অনলাইন ডেস্ক ঃ
সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কুড়িগ্রামে বন্যার স্রোতে ভেসে গিয়ে আরো দু’জন মারা গেছেন। এ নিয়ে কুড়িগ্রামে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সারাদেশে বন্যায় মোট ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে দিনাজপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দুর্গত এলাকাগুলোতে ভেঙে পড়েছে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিতরা। তবে কিছু কিছু এলাকায় পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসীদের।
সারাদেশ থেকে আমাদের প্রতিনিদের পাঠানো খবর-গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে জেলার ৪ উপজেলার ৫৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১শ’ সে.মি, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা দুর্গতরা জানান, কোথায় যাব, কি করব বুজতে পারছি না। টাকা-পয়সা না থাকার কারণে আমাদের বিপদ আরো বেড়েছে। যারজন্য তারা বন্যার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। বন্যা দুর্গতরা সমাজের স্বচ্ছলদের ত্রাণ সামগ্রী দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কদমপুর চর থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, গত ৫ দিন ধরে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে এই গ্রামটি।
এখানকার মানুষ এতই অসহায় অবস্থায় আছে যে তাদের ঘরের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে গেছে। তারা নৌকার মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অবস্থান করছেন। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। শুধু কদমপুর চর নয় আশপাশের এলাকাতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রামে বহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নয় উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৭শ’ ৬৩ গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ। কুড়িগ্রামের চরমাধবপুর গ্রাম থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, জেলায় এ পর্যন্ত ১১ জন মানুষ পানির তোড়ে ভেসে মারা গেছেন।
এরমধ্যে দু’জন আজ সোমবার মারা যান। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসকারিভাবে সেখানে কোনো ত্রাণ তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। বন্যাদুর্গত মানুষ অপেক্ষা করছে কখন এই বন্যার পানি নেমে যাবে।সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়ে শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপদসীমার ১শ’২৮ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার্তরা জানান, রান্না করে খাওয়ার মতো চুলাটা পর্যন্ত তাদের নেই। সবকিছু পানিতে ভেসে গেছে।নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। নতুন করে আত্রাই উপজেলার তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আটটি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।জামালপুরে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অব্যাহতভাবে বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি ১শ’৩৩ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।রংপুরের চার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এমনকি বন্যার্তরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঘর থেকে বের করতে পারেননি।তবে বৃষ্টি কমায় দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এখনো জেলার রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।লালমনিরহাটে তিস্তা, ধরলার পানি প্রবাহ কিছুটা কমায় বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে বানভাসীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও আবারো বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে জেলার পানিবন্দি ৩ লাখ মানুষ।