অনলাইন ডেস্কঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশের বাইরে কোথায় কী সম্পদ আছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ও পাচারকৃত অর্থ আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরত আনা হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সাংসদ জিয়া পরিবারসহ বিএনপি নেতাদের পাচার করা অর্থে ১২টি দেশে ১২শ’ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন) রিপোর্টের বিষয় সংসদে তুলে ধরে জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন কি-না? তিনি তালিকার কয়েকটি পাঠ করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিআইনএন-এর রিপোর্ট সরকারের হাতে এসেছে এবং তদন্ত হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে মানিলন্ডারিং এর জন্য তদন্তের একটা ব্যবস্থা আছে।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের একাধিক লিখিত ও সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেন সংসদ নেতা।
ফখরুল ইমাম জিআইএন রিপোর্ট থেকে বলেন, সৌদি আরবে দৈনিক আহমেদ আল আসাদের নামে আল-আরাবার শপিং মলটির মালিক খালেদা জিয়া। কাতারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ‘ইকরা’র মালিক খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান। খালেদা জিয়ার ভাতিজা তুহিনের তিনটি বাড়ি আছে কানাডায়। সিঙ্গাপুরে মেরিনা বে হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের মালিকানার ১৩ হাজার শেয়ার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফের। সাবেক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যরিস্টার আমিনুল হকের নামে লন্ডনে স্ট্যামফোর্ডে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নামেও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে দুবাইতে রয়েছে বিশালবহুল ভবন। সিঙ্গাপুরে মির্জা আব্বাস তার সন্তানের নামে কিনেছেন দুটি অ্যাপার্টমেন্ট। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামের সিঙ্গাপুরে অ্যাপার্টমেন্ট আছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাদের হত্যা-সন্ত্রাসের পাশাপাশি দুর্নীতি করা, অর্থপাচার করা—এ ধরনের বহু অভিযোগ তো জনগণ সব সময় করেছে এবং এটা সবাই জানে। এরইমধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পাচার করা টাকা ফেরত আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।’
সংসদে বিরোধী দল থেকে প্রশ্নটি আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, ‘সরকারি দলের কেউ প্রশ্নটি আনলে অনেকেই মায়াকান্না করে বলতেন সরকার হিংসা করে এগুলো বলছে। যাইহোক, তথ্যগুলো যখন বের হয়েছে তখন নিশ্চয় সরকারের কাছে আছে এবং এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি শান্তিপ্রিয় দেশ গঠনে সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সব সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকগুলোর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।’
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খানের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে জঙ্গি কর্মকাণ্ড একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে এদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধ নয়। ফলে ইতোমধ্যে জঙ্গি দমনে আমাদের সফলতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। জঙ্গি দমনে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিরা যেমন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনি তাদের অর্থের যোগানদাতা ও মদদদাতাগণও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স এবং দেশীয় অর্থ কোন জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত হচ্ছে কি-না, সে বিষয়েও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে।
এ ছাড়া কোনো বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কোচিং সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি তৎপরতা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কি না, সীমান্তে অবৈধ অর্থের লেনদেন, আদান-প্রদান, চলাচল ও স্থানান্তর একই সঙ্গে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস, মোবাইল ব্যাংকিং ও বিকাশের মাধ্যমে অস্বাভাবিক অর্থ আদান প্রদান হচ্ছে কি-না, সে বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত আছে। জঙ্গি অর্থায়ন সংক্রান্ত রুজুকৃত মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।’