ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ‘জিয়াখোর’ কবি জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাঙলার অন্য গ্রামগুলোর মতোই একটি গ্রাম। শুধু মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে এ গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘ডাইল পট্টি’ হিসেবে। পুষ্টিজাতীয় কোনো ডাল নয়। এটা মরণনেশা ফেনসিডিল।
মানবদেহের ক্ষতিকর এ মাদকদ্রব্য ফেনসিডিল ও ইয়াবা বিক্রি হয় এ গ্রামে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। মাত্র চার-পাঁচজন এ অবৈধ কারবারের সঙ্গে জড়িত। তবে এর মধ্যে দু’জন কারাগারে বন্দি রয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে এ গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামটি ঘিরে দুয়োরানী-সুয়োরানী নামে দুটি পুকুর রয়েছে। আর রয়েছে স্কুল-কলেজ, মসজিদ-ধর্মশালা। হিন্দু–-মুসলিমও রয়েছে এ গ্রামে। তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ, মাদকসন্ত্রাসী ও পুলিশের হয়রানির ভয়ে তারা ভালো নেই।
সম্মানহানি ও পুলিশের ভয়ে এ গ্রামে আত্মীয়স্বজনও আসে না। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না অনেক মেয়ের। ছেলেদেরও ভালো সম্বন্ধ আসছে না।
রফিজুল ইসলাম দুঃখ করে বলেন, গ্রামের এ অপবাদের কারণে বিয়ের উপযুক্ত তার মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না।
একই সুরে বলেন, হারুন উর রশিদ। তিনি জানান, তার বোনেরও একই কারণে বিয়ে দিতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মনসুর আলী বলেন, দু-একজন খারাপ মানুষের জন্য নিজ গ্রামের পরিচয় দিতে ঘৃণা ও লজ্জা হয় তার।
বীণা রানীর আক্ষেপ, গ্রামে এসে পুলিশ নিজেই ফেনসিডিল খায়। তা হলে কীভাবে এসব বন্ধ হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কুশলডাঙ্গী গ্রামের মো. সুমন ‘মানি’ পেলে পুলিশ তা হাতিয়ে নিয়ে চলে যায়। আর নিরপরাধীদের নানাভাবে হয়রানি করছে।
৫৫ বছর বয়সী কৃষক সলেমান আলী জানান, তিনি সাত দিন আগে বাজার থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন, ওই সময় তাকে পুলিশ অযথা হয়রানি করে। তিনি বলেন, তার পকেটে কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে টাকা নেয়ার ফন্দি আঁটছিল পুলিশ। ছেলের পরিচয় দিয়ে রক্ষা পান তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের দাবি দোষীদের শাস্তি হোক এবং গ্রামটি হোক কলঙ্কমুক্ত (মাদকমুক্ত)।
একই দাবি করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসৎ কর্মকাণ্ডের কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, তিনি গ্রামবাসীর অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন।