নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টেকেরঘাটের ডিসি পার্কের শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেকে (চুনাপাথরের পতিত
গভীর কোয়ারি) গোসলে নেমে নিখোঁজের প্রায় ৪০ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ঢাকা থেকে আসা বসুন্ধরা
গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা পর্যটক ওয়াহিদ পলিনের গোসল করতে নামলে রবিবার সন্ধা ৬টা পর্য্যন্ত
স্থানীয় লোকজন ও সিলেট থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল লেকে তল্লাশী চালিয়ে গেলেও তার
তার সন্ধান মেলেনি।’ এখন নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দলই নিখোঁজ পলিনকে উদ্ধারে শেষ ভরসা হয়ে
দাড়িয়েছে। এদিকে পর্যটক ওয়াহিদ পলিন লেকের পানিতে নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রবিবার
সকাল থেকেই লেকের চারপাশ এমনকি ভারতীয় জিরো লাইনের মেঘালয় পাহাড়ের ওপর এপার- ওপারের কয়েক
হাজার লোকজন সমবেত হয়ে তার উদ্ধার কাজে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে দেখা গেছে।’ দেশ বিদেশে
পর্যটক বান্ধব এলাকা হিসাবে পরিচিতি এ সুনামগঞ্জ জেলা জুড়ে এ ঘটনায় নেমে এসেছে গভীর
শোকের ছাঁয়া।’
‘‘সরকার নৌ-বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের নিকট পুত্রহারা পিতার
শেষ আকুতি- জীবিত না হওক অন্তত একমাত্র ছেলের লাশটুকু উদ্ধার
করে বাড়ি নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে দেয়া হওক!’’
জানা গেছে, নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার লাজুড় গ্রামের মো. মোস্তফা
কামালের একমাত্র ছেলে ও রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন।’ এদিকে
নিখোঁজের পর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ-বিজিবি ও স্থানীয়
লোকজন লেকের পানিতে শনিবার দুপুরের পর থেকে দিনভর কয়েকটি নৌকা নিয়ে সন্ধান চালায়। এরপর
সিলেটে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনে ডুবুরি দল তলব করা হলে সেখান থেকে ৬ সদস্যস্যের একটি ডুবুরি দল
রাত সোয়া ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১১ টা পর্য্যন্ত লেকের পানিতে সন্ধান চালিয়েও পলিনের কোন সন্ধান
পাননি। আজ রবিবার ফের বেলা সোয়া ১১ টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্য্যন্ত লেকের চারপাশ ও লেকের গভীর
জলে নীচে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তল্লাশী চালিয়ে গেলেও পলিনের কোনো সন্ধান পাননি।’ এরপর
আনুষ্ঠানিক ভাবে ডুবুরি দলে সদস্য কবির হোসেন গণমাধ্যকর্মীদের জানান, রবিবার বেলা সাড়ে ৩টা
অবধি পর্য্যন্ত আমরা সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে গেছি কিন্তু নিখোঁজের কোন সন্ধান পাইনি ,আমাদের
ধারণা ওয়াহিদ পলিন লেকের গভীর পানির নীচে পলি যুক্ত কোন খাঁেদ পড়ে আটকে আছেন অথবা যে স্থানে
তিনি প্রথমে ডুবে গেছেন সেখান থেকে ¯্রােতের তোড়ে লেকের পানির নীচে হয়ত অনত্র তার শরীর সরে
গেছে, এখন আর ও উনাকে জীবিত ফিরে পাবার কোন সম্ভাবনাই দেখছি না।’ কবির হোসেন সর্বশেষ
তথ্য জানাতে গিয়ে বললেন এখন নৌ-বাহিনীর ডুবুরি দলকে এখানো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হলে কেবল
উনারাই নিখোঁজ পলিনের উদ্ধারে শেষ ভরসাস্থল হয়ে উঠতে পারেন।’
অপরদিকে একমাত্র ছেলে নিখোঁজের খবর পেয়ে শনিবার দুপুরেই মতিঝিলের ডিপিসি অফিস থেকে
পরিবারের লোকজনকে সাথে নিয়ে রওয়ানা দিয়ে রবিবার সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ঘটনাস্থল
