সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের হাওর গুলোতে অকাল বন্যায় বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় ধান পচে
সৃষ্ট গ্যাসে মাছ ও জলজপ্রাণীর মড়ক দেখা দিয়েছে। এই অস্বাভাবিক
মড়কের কারন খতিয়ে দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদ বিজ্ঞান
বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল কাজ শুরু করেছে। তারা প্রাথমিক ভাবে
৪টি কারন শসাক্ত করেছেন সেগুলো হল,পানিতে অক্সিজেন কমে
যাওয়া,অ্যামোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধি,অ্যাসিডিটির প্রভাব ও কীটনাশক।
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন হাওরে পানি-মরা মাছ সহ
জলজ জীব ও উদ্ভিদ প্রজাতির পরীক্ষ-নিরীক্ষা করা শুরু করেছেন। এর আগে
গত শুক্রবার হাওরের পানি ও মাছ পরীক্ষা করে গেছে বাংলাদেশ মৎস গবেষনা
ইনস্টিটিউটের নদী কেন্দ্র,চাঁদপুর-এরইসতিয়াক হায়দার(রাসেল),মোঃ
আশিকুর রহমান ও মাসুদ হোসেন খাঁন ৩সদস্যের বিজ্ঞানী পানির ভৌত ও
রাসায়নিক গুনাবালী পরীক্ষা করেন। প্রতিনিধি দলের মুখ্য বৈজ্ঞানীক
কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদ হোসেন খাঁন বলেন,ডুবে যাওয়া বোরো ধানের
জমিতে থাকা কাচাঁ ধান পচেঁ পানি দূষিত হয়েছে। এর ফলে পানিতে
অস্বাভাবিক হারে হাইড্রোজেন সালফাইট ও এমোনিয়া গ্যাস তৈরী
হওয়ায় কারনে পানির অক্সিজেনের মাত্র কমে গেছে। এছাড়াও মাছের ফুলকায়
ময়লা জমে থাকা একটি কারন হতে পারে। মাছের স্বাভাবিক জীবন ধারনের
জন্য পানিতে যেখানে ৫-৭ পিপিএম অক্সিজেন থাকার কথা সেখানে হাওরের
দূষিত পানিতে ২-৪ পিপিএম অক্সিজেনের অভাবে মাছ ভেসে ওঠেছে।
তাহিরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে অক্সিজেনের পরিমান কিছুটা
সাভাবিক প্রর্যায়ে আছে। কিন্তু অন্যান্য হাওরে বেশি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার
পর সঠিক ভাবে তথ্য জানানো যাবে। হাওরে মাছ ও হাঁসের মড়কের জন্য
ফসলের মাঠে ব্যবহার করা কীটনাশকও একটি কারণ বলে মনে করছে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক দল। তারা
বলছেন,বন্যার পানি ফসলের মাঠ ডুবিয়ে দেয়ায় কীটনাশক ও এসিড
ছড়িয়ে পড়েছে। হাওরের পানি পরীক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ
বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজমল হোসেন ভূঁইয়া
জানান,অন্যান্য এলাকা থেকেও এসিডিটি ও কীটনাশক পানির সঙ্গে
আসতে পারে। যার ফলে মাছের মড়ক দেখা দিয়েছে। ধানের পচা দুর্গন্ধ
থেকে মানুষের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে এই সমস্য
ক্ষনস্থায়ী। জীববৈচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ আধার মাছের অভয়াশ্রম বিশ্ব ঐতিহ্য
টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা গেলেও অন্য হাওরের তুলনায় তা
অনেক কম। তবে হাওরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব¡ দেওয়া খুবেই প্রয়োজন।
উল্লেখ্য,সুনামগঞ্জের ৪৬টি হাওরে অসময়ে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাওয়া
হাওরগুলো। এর মধ্যে জেলার কয়েকটি হাওরে মাছ মরে ভেসে ওঠে। হাওরে ধান
পচে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাসে মাছে মড়ক লাগায় গত বৃহস্পতিবার থেকে
সুনামগঞ্জের হাওরে আগামী এক সপ্তাহের জন্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে
জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে।