হেলাল শেখ সাভার, ঢাকা ঃ
ঢাকার আশুলিয়ার শিল্প এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা লাজুক হয়ে পড়েছে, বিপদজনক রাস্তায় বাড়ছে জনদূর্ভোগ।
শিল্প কারখানার ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্জ্য পানিতে মহাসড়কের রাস্তার বেহাল দশা, এতে বাড়ছে
জনদূর্ভোগ।
সোমবার ১৫ মে ২০১৭ ইং সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার নিকটবর্তী শিল্প এলাকা আশুলিয়ার বাইপাইল
ট্রাফিক মোড় থেকে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পর্যন্ত কয়েক শত শত শিল্প কারখানা, বেশিরভাগ কারখানার ড্রেনেজ
ব্যবস্থা নেই। কিছু কিছু কারখানার বর্জ্য ও ময়লা পানি এবং পলিথিন রাস্তায় ফেলার কারণে ড্রেনে তা আটকে
পড়ছে। ড্রেনের পানি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণে কারখানার সামনের রাস্তায় বর্জ্য পানি ঢেলে
দেয়া হয়। বর্ষা আসতে না আসতেই দেখা যাচ্ছে রাস্তার উপরে পানি যেন চোখে পড়ার মতো। অনেকেই বলছেন,
সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ড্রেন ও রাস্তার বেহাল অবস্থা এবং জনদূর্ভোগ দেখেও দেখছেন না। আরাফ
নামের এক ব্যক্তি বলেন, লোক দেখানো কাজ করছে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। তিনি আরও বলেন, সারা বছরই
ড্রেন ও রাস্তার অবস্থা এমনই বেহাল অবস্থায় দেখছি ভাই। রাতে রাস্তায় বিদ্যুৎ থাকলে অন্ধকার আর না থাকলেও
অন্ধকার দেখা যায়, আর অন্ধকারে এসব বিপদজনক রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। গতকাল শিখা নামের এক
পোশাক কর্মী রাত ১০টার দিকে তার কর্মস্থল থেকে বাসায় যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে ড্রেনে পড়ে আহত
হয়েছেন বলে তিনি জানান। এর দুই দিন আগে সাইফুল ও মজিদ ছয়তালা এলাকায় একটি ভাঙা রাস্তায় পড়েছেন বলে তারা জানান।
বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রায় ৬৪ জেলার হাজার হাজার বেকার মানুষ কর্মমুখী হয়ে চাকুরি নিতে ঢাকার শিল্প
এলাকা আশুলিয়ায় আসেন। নি¤œ আয়ের মানুষ শিল্প শ্রমিক বেশিরভাগ মানুষের গ্রাম থেকে অভাবের কারণেই
তারা ঢাকায় আসেন কাজের সন্ধানে। এসব নি¤œ আয়ের মানুষগুলোর থাকা খাওয়ার সমস্যার শেষ নেই। কারণ
তারা যে এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন, সেখানে গ্যসের সমস্যা, রাত ১২টার পর গ্যাস আসে আবার রাত ৩ টার
দিকে চলে যায়-আবার যা তাই। রান্না না করতে পেরে অনেকেই দোকানের রুটি খেয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার নজিরও
রয়েছে।রাস্তায় এসে দেখেন, গাড়ি নেই, যানবাহনের সমস্যা। ড্রেন ও রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে হেঁটে
সময়মত অফিসেও যেতে পারেন না, এর কারণে হাজিরা বোনাজ থেকেও বঞ্চিত হয় অনেকেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে শুরু করে ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া চৌ-
রাস্তার দু’পাশের ড্রেনের মুখ বন্ধ, সামান্য বৃষ্টির হলে দেখে মনে বর্ষাকাল। সেই সাথে কিছু শিল্প কারখানার
বর্জ্য ময়লা পানি রাস্তায় ঢেলে দেওয়ার কারণে পাল্টে যায় পানির রং। এ ব্যাপারে স্থানীয় জামগড়া ওষুধ ব্যবসায়ী
আলমগীর হোসেন বলেন, দোকানদারদের ব্যবসায় সমস্যা বাড়ছে, কারণ দোকানের সামনেই ময়লা পানি থাকে
সারাবেলা। জামগড়া একটি খাবার হোটেল ব্যবসায়ী ফারক হোসেন বলেন, বর্ষাকাল না আসতেই তার হোটেলের
ভিতরে অনেক পানি প্রবেশ করে, যা দেখে মনে হয় বন্যা হয়েছে।ড্রেনেজ ব্যবস্থা লাজুক হওয়ায় বিভিন্ন
কারখানার পানি ড্রেনের উপর দিয়ে বেঁয়ে রাস্তায় নেমে আসার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে অনেকেই জানান।
এ বিষয়ে এলাকার রাজনৈতিক লিডারসহ অনেকেই বলছেন, তারা নিজ দায়িত্বে খরচ বহন করে ড্রেন ও রাস্তার
মেরামত করতে আগ্রহী হলেও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাগণ বলেছেন, সরকারি কাজে সরকারি ভাবেই ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে।
উক্ত বিষয়ে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু শিল্প কারখানার বর্জ্য পানি ও পলিসহ ময়লা
রাস্তায় ফেলার কারণে ড্রেনে তা আটকা পড়ে। আর কিছু ড্রেনের উপরে ডাকনা না থাকায় বিপদজনক হয়ে
পড়েছে রাস্তায় চলাচল। ড্রেন ও রাস্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর
কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, যে সকল মালিক অপরিকল্পিত ভাবে বিল্ডিং তৈরি করেছেন
এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়াই কারখানা চালানো হচ্ছে, সেই সাথে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে যারা কারখানা
পরিচালনা করছেন,সেই সকল কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।