অনলাইন ডেস্ক ,
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দেশের সংস্কৃতির সাথে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা গ্রহণ এবং যা মন্দ ও দেশের সংস্কৃতির পরিপন্থী তা বর্জন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত শিল্পকলা পদক-২০১৬ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এই আহবান জানান। তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) যুগে আকাশ সংস্কৃতি এখন বাস্তবতা… কিন্তু জনগণ ও সংস্কৃতি কর্মীদের ভালো জিনিস গ্রহণ এবং যা মন্দ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর, তা বর্জন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ করে সংস্কৃতি কর্মীদের আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশের সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও লোকগাঁথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সৃজনশীল বাংলাদেশ নির্মাণ ও দেশের লোকসাহিত্য ও ঐতিহ্য বিকাশে শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। ‘সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ… শিল্প ও সংস্কৃতি হচ্ছে একটি দেশ ও জাতির প্রতিবিম্ব’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিল্প ও সংস্কৃতি যুব সমাজের মধ্যে শৃংখলা, জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেমের চেতনা বিকাশসহ সাংস্কৃতির ঐতিহ্যের চেতনা জাগিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, একজন সফল সংস্কৃতিকর্মী ভ্রাম্যমাণ কূটনীতিকের মতো এবং তিনি তার দীপ্ত উপস্থিতি, প্রতিভা ও কর্ম দিয়ে দেশ ও জাতিকে বিশ্বসভায় আপন মহিমায় তুলে ধরতে পারেন।
বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলছে, কিন্তু কোন ধর্মই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সমর্থন করে না। ’
তিনি সবাইকে শিশু, কিশোর ও যুবকদের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান, যাতে তারা ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প থেকে দূরে থাকতে পারে।
রাষ্ট্রপতি সাতটি বিষয়ে সাতজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মাঝে শিল্পকলা পদক-২০১৬ বিতরণ করেন। তারা হলেনÑ পবিত্র মোহন দে (যন্ত্রসঙ্গীত), মো. গোলাম মোস্তফা খান (নৃত্যকলা), গোলাম মুস্তাফা (ফটোগ্রাফি), কালিদাস কর্মকার (চারুকলা), সিরাজ উদ্দিন খান পাঠান (লোক সংস্কৃতি), সৈয়দ জামিল আহমেদ (নাট্যকলা) ও মিতা হক (কণ্ঠ সঙ্গীত)।
শিল্পকলা পদক বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা সেলিব্রেটি, তারকা ও আইডল… সাধারণ মানুষ, বিশেষত তরুণ সমাজ আপনাদের অনুকরণ করতে পছন্দ করে। তাই তাদের প্রতি আপনাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। ’ তিনি পদকপ্রাপ্তদের কর্মে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় মূল্যবোধসহ বিরাজমান সামাজিক সমস্যাবলী তুলে ধরার আহ্বান জানান।
আবদুল হামিদ পুরস্কার বিতরণের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।