আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: শহরের সত্যপীর ব্রিজ এলাকা থেকে সকাল ৯টায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ডা: রেজার কাছে আসেন শরিফা বেগম (২৭)। দুপুর ১.২০ মিনিট পর্যন্ত তিনি গাইনী বিভাগে অবস্থান করেও ডাক্তারের দেখা পাননি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যান শরিফা।
এতো গেল শুধু একজন শরিফার কাহিনী। হাসপাতালে গিয়ে জানা গেল এমন দুই শতাধিক শরিফা দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এসে ডাক্তারের দেখা না পেয়ে ফিরে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগী ও স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর, চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ মে) ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে কতর্ব্যরত চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জেলা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। তবে সকল সরকারি হাসপাতালে রোগী দেখা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ্য করেছেন (বিএমএ)।
কিন্তু ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া গেছে উল্টো চিত্র, হাসপাতালের বাইরে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী ডাক্তারের চেম্বারের সামনে অপেক্ষা করছেন। কেউ এসেছেন সকাল ৯টায়, কেউবা ১১টায়। তবে দুপুর ১.৫৫ মিনিট পর্যন্ত কোনো ডাক্তার হাসপাতালে রোগী দেখেননি।
তবে অনেক ইন্টার্নি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ডাক্তাদের চেম্বারে গল্পে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কর্মসূচিতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের ঘোষণার কথা থাকলেও সরকারি হাসপাতালে ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করেছে বলে অনেকেই অভিযোগ ও সত্যতা পাওয়া গেছে।
বালিয়াডাঙ্গী দৌগাছি থেকে হালিমা নামে এক গর্ভবতী মা বলেন, অনেক দূর থেকে ডাক্তার দেখোতে এসেছি। কিন্তু দুপুর ১পর্যন্ত ডাক্তার আসেনি। প্রচণ্ড গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
শহরের জগন্নাথপুর এলাকায় শাহানা আক্তার জানান, আজ হাসপাতালে এতো রোগীর চাপ, কিন্তু ডাক্তারের চেম্বার সব বন্ধ। কিছুক্ষণ পর নাকি ডাক্তার আসবে তাই ৪ ঘণ্টা ধরে অপক্ষো করছি।
হরিপুর থেকে আসা সফিকুল ইসলাম জানান, আমার শ্বাশুড়িকে নিয়ে খুব সকালে ডাক্তার সুবেন্দুকে দেখার জন্য এসেছি। কিন্তু চেম্বারে তালা মারা। অনেকে বলছে ডাক্তার নাকি তার প্রাইভেট চেম্বারে বসে আছে। কিন্তু আমরা তো টাকার অভাবে সরকারি হাসপাতালে এসেছি।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মেডিকেল ইন্টার্নি শিক্ষার্থী জানান, রাজধানীতে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের ঘোষণা দিয়ে কালো ব্যাচ ধারণ করার কর্মসূচি দেয় (বিএমএ)। কিন্তু হাসপাতালে রোগী দেখা কার্যক্রমে কোনো বাধা নেই। কি কারণে ডাক্তাররা হাসপাতালেও রোগী দেখছে না সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।
ঠাকুরগাঁও হাজীপাড়া এলাকায় শামসুজ্জুহা জানান, সকালে হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখানে না পেরে প্রাইভেট চেম্বারে আমার সন্তানকে ডাক্তার দেখিয়েছি। হাপাতালে নাকি কর্মবিরতি চলছে। এতে করে অসহায় রোগীরা অনেক দুভোর্গে পড়েছেন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ডা. সুব্রত রায় জানান, রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর, চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মামলার প্রতিবাদে সারাদেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁও চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে জেলা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। তাই আমরা কালো ব্যাচ ধারণ করে কর্মসূচি পালন করছি। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত থাকবে বলে (বিএমএ) জানিয়েছেন।
ডাক্তাররা হাসপাতালে রোগী দেখা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আজ আউটডোরে অনেক রোগী। এছাড়া ইনডোরে ডাক্তাররা রোগী দেখছেন বলে তাই আউটডোরে রোগী দেখতে একটু সময় লাগছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে তীব্র ডাক্তার সংকট তাই সমস্যা একটু বেশি হচ্ছে। এতে রোগী ও ডাক্তারদের ভোগান্তিও বাড়ছে।