বাংলার প্রতিদিন ডটকম, অনলাইন ডেস্কঃ
চলতি সপ্তাহজুড়ে এ বিষয়টিই রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল। বিএনপি একটি রূপকল্প নিয়ে আসছে। অবশেষে আজ বুধবার ‘রূপকল্প ২০৩০’ ঘোষণা দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
সরকারে গেলে কী করবেন তাঁর একটা রূপরেখা দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ৩৭টি বিষয় নিয়ে আলোচনার পর তিনি বলেছেন, ‘আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম তা অর্জন কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।’
রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘রূপকল্প ২০৩০’ ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া। এ সময় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। একই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমের বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা।
বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে ‘রূপকল্প ২০৩০’ সম্পর্কে বলতে শুরু করেন খালেদা জিয়া। প্রায় দুই ঘণ্টা তিনি এ সম্পর্কে উপস্থিত সবাইকে ধারণা দেন।
‘রূপকল্প ২০৩০’-এ খালেদা জিয়া গণতন্ত্র, জাতি গঠন, সুশাসন, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, পরিষেবা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, সন্ত্রাসবাদ, অর্থনীতি, গবেষণা ও উন্নয়ন, জনমিতিক লভ্যাংশ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিদেশে কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ, মিডিয়া ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, কৃষি ও কৃষক, শ্রমিককল্যাণ, নগরায়ণ ও আবাসন, নিরাপদ খাদ্য ও ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা, যুব, নারী ও শিশু, জলবায়ু পরিবর্তন, পানিসম্পদ, ‘নীল’ অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিল্প, যোগাযোগ, পর্যটন, সম্পদ সংরক্ষণ, সামাজিক ব্যাধির সমস্যা, ভূমিকম্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অনগ্রসর অঞ্চল ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এই ৩৭টি বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী নই’
মহান মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি দিয়েই বক্তৃতা শুরু করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, আজ সে রাষ্ট্রের মালিকানা তাদের হাতে নেই। তাই দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নই। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না বিএনপি। নিত্যদিনের জন-আকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে তাদেরকে সম্পৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করব আমরা।’
জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথাও জানান খালেদা জিয়া। এ ছাড়া গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের কথা জানিয়েছেন তিনি। সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি এসব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধানাবলি পর্যালোচনা ও পুনঃপরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার করবে।’
অনলাইন পদ্ধতি ব্যবহার করে থানায় অভিযোগ
থানায় পুলিশের কাছে অভিযোগের ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি বা মোবাইল পদ্ধতি ব্যবহার চালু করতে চান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নেয় না। এটা ডিনায়েল অব জাস্টিস। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য দেশব্যাপী থানাগুলোতে অনলাইন পদ্ধতি ও মোবাইল টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ সৃষ্টি করে ফৌজদারি বিচারপ্রার্থীদের আইনের নিরাপত্তা পাওয়ার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
এ ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করবেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ন্যায়পাল পদ সৃষ্টির কথাও জানান তিনি।
আদালতে মামলার ‘বোঝা কমানোর’ ব্যাপারে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বর্তমান বিদ্যমান ইউনিয়ন কাউন্সিল ব্যবস্থায় গ্রাম আদালতের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী অনানুষ্ঠানিক সালিসি আদালত পুনঃপ্রবর্তন করা যায় কি না পরীক্ষা করে দেখা হবে।’
পুলিশ বাহিনীকে একটি ‘স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে’ বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি চৌকস, দক্ষ, নিরপেক্ষ, জনকল্যাণমুখী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।’
এ ছাড়া দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা জানান খালেদা জিয়া।
সীমান্তের বাইরে বন্ধু আছে, প্রভু নেই
পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে খালেদা জিয়া জানান, বিএনপি বিশ্বাস করে সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু আছে, কোনো প্রভু নেই। তিনি বলেন, ‘বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোনো রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপি দৃঢ় অঙ্গীকার করছে যে অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।’
বিএনপি মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে তিনি জানান।
বেসরকারি পর্যায়ে পেনশন ফান্ড
বেসরকারি পর্যায়ে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘পেনশন ফান্ড’ গঠন করতে চান খালেদা জিয়া। প্রবীণদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতে নিয়োজিত প্রত্যেকের আয়ের নির্দিষ্ট অংশ এই ফান্ডে জমার ভিত্তিতে পেনশন ফান্ডটি গড়ে তোলা হবে এবং এর জন্য ন্যায্য হারে মুনাফা প্রদান করা হবে।
অতিস্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানান খালেদা জিয়া।
মুক্তিযোদ্ধারা হবেন ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’
খালেদা জিয়া বলেছেন, “বিএনপি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ হিসেবে ঘোষণা করবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। বিএনপি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিরক্ষায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, আইনের শাসনের অভাব ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এ দেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিস্তারের অন্যতম কারণ।’ এ ব্যাপারে বিএনপি কঠোর ব্যবস্থা নিবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো রকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে বরদাশত করবে না এবং সন্ত্রাসবাদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না।’
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি কর্মকৌশলের ধারণাও দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতির মূল্যবোধ শক্তিশালী করা এবং আন্তধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করা হবে।’
‘শিক্ষানীতি হবে জীবনমুখী, ডিগ্রিমুখী নয়’
আগামী এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করতে চান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা খাতে জিডিপির পাঁচ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান শিক্ষা ও ভাষা শিক্ষায় জোর দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া গবেষণা ও প্রশিক্ষণ খাতেও গুরুত্ব দেওয়ার কথা তিনি জানান।
শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক ও সমপর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের এবং ছেলেদের জন্য স্নাতক ও সমপর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে।’
‘জীবনমুখী শিক্ষানীতি’ দিতে চান খালেদা জিয়া। তিনি দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করার দিকে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কার্যকর প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে দেশের শ্রমশক্তিকে দ্রুত প্রশিক্ষিত করে তুলে স্বদেশেই তাদের কর্মসংস্থান করবে এবং বৈদেশিক মুদ্রাহরণ বন্ধ করে অর্থনীতিকে আরো সবল করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ সচল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষাকে ‘আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী’ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসায় ইংরেজি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষা নিশ্চিত করতে চান তিনি।
‘ভিওআইপি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে’
ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) উন্মুক্ত করে দিতে চান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘এতে করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। রপ্তানিমুখী শিল্প খাত, দেশীয় বাজারমুখী শিল্প খাত, ই কমার্স, কম্পিউটিং আউটসোর্সিং উন্নয়নসহ বিভিন্ন আইসিটি কর্মকাণ্ডে বৃহৎ উল্লম্ফন ঘটবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দক্ষতা বাড়বে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। ভিওআইপি খাতে চলমান দুর্নীতি ও লুণ্ঠন হ্রাস পাবে।’
বিভিন্ন এলাকায় আইটি পার্ক স্থাপনের পাশাপাশি মফস্বলে ফোরজি চালু করতে চান খালেদা জিয়া। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘স্মার্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করার কথাও জানান তিনি।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয় এমন বাধা অপসারণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি) অগণতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক ধারাসমূহ সংশোধন করা হবে।’
প্রতি জেলায় ক্রীড়া একাডেমি
খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক মান অর্জনের জন্য প্রতি জেলায় একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্রীড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি আরো বলেন, ‘মাল্টি গেমস ইভেন্ট, যেমন সাউথ এশিয়ান গেমস, এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, অলিম্পিক গেমস ইত্যাদিতে বাংলাদেশের সম্মানজনক স্থান অর্জনের জন্য দেশে একটি আধুনিক জাতীয় অলিম্পিক একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
গণমাধ্যমের জন্য ‘গ্রহণযোগ্য নীতিমালা’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য মুক্তচিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি নীতিমালা থাকা দরকার। বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, আইটি বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিক সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করবে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করবেন বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গ : স্থানীয় সরকার ও বরখাস্ত
সম্প্রতি দেশের একাধিক সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়রকে বরখাস্ত করার ঘটনা ঘটেছে। প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই তা করা হচ্ছে বলে জানা যায়। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বিচারে বরখাস্ত/অপসারণ করা হচ্ছে, যা অনৈতিক ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী। আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নির্বাহী আদেশবলে বরখাস্ত/অপসারণ করা হবে না।’
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জিএমও
জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম বা জিএমও) উৎপাদিত ফসল সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘জিএমও ফসল সম্পর্কে নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরিবেশবান্ধব ও জাতীয় কল্যাণমুখী নীতি গ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় বাজেটের একটি যৌক্তিক অংশ কৃষি গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘উন্নত মানের বীজের দুষ্প্রাপ্যতা বাংলাদেশের কৃষকের একটি কঠিন সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানকল্পে প্রত্যেক উপজেলায় বীজ-বর্ধন ও প্রক্রিয়াকরণ খামার গড়ে তোলা হবে। এ থেকে কৃষি উৎপাদন ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।’
‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’
সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চান খালেদা জিয়া। আর এ জন্য স্বাস্থ্যবিমা প্রবর্তন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার নিমিত্তে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হবে।’
জিডিপির পাঁচ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে চান খালেদা জিয়া। রোগ প্রতিরোধেই গুরুত্ব দিতে চান তিনি।
এ ছাড়া বিশিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য জাতীয় অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার কথা জানান খালেদা জিয়া।
বেকার ভাতা
শিক্ষিত বেকারদের ভাতার ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, এক বছরব্যাপী বা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শিশুদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার নিশ্চিত করার কথাও জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনঃপরীক্ষা
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি পুনঃপরীক্ষা করতে চায় বিএনপি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘জ্বালানি উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এই আলোকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি পুনঃপরীক্ষা করা হবে।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘বিএনপি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করবে।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে পারস্য উপসাগরীয় দেশসমূহ, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশসমূহ এবং পাকিস্তান ও ভারতের আন্তদেশীয় গ্যাস পাইপলাইনে সংযুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’
নদীতে আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল
দেশে একাধিক টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী, বুড়িগঙ্গা, গোমতী, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে আন্ডারগ্রাউন্ড-টানেল নির্মাণ করা হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নকল্পে দ্বিতীয় যমুনা সেতু, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, গোমতী ও কর্ণফুলী নদীর ওপর আরো সেতু নির্মাণ করা হবে।
এ ছাড়া খালেদা জিয়া বলেন, ‘ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও ঢাকা-বরিশাল রেললাইন নির্মাণ এবং ঢাকা ও ব্ভিাগীয় শহরগুলোর মধ্যে দ্রুতগামী ট্রেন চালুর মাধ্যমে সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ মহানগরীগুলোর যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস ও দ্রুত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।