অনলাইন ডেস্কঃ
পানামা নথি কেলেঙ্কারির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য ঘোষণার পর পদত্যাগ করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তাঁর এই ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে মাইক্রোসফটের একটি ফন্টের ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট।
পানামা নথি কেলেঙ্কারি মামলায় নওয়াজের সপক্ষে আদালতে দুটি নথি পেশ করেন নওয়াজের মেয়ে মরিয়াম নওয়াজ। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ক্যালিব্রি ফন্টে লেখা ছিল ওই নথি দুটি। নথিগুলোতে তারিখের স্থানে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস উল্লেখ করা হয়। এখানেই ভুল করে ফেলেন নওয়াজকন্যা।
মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে ক্যালিব্রি ফন্ট যোগ করা হয় ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি। তখনই তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন মামলার নথি দুটি আদতেই ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারির নয়, বরং জালিয়াতি করে পরে তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনে জানান, নওয়াজের পক্ষে পেশ করা ওই নথি দুটি ক্যালিব্রি ফন্টে লেখা। যদিও ক্যালিব্রি ফন্ট ১ জানুয়ারি ২০০৭ সালের আগে বাজারে ছাড়েনি মাইক্রোসফট। তাই বোঝাই যায় সেগুলো উল্লেখিত ঘটনার পরে জাল করা হয়েছে।
এদিকে পদত্যাগের আগে নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে সর্বোচ্চ আদালত পাকিস্তানের দুর্নীতি দমন সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরোকে (এনএবি) ছয় সপ্তাহের মধ্যে মামলার আসামি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর সন্তানদের বিরুদ্ধে একটি মামলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী ইশাক দার এবং আইনপ্রণেতা ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের জামাতা অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সফদার আওয়ানের বিরুদ্ধেও রেফারেন্স দায়েরের নির্দেশ দেন আদালত।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে পানামা নথি-সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে। সে বেঞ্চই শুক্রবার নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণার রায় দিলেন।
ওই বেঞ্চের পাঁচ সদস্য হলেন বিচারপতি আসিফ সাঈদ খোসা, বিচারপতি এজাজ আফজাল খান, বিচারপতি গুলজার আহমেদ, বিচারপতি শেখ আজমত সাঈদ ও বিচারপতি ইজাজুল আহসান। রায় পড়ে শোনান বিচারপতি এজাজ আফজাল খান।
এর আগে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই মেয়াদের নির্ধারিত পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারেননি। মুসলিম লীগ সরকারের প্রধান নওয়াজের ভাগ্যেও তা-ই জুটল।
সুপ্রিম কোর্টের এক নম্বর কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মামলার আবেদনকারী আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রধান শেখ রাশিদ ও জামায়াত-ই-ইসলামীর প্রধান শেখ সিরাজুল হক।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণাকালে সুপ্রিম কোর্ট ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় ইসলামাবাদ পুলিশ ও পাঞ্জাব রেঞ্জার্সের প্রায় তিন হাজার সদস্যকে।