আব্দুল্লাহ আল মামুন, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ গৃহপালিত পশুর ন্যায় লোহার
শিকলে বাঁধা আবস্থায় জীবন যাপন করছে আজাদ আলী (৪০)। সে ১০ বছর
যাবত সে মানুষিক রোগে ভুগছে।
উপজেলার ৫ নং চন্ডিপুর ইউনিয়নের ম্যারেয়া বড় হরিপুর গ্রামের আবতাব
উদ্দিন প্রামানিকের ছেলে আজাদ আলীর। তার মায়ের নাম রওশন আরা। জানা
যায়, প্রায় ১০ বছর পুর্বে বিবাহের কয়েক মাস পর তাকে ছেড়ে বাবার
বাড়িতে চলে যায় তার স্ত্রী।
২৯ মে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে অসাস্থ্যকর নোংরা
পরিবেশে বাড়ির পিছনের জঙ্গলে বিবস্ত্র অবস্থায় দুচোখ বন্ধকরে শুয়ে থাকতে
দেখা যায় তাকে। তার পরিবারের দাবী সে মানুষিক রুগী এবং তাকে বেধে না
রাখলে মানুষের উপর চড়াও হয়, কামড় দিয়ে জখম করে। ফলে বিশাল প্রাচীর ঘেরা
বাড়ির মধ্যে কোন স্থানেই তার থাকার মত যায়গা হয়নি। বিছানা, মশারী
বিহীন ভিজা মাটিতে জঙ্গলের মধ্যে শিকলবন্দি অবস্থায় অর্থাৎ পর্যাপ্ত
মৌলিক চাহিদার অভাবে শিকলবন্দি আজাদ এখন মৃত্যু প্রায় অবস্থার
মধ্যদিয়ে দিন পার করছে। তার বর্তমান অবস্থা এমন করুন যে, নিজ চোখে না
দেখলে বিশ্বাসও করা যাবে না। এমন স্যাঁতস্যাঁতে অসাস্থ্যকর নোংরা
পরিবেশে গৃহপালিত কোন পশু ও বাঁচতে পারেনা। আজাদ সারাদিন শুয়ে
থাকে। কেউ তার কাছে গেলে ধরে তাকে কামড়ে দেয় সে। তবে অনেক বার
চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আজাদ আলীর বর ভাই আফতাব উদ্দীন জানান, সে দীর্ঘ ১০/১২ বছর থেকে
অসুস্থ্য। আমরা রংপুরের রফিকুল ডাক্তার এবং পাবনা মানষিক হাসপাতালে
চিকিৎসা করেছি। পাবনায় তাকে ২ বার রেখে আসি। সেখানে প্রতিবার
প্রায় ৩মাস করে সেখানে রাখা হয়। পরে পাবনা থেকে আমাদের বলেছে সে
ভালো হবে না। পরে পাবনা থেকে আনার পর বিভিন্ন কবিরাজকে দেখানো
হয়ছে। তারা বলে জ্বীনের দৃষ্টি আছে। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি ভালো হয়
নি। শিকল খুলে দিয়ে মানুষের উপর চড়াও হয়, কামড় দিয়ে জখম করে, মানুষকে
মারতে চায়। তাই শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে বাড়ির ভেতরে না রেখে
বাড়ির পিছনের জঙ্গলে স্যাঁতস্যাঁতে অসাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে রাখার
কারণ জানতে চাইলে কোন প্রকার সদউত্তর দিতে পারেনি আজদের বড় ভাই
আফতাব উদ্দীন।
আজাদ আলীর ছোট ভাবি জানান, সে ১০ বছর যাবত সে মানুষিক রোগে
ভুগছে। দ্বিতীয় বার পাবনায় রেখে আসার পর সেখানে বৈদ্যুতিক তার
ছিড়ে ফেলে এবং মারামারি করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়,
আপনাদের রোগী আপনারা নিয়ে যান, সে আর ভালো হবে না। তাকে আর
রাখেনি। শরীরে কাপর রাখতে চায়না। কাপড় দিলে তা ছিড়ে ফেলে। মাঝখানে
ভালো ছিলো।
তবে এলাকাবাসী বলছেন ভিন্ন কথা। আজাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে
দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ অবস্থা। তাকে সঠিক চিকিৎসা প্রদান ও তার প্রতি
যতœবান হলে এবং সঠিক চিকিৎসা করা হলে সে সুস্থ্য হয়ে উঠবে বলে
তারা মনে করছেন। তার পরিবারের লোকেরা ইচ্ছে করেই কোন প্রকার
চিকিৎসা করছে না বলেও অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। বিষয়টি সমন্ধে
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কারনা করেন তারা।
এ ঘটনা সমন্ধে পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসারস্ধসঢ়; ইনচার্জ
মোস্তাক আহম্মেদকে আবগত করা হলে তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।