বিশেষ প্রতিবেদক ঃ
রাজধানীর ঢাকায় ও সাভারে চুরি, ছিনতাইকৃত লাইসেন্সবিহীন যানবাহনে দিন দিন যানজট-নৈরাজ্য
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্য গাড়ি ধরলেই চালকরা বলেন, মানতি (মাসিক) আছে। মামলা বা
জরিমানা করাতো দুরের কথা-ট্রাফিক অফিসাররা ডিউটিরত টি এসআই এবং সার্জেন্ট যদি গাড়ি আটক
করেন, এসময় মোবাইল ফোনে কল আসে (টি আই) বলেন, গাড়ি ছেড়ে দিন। এসব অবৈধ গাড়ির মামলা না
করায়-প্রতি মাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা রাজস্ব লোকসান হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
১৩ এপ্রিল সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের দালাল (জাকির) নামের এক ব্যক্তি লাইনম্যান
হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে অনেক দিন ধরে। জাকির লাইসেন্সবিহীন ছোট, বড় প্রায় গাড়ির চালকের কাছ
থেকে চাঁদা আদায় করে বলে চালকরা জানান। সুত্র মতে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা নেওয়া হয়
ছোট গাড়ি থেকে। এ বিষয়ে মাহিন্দ্র গাড়ির চালক আজম, মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের গাড়ির কাগজপত্র লাগে
না। শুধু প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা চাঁদা দিতে দিতে হয় জাকির ভাইকে। এক মাস টাকা না দিলে
গাড়ি আটক করে চারগুণ টাকা আদায় করা হয় বলে তারা জানান। এর কারণে চুরি, ছিনতাইয়ের গাড়িও ঢাকা
জেলায় অবাধে চলছে।
জানা গেছে, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া,
নওগাঁ, এবং রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, ঘোড়াঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার চুরি ও ছিনতাই হওয়া গাড়ি ঢাকা
জেলার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইসহ কয়েকটি এলাকায় ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। সুত্রে জানা গেছে, গাড়ি চোর ও
ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন গাড়ি ক্রয় বিক্রয় করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা
করে এসব চুরি, ছিনতাই হওয়া গাড়ি আটক করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে রোডে লাইসেন্সবিহীন
অবৈধ গাড়ি চলবেনা, সেই সাথে যানজটও থাকবে না বলে দাবি করেন অনেকেই।
উক্ত বিষয়ে কয়েকজন (টিএসআই) এর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, তিন চাকা ও চার চাকা অবৈধ
যানবাহন বেড়ে যাওয়ার কারণে যানজট বাড়ছে। গত চার মাসে শুধু সাভার আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রায়
(৫০০) ৫শ’র বেশি তিন চাকা মাহিন্দ্র নামক গাড়ি বেড়েছে। এসব গাড়ির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এই
তিন চাকা’র গাড়ি রাস্তায় নামার কারণে যানজট সৃষ্টি করছে বলে পুলিশ অফিসাররা জানান। আর এসব গাড়ির
বিষয়ে কথা বলতেই পুলিশের কিছু কর্মকর্তা বলেন, আমরা কিছুই বলতে পারি না, বড় স্যার এর সাথে কথা
বলেন, এসব গাড়ির চালক ও ট্রফিক পুলিশের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে কয়েকজন যাত্রী বলেন, আশুলিয়ার
বাইপাইল থেকে জামগড়া ৫ টাকা ভাড়া, ইউনিক নামলেও ৫ টাকা, শিমুলতলা নামলেও ৫ টাকা নেওয়া হয়। এক
ভাড়া গাড়ির মালিক তিনবার নিচ্ছে ১৫ টাকা, এ যেন দেখার কেউ নেই। লাইসেন্সবিহীন বেশিরভাগ গাড়ি’র
মামলা না দিয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে বলেও অনেক নজির রয়েছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন রাস্তায় আর গেটলক সিটিং সার্ভিস বাস চলবে না বলে জানা গেছে। গণপরিবহনে
নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সিটিং সার্ভিস বাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর জন্য বাস মালিকদের
১৫এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিআরটিএ নির্ধারিত চার্ট অনুসরণ করে যাত্রীদের
কাছ থেকে ভাড়া আদায় করবে সব বাস সংশ্লিষ্টরা। ট্রাকের বাম্পার কিংবা অ্যাঙ্গেলও খুলে ফেলা হবে এসময়ের
মধ্যে।
