নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের কিশোরী পান্না আক্তারকে গণধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচণার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন মামলার প্রধান আসামি মামুন আকন্দ ও জেলা ছাত্রলীগের কৃষিবিষয়ক উপসম্পাদক কৌশিক সরকার অপু।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন ও আন্দোলনের চাপে ঘটনার সাতদিন পর অবশেষে গত রোববার নেত্রকোনা মডেল থানায় মামলা করতে পারেন তার মা।
মামলার দুদিন পর পুলিশ সোমবার গভীর রাতে প্রধান আসামি মামুন আকন্দকে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরিতে বোন লিজার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। অপর আসামি কৌশিক সরকার অপুকে নেত্রকোনা পৌর শহরের মাইক্রোস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন ও নিহত কিশোরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গত ৩১ আগস্ট নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে যায় পান্না। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনসংলগ্ন একটি ঘরে মা-বাবার সঙ্গে থাকত সে। ঈদের পরের দিন ঠাকুরাকোনার বখাটে তরুণ মামুন কৌশলে পান্নাকে ঘরের বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় মাছের খামারের একটি ঘরে নিয়ে মামুনসহ তিন তরুণ পান্নাকে ধর্ষণ করে। রাতে অনেক খোঁজার পর পান্নাকে মাছের খামারে পড়ে থাকতে দেখেন তার মা আলপিনা। এ সময় ধর্ষকরা তাঁকে নানা ভয়ভীতি ও হুমকি দেখায় বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য। ভয়ে তিনি বিষয়টি কাউকে জানাননি।
পরের দিন সোমবার পান্নাকে বাড়িতে রেখে তার মা কাজে বেরিয়ে পড়েন। ঘরে ফিরে পাশের একটি ঘরে পান্নার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তার মা। খবর পেয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পান্নার পরিবারের অভিযোগ, পান্নার লাশ উদ্ধারের পর থেকেই ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা ধর্ষকদের বাঁচাতে চাইছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, কিশোরী পান্না আত্মহত্যার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিকারী তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমদকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নেত্রকোনা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনূর আলমকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের পরের দিন পুলিশ মামলার মূল আসামি মামুন আকন্দকে (২৬) গ্রেপ্তার করে এবং অপর আসামি অপুকে আজ বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেক আসামি সুলতানকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে