অনলাইন ডেস্কঃ
ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল রাজাপুরে। ছাত্রজীবনের শুরুতে বরিশাল শহরে পড়াশোনা করেন। এর পরে ঢাকায় এসে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ পাস করেন। এরপর শুরু করেন ব্যবসা আর পাশাপাশি র্যাম্প মডেলিং।
২০১৫ সালে মেহেদী হাসান যখন সমান তালে ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে হাঁটছেন তখনই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’য়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সারোয়ার-তামিম গ্রুপের এক বা একাধিক সদস্যের। আর তাঁদের প্ররোচনাতেই একসময় জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন মেহেদী হাসান।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, র্যাব ৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।
ইমাম মেহেদী হাসানের র্যাম্প মডেলিং সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু প্রাইভেট কোম্পানির নানা রকমের ফ্যাশন শোতে অংশ নিতেন ইমাম মেহেদী হাসান। রাজধানীর সোনারগাঁও, রেডিসন ও ওয়েস্টিনের মতো অভিজাত হোটেলগুলোতে আয়োজিত র্যাম্পেও হাঁটতেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, সম্প্রতি কিছু অভিযানে বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনির’ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। তাঁরাই জানান যে, জেএমবির শীর্ষ নেতা ইমাম মেহেদী হাসান এর নেতৃত্বে ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনির’ নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। এই তথ্য পাওয়ার পরে র্যাব তাঁদের গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনির’ কমান্ডার ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিবরিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছে থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল, একটি পাসপোর্ট ও উগ্রবাদী বইসহ বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়।
তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম মেহেদী হাসান স্বীকার করেছেন যে, তিনি ২০১৫ সাল থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। হলি আর্টিজানে নিহত জঙ্গি নিবরাসসহ বেশ কিছু শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। একপর্যায়ে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের রিজার্ভ হিসেবে রক্ষিত ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতননির’ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং কর্মী সংগ্রহ করেন। এর পরে সেই কর্মীদের আনুগত্য পরীক্ষার জন্য কিছু অংশকে বাইয়্যাতের (শপথ) মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করেন।
ইমাম মেহেদী হাসান এরই মধ্যে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের বাইয়্যাত (শপথ) প্রদান করেছেন। তাঁর মাধ্যমে হিজরত করা দুই জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহতও হয়েছেন।
গতরাতের অভিযানে উদ্ধার হওয়া আলামত থেকে জানা যায়, ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই কুতনির’ অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং যেকোনো স্থানে নাশকতার জন্য সক্ষম। তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন্য সদস্য থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে বলেও জানান তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।