উল্লেখ্য গত সপ্তাহে মঙ্গলবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সড়ক
পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ। এসময় তিনি বলেন, ১৫ এপ্রিলের পর যাত্রীদের
কাছ থেকে কোনো ভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। ভাড়ার তালিকা গাড়ির ভিতরে দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে
রাখতে হবে। বিশেষ করে ছাদের ওপরে ক্যারিয়ার সাইট অ্যাঙ্গেলও ভেতরের অতিরিক্ত আসন খুলে ফেলতে হবে। প্রতিটি
বাস ও মিনিবাসে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা আসন করতে হবে। রং চটা, রংবিহীন, জরাজীর্ণ বাসসহ
সকল যানবাহন মেরামত করে রাস্তায় নামাতে হবে।
বিশেষ করে সিটিং সার্ভিস এর বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ভিভজিলল্যান্স টিম গঠন করে পরিদর্শন করা
হবে। এছাড়া, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএ এবং ডিএমপিকে চিঠি
দেওয়া হবে। এর আগে, সিটিং সার্ভিস নিয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে
চলাচলকারী সব বাসই লোকাল বাস। সিটিং সার্ভিস বলে কোনো পরিবহণ নেই। অধিকাংশ বাস সরকারি
নিয়ম ভেঙ্গে রাতারাতি সিটিং সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। সরকারি নিয়মে নির্ধারিত ভাড়া মানছে না
কোনো গণপরিবহণই। গাড়িতে যাত্রী যেখানেই নামুক, সর্বশেষ গন্তব্যের ভাড়া ঠিকই আদায় করা হচ্ছে, যা
ন্যায্য ভাড়ার চার থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এর কারণে বেশি বিপাকে পড়ছেন স্বল্পদূরত্বের যাত্রীরা।
যাত্রীদের এখন ৫ টাকার জায়গায় গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ১০ টাকার জায়গায় ২০ থেকে ৩০ টাকা
আদায় করা হয়।
ঢাকা জেলায় পরিবহণ খাতে প্রচুর চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, কোম্পানির
নামে বাস চলাচল শুরুর পরই চাঁদাবাজি বেড়েছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, একজন মালিকের গাড়ি থাক বা না
থাক, ওই মালিকের অধীনে চাঁঁদা দিয়ে গাড়ি চালায়। এ ছাড়া ডিএমপিকে প্রতিদিন ১০৭টি বাস
রিকুইজিশনে দিতে হয়। এ জন্য পুলিশ বাস মালিককে দেয় মাত্র ৩০০ টাকা। এ টাকায় শ্রমিকদের বেতন দেওয়া
যায় না, মালিকেরও কিছুই থাকে না বলে জানান অনেকেই। চুরি ও ছিনতাই হওয়া গাড়িগুলো কালার বদলে রোডে
চলছে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরী বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বিআরটিএ সত্রে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের অক্টবরে রাজধানী ও আশপাশের পাঁচ জেলায় চলাচলকারী সিএনজি
চালিত বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ায় সরকার। বাসের ভাড়া কিলোমিটারে এক টাকা ৭০ পয়সা।
মিনিবাসে এক টাকা ৬০ পয়সা। বাসে ৭ টাকা ও মিনিবাসে সর্বনি¤œ ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ করে
বিআরটিএ । প্রায় সব বাসই সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এ অনিয়ম
ঠেকাতে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত নিয়ে মাঠে বিআরটিএ অভিযান পরিচালনা করেন, এতে কিছু জরিমানা
দিয়েই পার পান বাস মালিকরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্মকর্তা (বিআরটিএ) এর হিসাবে ঢাকা মহানগরে
অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত চলাচল করে প্রায় ৬ হাজার বাস। প্রতিটি বাসে বিআরটিএ-নির্ধারিত ভাড়ার
তালিকা টাঙানোর নিয়ম থাকলেও বাসের স্টাফরা এই নিয়ম মানছেন না। আর সিটিং সেবা বলা হলেও দাঁড়ানো
যাত্রী নিয়ে থাকেন তারা এবং যেখানে-সেখানে বাসসহ বিভিন্ন পরিবহন থামিয়ে যাত্রী নামাতেও দেখা যায়।
বেশিরভাগ যানবাহনেরই কাগজপত্রের সমস্যা রয়েছে। অনেক গাড়ির চালকের ১৮ বছরেরও কম বয়স, শিশু কিশোর
দিয়েও হেলপারের দায়িত্ব পালন করানো হয়। এর কারণেও সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে। এ দিকে বলা হচ্ছে ট্রাফিক
আইন অমান্যে জেল ও বাতিল হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স।