রিফাত কান্তি সেনঃ
“কানে হুনি না বাপু,সংসারে অভাব,রিক্সা চালাইয়া কোন রহমে সংসার চালাই আরকি!”,আপনি কী মিডিয়ার লোক? আমার দুঃখের কথা লিখা হাসিনা মা’র কাছে পৌঁছাইবেন?এমনি করেই ৬৫ উর্ধ বৃদ্ধ রিক্সাচালক ‘মনজুরুল হক বেপারী ‘নিজের জীবনের দুঃখের কথা শুনালেন। যে বয়সে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলার কথা ছিলো তাঁর,সে বয়সেই সংসারের বোঝা টানতে হয়রান তিনি। শরীরের চামড়া বটে গিয়ে ত্বকে বৃদ্ধের ছাপ!প্রতিদিন চাঁদপুর শহরের আনাচে-কানাচে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।
জন্ম পরিচয়ঃ
চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের চরবাকিলা গ্রামে জন্ম মনজুরুল হক বেপারীর। বাবার নামঃ- লাল মিঞা বেপারী ও মাতাঃ- সৈয়দুন্নেছা। সংসারের অভাবের তাড়নায় ছোট বেলা থেকেই রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতে হয় তাকে। অন্যকাজ পারেন না বলেই রিক্সার প্যাডেল চেপে চলে তাঁর কষ্টের সংসার।অভাবের তাড়নায় এই বৃদ্ধ বয়সে ও রিক্সা চালাতে হচ্ছে তাকে। প্রায় ৫০ বছরের মত তিনি রিক্সা চালিয়ে জীবিকার সন্ধান করে যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্য রিক্সাটিও ভাড়ায় আনতে হয় তাকে।প্রতিনিয়ত রিক্সা ভাড়া করে, তবেই জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন এই অভাগা লোকটি।
শৈশব জীবন:- ছোট বেলায় পড়ালেখার তীব্র ইচ্ছা থাকলে ও দারিদ্রতার কারণে তা করতে পারেননি।দারিদ্রতাকে দূর করতে বেছে নেন রিক্সা চালানো।তাই শৈশবে রিক্সা চালিয়ে কাটতো-শৈশবের দিনগুলি।অন্যের নিকট থেকে রিক্সা ভাড়া করে তা চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসারের খরচ মেটাতেন তিনি।
দাম্পত্য জীবনঃ
রিক্সা চালক মনজুরুল,রশিদা বেগমকে বিয়ে করে তাঁর দাম্পত্য জীবন শুরু করেন।তাঁর দাম্পত্য জীবনে ৫ মেয়ে ও ৩ ছেলে সন্তানের জন্মদাতা।পরিবার পরিকল্পনার অভাবেই অভাবের সংসারটি বড় হয়ে যায়।শিক্ষার অভাব,কুসংস্কারের ফলে বাড়তে থাকে পরিবারের সদস্য সংখ্যা। তবে দেড়িতে হলেও বুঝতে পেরেছেন, অভাবের সংসারে এতগুলো সন্তান নেয়া ঠিক হয়নি। মনজুরুলের ৫ মেয়ের মাঝে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন,বাকী দু’জন স্কুল পড়ুয়া।তিন ছেলের একজন ট্রেইলরের কাজ করে।বাকী দু’জন বাড়িতেই থাকে।
অহন আর শরীরে দেয় নাঃ
বয়স ৬৫ এর উপরে,শরীরের শক্তিও লোপ পেতে শুরু করেছে।প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি আর জীবন বাঁচানোর তাগিদে, প্যাডেল চেপে চলেছেন মনজুরুল। ইচ্ছে না থাকলে ও অন্যকর্ম জানেন না বলেই, বৃদ্ধ বয়সে টানতে হচ্ছে রিক্সার মত কায়িক শ্রমের বাহন। “শরীর বলে থাম এবার,জীবন বলে বাঁচবি কি আর?”কর্ম থামিয়ে দিলেই যে বৃদ্ধ বয়সে না খেয়ে মরতে হবে,সে চিন্তার দরুন, চালাচ্ছেন রিক্সা।
জীবনের কঠিন মূহুর্ত:-
জীবনের কঠিন একটি মুহুর্তের মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছেন মনজুরুল বেপারী।বউ,সন্তানাদি নিয়ে তাঁর কষ্টের সংসার। রিক্সা চালান ঠিকই;কিন্তু কানে শুনেন না বলে ্অনেকেই রিক্সায় উঠতে চান না।তিনি বলেন,হেদিন একজনে পালপাড়া যাইবো,আমি যেনো হুনলাম পালের বাজার,এজন্য অনেকেই বুড়া রিক্সা চালকগো-রিক্সায় উডতে চায় না।অহন আমি খুব অসহায় অবস্থায় আছি। তয় শেখ হাসিনা মারে কি কইয়া ধন্যবাদ দিমু বুঝতাছি না।কদিন আগে মার লাগি দশ টেয়া কইরা চাল কিনা খ্ওানের সুযোগ পাইছি।তয় বয়স্ক ভাতাডা পাইলে ভালা হইতো।
বৃদ্ধ রিক্সা চালক মনজুরুলের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা চাইলে তিনি বলেন,আমি সব সময় শহরে রিক্সা চালাই বাজান। কালী বাড়ি রিক্সা স্টেশনে খবর লইলেই আমারে পাইবা।আর একটা কথা বাজান,আমাগো মত বুড়া মানুষগুলার রিক্সা চালাইতে খুব কষ্ট।
আর পারি না চালাইতে!
কি করলে ভাগ্য ফিরবে এই হতভাগা বৃদ্ধ রিক্সা চালকের:—
রিক্সা চালানো ছাড়া আর অন্য কোন কাজই জানেন না মনজুরুল।চাঁদপুর শহরে প্রায় ৪০ বছরের উপরে রিক্সা প্যাডেল চাপছেন তিনি।কখনো ক্লান্তি ঘিরে ধরলে ও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পিছ পা হননি তিনি।সমাজে যখন অনেকেই লোভের বশে অন্যায় পথ বেছে নেন, ঠিক তখন এই বৃদ্ধ রিক্সা চালক সৎ পথেই তাঁর জীবিকা নির্বাহের সন্ধান করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।অচিরেই যদি সরকার, কোন সংস্থ্যা কিংবা সহৃদয়বান ব্যক্তি মনজুরুল বেপারীর পাশে এসে দাড়াতেন,তবে হয়তো আর বৃদ্ধ বয়সে রিক্সার প্যাডেল চাপতে হতো না।যে বয়সে নাতী-নাতনীদের সাথে খোঁশ গল্প করে কাঁটাতে ব্যস্থ থাকার কথা ছিলো, কিন্তু ভাগ্য তাকে পথে নামিয়ে ছেড়েছে।রৌদ্র কি বৃষ্টি, রিক্সার প্যাডেল চেপেই চলেছেন বৃদ্ধ রিক্সাচালক মনজুরুল বেপারী।
সহযোগীতায়- মাসুদ হোসেন
চাঁদপুর প্রতিনিধি:
বাংলার প্রতিদিন