রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দীর্ঘ ১৩ বছর পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে চাকুরী ফেরত পেলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক আশুলিয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিত্যক্ত চুল পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাগ্য বোনার চেষ্টা আদিতমারীর নারীদের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর হলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত সৌরভের অর্থের অভাবের চিকিৎসা হচ্ছে না। আশুলিয়া সাংবাদিক সমন্বয় ক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি’র সভাপতি হেলাল শেখকে প্রাণঢালা অভিনন্দন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের প্রাণহানি ধামরাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের স্মরণে শোক সভা ও দোয়া 

আজ মে দিবস “শ্রমিকদের কান্না থামছে না, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী”

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় সোমবার, ১ মে, ২০১৭
  • ১৭৬ বার পড়া হয়েছে

 

বিশেষ প্রতিবেদক-হেলাল শেখঃ

“মে দিবস আসলেই মনে হয় শ্রমিকদের কথা”। “সারা দেশে শ্রমিকদের কান্না থামছে

না” নারী শ্রমিকদের অভিযোগ-তাদের বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়,

প্রতিবাদ করলেই চাকরি যায়। মাসের পর মাস কাজ করেও হাজার হাজার শ্রমিক বেতন পাচ্ছেন

না। এক কথায় শ্রমিকদের সমস্যার শেষ নেই। ঢাকার নিকটবর্তী সাভার রানা প্লাজা’র

দুর্ঘটনাসহ গত এক দশকে দেশে নিহত হয়েছেন প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক।

আমরা অনেকেই বলে থাকি যে, মানবতার কল্যাণে কাজ করি, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করি।

আসলে কি তাই? আমাদের মানবতা এখনো মরেনি, হে কিছু মানুষের অন্তরে আজও মানবতা

বেঁচে আছে। এবার আসি কল কারখানার মালিকদের বিষয়েঃ একজন বিনিয়োগকারী পুঁজি

বিনিয়োগের মাধ্যমে গড়ে তোলেন শিল্প প্রতিষ্ঠান। শ্রমিকের শ্রম আর ঘামে তিনি বিশাল

বিত্ত আর ভৈভবের মালিক হন। মুনাফার নেশা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। যে শ্রমিকের

মাধ্যমে তার এই বিত্তবৈভব, তার জন্য কোনো দায়িত্ব বোধ থাকেনা।

বিশেষ করে বিভিন্ন কল কারখানায় অধিকাংশ সময় শ্রমিকদের অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে

দেখা যায়। এই অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে ঘটে যায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা।

“এভাবেই প্রতিবছর বাড়ছে র্দুটনার হার”। বাড়ছে আহত ও নিহত শ্রমিকের সংখ্যা।

বিভিন্ন সংস্থা ও পত্রিকার তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে গত এক দশকে নিহতের সংখ্যা

বেড়েছে তিন গুণ-যার সংখ্যায় প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি হবে। নেপথ্য কারণ হিসেবে গবেষকরা

বলছেন, অবহেলাজনিত দুর্ঘটনার কোনো কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা না হওয়া, শ্রমিকের নামমাত্র

কিছু টাকা দেওয়া, অতীতে ঘটে যাওয়া বড় দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়া

ও শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও আইন অনুযায়ী কারখানা তৈরি না হওয়া।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ সালে ২৭

জানুয়ারি রাজধানীর মেহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন আবছার খান মার্কের্টের দোতলায়

স্মার্ট এক্সপোর্ট পোশাককলে অগ্নি দুর্ঘটনায় ৮ জন শ্রমিক নিহত হন, যা ছিলো ওই

বছরের বড় দুর্ঘটনা।

এর পর বাকরুদ্ধ জাতি, ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল “রানা প্লাজা ট্রাজেডি” বিশ্বব্যাপী বহুল

আলোচিত হয় এ দুর্ঘটনাটি। এ দুর্ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন।

এ দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে। আহতদের

মধ্যে কারো হাত নেই, কারো পা নেই, যাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তারা অনেকেই আজও

ভয়ে আতঙ্ক হয়ে আছেন, তাদের কান্না আজও থামেনি। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে আছেন,

তারা অবহেলায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। বলুনতো বিবেকবান মানুষ কিভাবে

শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটাবেন? এখনও অনেক শিল্প কারখানায় মাসের পর মাস বেতন বকেয়া

রেখে বন্ধ ঘোষণা করছে মালিক। বিভিন্ন ভাবে শ্রমিকদের নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ

রয়েছে।

বিশেষ করে বিলসের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ছিলো ৩০১ জন।

২০১২ সালের চিত্র ছিল, বলতে গেলে ভয়াবহই।ওই বছর নিহত হন ৯০৬ জন শ্রমিক। এ সময় আহত

হয়েছেন ১ হাজার ১০৮ জন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৪৮, ধর্ষিত হয়েছেন ১৩ জন নারী।

অপহরণ ৩৮২ জন, আত্মহত্যা করেছেন ২৪ জন শ্রমিক। ২০১১ সালে মৃতের সংখ্যা ছিলো ৮৮৯

জন। এ বছরে দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করেন প্রায় এক হাজার ২৩৫ জন শ্রমিক। ২০১০ সালে

৭০৯ জন। ২০০৯ সালে ৩৭৮ জন, ২০০৮ সালে ৫৪৭ জন, ২০০৭ সালে ৪৬৫ জন, ২০০৬ সালে ৯৭৪

জন, ২০০৫ সালে ৪৮০ জন, ২০০৪ সালে ১৮৮ জন, ২০০৩ সালে ২৫১ জন, এবং ২০০২ সালে ১৬৮

জন শ্রমিক জীবিকাস্থলে মারা যান। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী

