আসছেন।
বিএনাপি প্রার্থী মিজানুর রহমান লিপু মিয়া খুবই ধীর
গতিতে তার নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারনা
চালাচ্ছেন। নিজ এলাকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভোটারদের
গতি সামাল দিতেই অধিক সময় ব্যয় করছেন। তার
সমর্থনে উচ্চ পর্যায়ের কোন নেতা আসবেন কিনা তা
আগামী ১১ এপ্রিলের পরে তিনি জানাবেন বলে
জানিয়েছেন। পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়
হয়েছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি কতটুকু সফল
হবেন এখনই তা অনুমান করা যাচ্ছেনা।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আহাজ্জাদ মোহসীন খিপু মিয়া
বিভিন্ন চাপ সহ্য করে এখনও মাঠে অবস্থান করছেন। ভোট
যুদ্ধে তিনি কত টুকু সফল হবেন এ মূহুর্তে তা বলা না
গেলেও একজন সাহসী প্রার্থী হিসাবে তিনি নিজেকে
প্রমান করতে পেরেছেন। অনেকের ধারনা সকল বাঁধা অতিক্রম
করে তিনি মাঠে না থাকলে নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি
হয়তো ভিন্ন প্রকার হতো। আতিকুর রহমান মিয়া এবং
আহাজ্জাদ মোহসীন খিপু আপন চাচা-ভাতিজা বিধায়
তাদের এলাকার ভোটাররা বেশ বেকায়দায় পড়েছেন। ভোটাররা
শেষ পর্যন্ত চাচা-ভাতিজাকে ভোট ভাগ করে দিবেন বলে
অনেকের ধারনা।
মিজানুর রহমান মন্টু দীর্ঘ দিন আগে থেকেই পৌর
নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার নিজ কেন্দ্রের
ফলাফল আশানুরুপ হবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেছেন।
পাশাপাশি অন্যান্য কেন্দ্রেও তিনি সম্মান জনক অবস্থান
গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
গোপীনাথপুরের বাহার মিয়া একজন শক্তিশালী প্রার্থী
ছিলেন কিন্তু বংশীয় দ্বন্দের কারনে তিনি কতটুকু সফলতা
পাবেন তা এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। তার আপন ভাতিজা
বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম শিমুল যদি
তার পাশে দাড়িয়ে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেন এবং
নির্বাচনী গনসংযোগে অংশ নেন তবে বাহার মিয়াও
সম্মান জনক ফলাফল করতে পারবেন বলে অনেকেই মন্তব্য
করেছেন। উল্লেখ্য বিগত উপজেলা নির্বাচনে আশরাফুল
আলমের নির্বাচনের মূল পরিচালক ছিলেন বাহার মিয়া।
পৌরসভা নির্বাচনে সর্ব কনিষ্ঠ প্রার্থী মোঃ সাজ্জাদ
হোসেন মিয়া জগ প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
নির্বাচনে তিনি ভালো ফল বয়ে আনতে পারবেন বলে আশা
প্রকাশ করেছেন। বাহার মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়া আপন
চাচাতো ভাই বিধায় বেশ সংকটে আছেন। সবচেয়ে
সমস্যায় পড়েছেন গোপীনাথপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ।
এ দুজনের প্রতিই গ্রামের মানুষের দুর্বলতা রয়েছে।
অবস্থার প্রেক্ষিতে বোঝা যাচ্ছে এ গ্রামের ভোটাররা শেষ
পর্যন্ত ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা গ্রামের জন্য
কল্যান কর হবে না। অবশ্য শেষ পর্যন্ত না দেখে এ মুহুর্তে
জয়-পরাজয়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করা সমীচিন হবে না।