বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ঃ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বাতিল করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘এই রায় বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি ম্যাগনাকার্টা বলেই আমাদের কাছে মনে হয়েছে। সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে নির্ভীকভাবে। হতাশাগ্রস্ত জাতি এই রায়ের মাধ্যমে আশার আলো দেখতে পেয়েছে।’
আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা সে জন্যই এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছি এবং আপিল বিভাগকে অভিনন্দন জানিয়েছি।’
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ করলাম যে, সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পূর্বেই সাবেক প্রধান বিচারপতি বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক রায়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেন। মনে হলো, এই রায়ের ফলে তাঁর গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। আইন কমিশনের আসনে বসে সুপ্রিম কোর্টের রায় সম্পর্কে মাননীয় প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে তিনি যেসব উক্তি করেছেন তা শুধু অশালীনই নয়, তা রীতিমতো আদালত অবমাননার শামিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হক তাঁর সময় যেসব রায় দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তা দেশের মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পঞ্চম, সপ্তম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের ফলে আজ দেশে যে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা দেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ভঙ্গুর করে ফেলেছে। বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্য আর আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে কোনো অমিল নেই। একই সুরে বাঁধা। বিচারপতি খায়রুলের বক্তব্যই আওয়ামী লীগের বক্তব্য। বিচারপতি হকের রায়ের পরেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অস্থীতিলীলতা এবং হতাশা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার হয়ে উঠেছে লাগামহীন। এ রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ফলস্বরূপ আওয়ামী লীগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের দর্শনের মূল উৎপাটন করে প্রায় একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক সরকার চাপিয়ে দিয়েছে। কোনো কার্যকরী পার্লামেন্ট নেই। সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই, তাই সকল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে একদলীয় দুঃশাসনে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হকের বক্তব্যকে আমরা ধিক্কার জানাই যে, তিনি কৃতকর্মের জন্য কোনো শোচনা তো করেননি বরং একটি অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ রায়কে আমরা মনে করি একটা ফিলসফিক্যাল স্টেটমেন্ট (দার্শনিক বিবৃতি)। একটা দর্শন আছে এর মধ্যে। ভবিষ্যতের জন্য একটা দিকনির্দেশনাও আছে এর মধ্যে। এ রায়ের কারণেই তাঁদের স্বরূপ উদঘাটিত হয়েছে, তাঁদের চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। সে জন্যই তাঁরা এভাবে কথা বলছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে রাষ্ট্রের সমস্ত স্তম্ভগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা একটি স্তম্ভ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সেটাকে তাঁরা করায়ত্ত করতে চায়। এরই মধ্যে এক থেকে দেড় বছর হয়ে গেল নিম্ন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণবিধি দেওয়া এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। উচ্চ আদালতের নিয়োগ সেটাও সুপ্রিম কোর্টের কাছে আসেনি। এগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, এরা আসলে পুরো জিনিসটাই নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আপনারা নিজেরাই বুঝেন, মিডিয়াকে কীভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কীভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। একইভাবে তারা বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চায়। সে জন্যই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।