প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ২০ লাখ শ্রমিক জীবিকাস্থলে দুর্ঘটনায় মারা যান। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব

বরণ ও কর্মহীন হয়ে পড়েন প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক। পেশাগত রোগে আক্রান্ত হন ১৫ কোটিরও

বেশি শ্রমিক।

বিশেষ করে বিলসের মতে, সরকারি হিসাবে বরাবরই নিহতের সংখ্যা কম দেখানো হয়। আর

যেহেতু টাকা পয়সা দেয়ার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে মালিকদের দিক থেকেও দুর্ঘটনার

বিষয়গুলো ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা থাকে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই

হিসাব করা হলেও এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ সব ধরণের দুর্ঘটনার সংবাদ অনেক সময়

গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। বর্তমানে ২০১৭ সাল, এর আগে ও পরে অনেক দুর্ঘটনা

ঘটেছে যা গণমাধ্যমে অনেক সংবাদ আসেনি। ১ মে দিবসে কিভাবে শ্রমিকদের মুখে

হাসি ফুটাবে? সাভার আশুলিয়ার কয়েক হাজার শ্রমিক বকেয়া বেতন না পেয়ে রাস্তায় নেমে

এসেছেন। বাসা ভাড়া, দোকান বাঁকির টাকা না দিতে পেরে দিশেহারা হয়ে মানবেতর

জীবনযাপন করছেন তারা। এ যেন দেখার কেউ নেই।

জানা গেছে, আশুলিয়ার জামগড়া বেরুণ ছয়তালা এলাকায় (সেড ফ্যাশন লিঃ) নামক একটি

শিল্প কারখানার প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক দুই মাসের বকেয়া বেতন না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে

জীবনযাপন করছেন। দোকানের খরচ এর বাঁঁকি টাকা ও বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না

শ্রমিকরা, রাস্তায় রাস্তায় কাঁদছেন অনেক শ্রমিক। জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল থেকে ১৮

এপ্রিল পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়, এরপর ১৮ এপ্রিল শ্রমিকরা কাজে যোগ

দিতে গেলে কারখানার মূল গেটে আবারও ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ ঘোষণার

নোটিশ দেওয়া হয়। এর পর সময় দেয়া হয় ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। আবার ২৭ এপ্রিল শ্রমিকরা

কাজে যোগ দিতে যায়, আবারও একটি নোটিশ দেখতে পায় ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ওই কারখানা

বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে গেলে আবার নতুন একটি

নোটিশ দেখেন তারা। আবার ৭ মে ২০১৭ ইং পর্যন্ত কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

একের পর এক তারিখ পরিবর্তন করে মালিক ওই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করছেন। তখন কারখানার

সামনে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।

পরে তারা রূপায়ন মাঠসসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আলোচনা করেন উল্লেখ্য তারিখে।

এ বিষয়ে (সেড ফ্যশন লিঃ) কারখানাটির অপারেটর জান্নাতী ও রাজন জানান, গত কয়েক মাস

ধরেই এই কারখানায় তাদেরকে অনিয়মিত ভাবে বেতন-ভাতা পরিশোধ করে আসছেন মালিক।

সব শেষে গত দুই মাস যাবৎ মালিক তাদের বেতন বকেয়া রেখেছেন। এ রকম ঘটনা ওই কারখানা

চালু হওয়ার পর থেকে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি বলে শ্রমিকরা জানান।ওই কারখানার শ্রমিক

সিরাজুল, সাইফুল, বকুল, শহিদুল ও হাবিব জানান, মালিক বার বার বেতন পরিশোধের আশ্বাস

দিয়ে শ্রমিকদেরকে ঘুরানোর পরেও বেতন না দিয়েই কারখানাটি কৌশলে একাধিকবার

নোটিশের মাধ্যমে ছুটি ঘোষণা করে বন্ধ রেখেছেন। শ্রমিকরা বলছে, মে দিবস আসছে

তবুও তারা শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন দেননি বলে অভিযোগ অনেকের। শ্রমিকদের দাবি

আদায়ের মাস হলেও তারা পুলিশের ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না বলে

শ্রমিকরা জানান। অন্যদিকে বেতন না দিয়ে মালিক ওই কারখানাটি বিক্রি করে দেয়ার পায়তারা

করছেন বলে শ্রমিকরা ধারণা করছে। উক্ত কারখানায় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ

করতেন।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক এএসপি কায়সার শেখ বলেন, সেড ফ্যাশন লিঃ নামক

কারখানার শ্রমিকদের বেতন বকেয়ার বিষয়ে মালিকের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে, খুব

শীর্ঘই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে। আর যদি শ্রমিকদের বেতন না

দেয়া হয়, তাহলে ওই কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এই তিনি

জানান। ৩০ এপ্রিল ওই কারখানার মালিকের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে কারখানার কোনো

লোকজন পাওয়া যায়নি, শুধু পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মীদের দেখা গেছে। “ মে দিবস”

আজ প্রশ্নঃ মে দিবস যে সকল মেহনতী শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজনে

বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন, কেউ কি আসলে খেটে খাওয়া মানুষ বা শ্রমিকদের চিন্তা করেন?

আজও অনেক শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অনেক শ্রমিকের বেতন ভাতা না দিয়ে কল

কারখানার মালিকরা কোটি কোটি টাকার বাড়ি গাড়ি করে ঠান্ডা হাওয়া লাগিয়ে

বিলাসিতা করছেন। বিবেকবান মানুষের কাছে প্রশ্নঃ হাজার হাজার শ্রমিকরা কাজ করেও

কেন না খেয়ে থাকবে? এই শ্রমিকদের আর কত অবহেলা, নির্যাতন করবে ওরা? এ সব কি

কারো চোখে পড়ে না? এ যেন দেখার কেউ নেই?।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451