দিনাজপুর ঘুরে মোঃ সোহেল রানা :
অতি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে দিনাজপুরে এবার
প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা কবলিত মানুষেরা
নিরাপদ স্থানের আশায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে
বেরাচ্ছে।কয়েকদিনের টানা অবিরাম বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার
হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। বন্যার কবলে
সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অবিরাম
বর্ষণে রোপা আমন, সরিষার ক্ষেত, পুকুরের মাছ, গাছপালা ও কাঁচা ঘরবাড়ীর
ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।আত্রাই ও পূণর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার
উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি
নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দিনাজপুর সদর ও আশপাশের উপজেলাসহ
নি¤œাঞ্চলের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করছে।
প্রবল বৃষ্টি ও নদীর পানির তোড়ে সদর উপজেলার মাহুদপাড়া ও সুন্দরা এলাকায়
শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে শহরতলীর বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে। পানি
বন্ধিদের উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়েছে। বাঁধের আশেপাশে
উদ্ধার ও বাঁধ মেরামতে অংশ নিচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা।বিরল
উপজেলার পূণর্ভবা নদীর ভাঙনে উপজেলার রাজারামপুর, আজিমপুর, ফারাক্কাবাদ
ও ধাঁমইড় ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকতে শুর করেছে। চিরিরবন্দর উপজেলার
আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে প্রায় ১০টি গ্রাম। ফুলবাড়ির সাত
ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিরামপুর
উপজেলার কাটলা, জোতবানী, পলিপ্রয়াগপুর, বিনাইলসহ সাত ইউনিয়নের
প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এদিকে দিনাজপুরের
সাথে ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে
পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে পার্বতীপুর জংশন রটের রেললাইনও যে কোনো
সময় পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।এ ছাড়াও
বীরগঞ্জ, খানসামা, ঘোড়াঘাট, বোঁচাগঞ্জ, চিরিরন্দর, বিরল, কাহারোল
উপজেলা এবং জেলা সদরের কয়েক হাজার মানুষ বন্যার কবলে ঘরবাড়ি ছাড়তে
বাধ্য হয়েছে। শহরের লালবাগ কাঞ্চন কলনি, সাধুরঘাট, পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা,
হঠাৎপাড়ায় ঘরবাড়িতে বুক সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। ড্রেন দিয়ে
বিভিন্ন বস্তিতে পানি প্রবেশ করছে। ফলে সারাদিন চুলায় হাঁড়ি না
চড়ায় অনাহারে দিন কাঁটছে তাদের।অন্যদিকে শুকনো খাবারসহ
প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের
তালিকা প্রণয়নের জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন হুইপ ইকবালুর
রহিম। তিনি বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরন করেছেন।
বোঁচাগঞ্জ উপজেলার কংশরা, ফুটকিবাড়ী, কেরালগাঁও, নাফানগর,
কোদালকাঠি, নারাইল, পরমেশ্বরপুর, পাঁচপাড়া, বাজনিয়া, হরিপুর,
চাঁপাইডাঙ্গীসহ বেশকিছু গ্রামের এবং সেতাবগঞ্জ পৌরসভার
হঠাৎপাড়া, ঠোঙ্গাপট্টি, রেলকলোনীপাড়া, খালপাড়া, নতুনপাড়ার হাজার
হাজার মানুষ পানিবন্দি।অঝোর ধারায় বৃষ্টিপাতের ফলে বীরগঞ্জের শতগ্রাম,
সুজালপুর ইউপি’র বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পরিবারের লোকজন ও
গবাদি পশুসহ আসবাবপত্র নিয়ে স্থানীয় বলদিয়া হাফেজিয়া মাদ্ধসঢ়;রাসা এবং
সুজালপুর ইউনিয়নের উত্তর মাঁকড়াই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়
নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখানে গত দু’দিন যাবৎ নেই বিদ্যুৎ
সংযোগ।খানসামায় আত্রাই নদীর কবলে প্রায় ১৫০০ পরিবার। খানসামা
উপজেলার খামারপাড়া ইউপি’র কায়েমপুর গ্রামের পাশ দিয়ে আত্রাই নদী
অতিবাহিত হওয়ায় ঐ গ্রামের প্রায় ১০ একর কৃষি জমি নদীতে বিলীন
হয়ে গেছে। এতে মারাত্বক হুমকী ও ক্ষতির মুখে পড়েছে গ্রামবাসী। নদীর
ধার ভেঙ্গে ধীরে ধীরে নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।এদিকে জাতীয় সংসদের
হুইপ ইকবালুর রহিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “বিভিন্ন স্থানে বন্যা
কবলিত মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে এবং তাদের খাদ্য-পানীয়
সরবরাহের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নীরলস ভাবে কাজ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ
যাতে না খেয়ে কিংবা বিপদের মধ্যে না থাকে সে দিকে যথেষ্ট নজরদারী রাখা
হচ্ছে”।অপরদিকে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী
প্রকৌশলী মোঃ সিদ্দিকুজ্জামান খান জানান, “দিনাজপুরের পূর্ণভবা,
আত্রাই, চিরিরবন্দরের ইছামতি, ফুলবাড়ী ও বিরামপুরের ছোট যমুনা নদী,
পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জের করতোয়া সহ জেলার ছোট-বড় প্রায় ১৭টি নদ-নদীর
পানি বৃদ্ধি পেয়েছে”। এছাড়া পূণর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার
৭৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও জানানো হয়।