টেকেরঘাটে পৌছেন পিতা মোস্তাফা কামাল। ’ ডুবুরি দল নিখোঁজের সন্ধান কাজ রবিবার বেলা
সাড়ে ৩টায় স্থগিত করে দেয়ার পর পুত্রের সন্ধানে বারবার লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করেন পুত্র
হারানোর শোঁকে কাঁতর এ পিতা। এ সময় কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশ –বিজিবির
সদস্যরা তাকে শান্তনা দিয়ে ধৈর্য্য ধারণের আহবান জানান।’
ঢাকার মিরপুর ১৪ নংএর বাসায় রবিবার সন্ধায় পলিনের পরিবারের সদস্যদের সাথে মুঠোফোনে এ
প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে শুধুই কান্না আর আহাজারির রোল শোনা গেছে।’ পলিনের ছোট বোন
নিশাত যুান্তরকে কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, মা এখনও জানেন না ভাইয়া আের কোন দিন হয়ত জীবিত
ফিরবেন না , মাকে এই বলে শান্তনা দেয়া হয়েছে ভাইয়া দূর্ঘটনায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন
বাবা গেছেন তাকে ফিরিয়ে আনতে। ’
নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিনের পিতা রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের ডিপিসির কর্মকর্তা (বিদ্যুৎ বিভাগ)
মো. মোস্তফা কামালের সাথে রবিবার সন্ধায় এ প্রতিবেদকের সাথে সরজমিনে আলাপকালে তিনি
অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, বাবা আমি সাতার জানি আমাকে লেকের পানিতে নামার সুযোগ
করেন দিন আমি চেষ্টা করি আমার ছেলেকে খুঁজে বের করার জন্য, বাবা আমার এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে
পলিন ছিল বড়। আমি বাসায় পলিনের মা সহ সবাইকে কথা দিয়ে এসেছি পলিনকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব
এখন আমি কী করে খালি হাতে বাসায় যাব, তার মাকে কী জবাব দেব, সরকার, নৌ-বাহিনী ও জেলা
প্রশাসনের নিকট আমার এখন একটাই দাবি জীবিত না হওক অন্তত আমার ছেলের লাশটুকু উদ্ধার করে
নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে দেয়া হওক।’!
এ ব্যাপারে তাহিরপুরের টেকেরঘাটের ঘটনাস্থল থাকা টাঙ্গুয়ার হাওরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো.
শাকিল আহমেদ সন্ধায় বললেন, নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিনের সন্ধানে শনিবার-রবিবার স্থানীয় লোকজন ও
সিলেট থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাদেও পক্ষ থেকে সব ধরণের চেষ্টা চালিয়েও সন্ধান
পেতে ব্যর্থ হয়েছেন এখন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে ঢাকা থেকে নৌ-বাহিনীর
ডুবুরি দলকে নিয়ে আসার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, আশা করি নৌ-বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করলে
নিখোঁজ ওয়াহিদ পলিনের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।’
উল্ল্যেখ যে, রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাহিদ, মারুফ হোসেন, ওয়াহিদ
পলিন, রুশনী ও বাঁধনসহ ৫ বন্ধুবান্ধব মিলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুগুয়ার হাওরে শুক্রবার ভ্রমণে এসে
ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের নৌঘাটে রাত্রীযাপন করেন। শরীরের টায়ার
জড়িয়ে শনিবার দুপর ২টার দিকে ওয়াহিদ পলিনসহ সবাই টেকেরঘাট সীমান্তের জিরো লাইন বরাবর
ডিসি পার্কের শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেকে গোসল করতে নামলে ৪ বন্ধু গোসল শেষে তীরে উঠে এলেও
ওয়াহিদ পলিন সাঁতার না জানায় লেকের পানিতে ডুবে যেতে থাকেন।’##
সংবাদে প্রতিনিধি হিসাবে আমার নাম
দেয়ার প্রয়োজন নেই।