আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের বৈকন্ঠপুর গ্রামের ভাতগাঁও কান্দর পাড়ায় খালের উপর ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত একটি সেতু উদ্বোধনের আগেই ফাটলসহ নানান ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এতে এলাকার লোকজনের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কার্লভাট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবানের পর চলতি বছরের গত পাঁচ জানুয়ারি লটারীর মাধ্যমে প্রকল্পের কাজটি পায় রংপুরের স্টার কন্সট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। জুন মাসেই নবনির্মিত সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই সেতুটিতে দেখা দিয়েছে ফাটল, খসে পড়তে শুরু করেছে পলেস্তরা এবং সেতুটি নির্মাণে অনিয়ম এর নানান অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এলাকাবাসীদের মধ্যে খলিলুর ও ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলামসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, সেতুটি নির্মাণের নামে মোটা অংকের মুনাফা লাভের আশায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে এবং দরপত্রে বর্ণিত নির্দেশনার কোন ধার ধারেননি বলেই মনে হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের সময় ঢালাই ও অন্যান্য কাজে এলাকার লোকজন দরপত্রে বর্ণিত গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত রড না দিয়ে কমদামী, পুরাতন ও টুকরো টুকরো রড এবং নিম্ন মানের খোয়া-পাথর, বালু ব্যবহারসহ রাতের আধাঁরে সেতুর ঢালাই কাজ করতে দেখেছেন। এছাড়া সেতুর বাহিরের অংশে রং দিয়ে অনেক ফাটল ঢেকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে এখনই সেতুর খুটির একাংশে দেখা দিয়েছে ফাটল এবং অনেক অংশে খসে পড়তে শুরু করেছে।
এলাকার সইদুর রহমান জানান, সেতুর সাথে সড়কের সংযোগ স্থলে পাশের খাল থেকে কাদামাটি দিয়ে ভরাট করায় ইতোমধ্যে তা বসে যাওয়ায় সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে গেছে।
একই গ্রামের ওবায়দুর জানান দরপত্র অনুষায়ী সেতু নির্মাণের কাজ বুঝে না নিলে সেতুটি ব্যবহারে থাকবে ঝুঁকি এবং আগামী বর্ষাতেই সেতুটি পানির স্রোতে ভেসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে শতভাগ।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্টার কনস্ট্রাকশনের শাহজাহান আলীকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দরপত্র অনুয়ায়ি সেতুটি নির্মাণ হয়েছে তবে নির্মাণকালে বৃষ্টি হওয়ায় সামান্য ত্রুটি হয়েছিল। এছাড়া সেতুটি ব্যবহার উপযোগী হওয়ার আগেই এলাকার লোকজন সেতুর উপর দিয়ে পাওয়ার ট্রলি নিয়ে চলাচল করেছিল। এজন্য সেতুর একাংশে সামান্য ফাটল দেখা দিলেও তা সেতুর জন্য ক্ষতির কারণ হবে না। ফলে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর সেতুটি উদ্বোধনের জন্য বুঝে নিয়েছেন। আশাকরি খুব শিগ্রই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে সকলের ব্যবহারের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হবে।
তবে এব্যাপারে কথা বলার জন্য সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের বারবার চেষ্টা করেও এবং অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন নবনির্মিত সেতুটি পরিদর্শন শেষে ফাটলসহ কিছু ত্রুটির কথা স্বীকার করে জানান, অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর মাধ্যমে দরপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সেতুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেতু হস্তান্তর হবে। এর আগে কোন বিল পাশ হবে না।