বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
নিষিদ্ধ হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার রাজধানীতে নিষিদ্ধঘোষিত হিজবুত তাহরীরের ২ সদস্য গ্রেপ্তার বগুড়ায় আইন কর্মকর্তা নিয়োগ বিএনপি-জামায়াতপন্থি ১০৭ জন অতি বৃষ্টির কারণে লালমনিহাট জেলায় বন্যা নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত বগুড়ায় ট্রাক পরিবহনের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার আত্মসাৎ ও মামলা টিএমএসএস সদস্যদের (RAISE) প্রকল্পের উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দীর্ঘ ১৩ বছর পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে চাকুরী ফেরত পেলেন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক আশুলিয়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিত্যক্ত চুল পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে ভাগ্য বোনার চেষ্টা আদিতমারীর নারীদের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর হলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম

বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য জমিতে গিয়ে চাষের যোগ্যতা হারাচ্ছে কৃষি জমি ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ

বাংলার প্রতিদিন ডেস্ক ::
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৭
  • ২৩৭ বার পড়া হয়েছে

টি.আই সানি,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে অধিকাংশ শিল্প কারখানায় অ্যাফ্লুয়েন্ট
ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বা বর্জ্য শোধানাগার নেই। যার
কারণে উপজেলার বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য পাথার বা খাল-বিলে
পড়ে চাষের যোগ্যতা হারাচ্ছে কৃষি জমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ
এবং সেই সাথে আবাসস্থল হারাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
উপজেলার গড়গড়িয়া মাষ্টার বাড়ি, নয়নপু,এমসি,মাওনা উত্তর
পাড়া, ধনুয়া দক্ষিণ পাড়া, লবলং পাথারসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে
উঠেছে প্রায় তিন শতাধিক শিল্প কারখানা।
সরকারি বিধি ও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিল্প কারখানা
স্থাপন করার সাথে সাথে বর্জ্য শোধানাগার বা অ্যাফ্লুয়েন্ট
ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপন করা বাধ্যতামূলক।
অথচ উপজেলায় গড়ে উঠা অধিকাংশ কারখানায় শোধানাগার বা
অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই। অল্প সংখ্যক
কারখানায় ইটিপি থাকলেও এর যথাযথ ব্যবহার করছে না কারখানা
কর্তৃপক্ষ।
এদিকে প্ল্যান্ট চালানোর ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষের কোন
ভূমিকা না থাকার কারণে কারখানাগুলোর বর্জ্য সরাসরি খাল, বিল,
নদী-নালা ও পাথারের ফসলি জমির উপর গিয়ে পড়ছে।
নদী-নালা, খাল-বিলে বর্জ্য পড়ার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ
ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা। খাল বিলের পানি
ঘন কালো নীল বর্ণের বর্জ্য পদার্থ মিশে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

প্রায় সর্বক্ষণ বিলের ফসলি জমির মাটি কেমিক্যাল মিশ্রিত
পানিতে আবৃত হয়ে ফাঁপা অবস্থায় থাকে। যার কারণে জমিতে
ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কোন কোন বিলে ধান উৎপাদন এখন
প্রায় বন্ধের পথে।
অপরদিকে,কাওরাইদ,বলদীঘাট,মাইজপাড়া,গোলাঘাট এলাকায়
কয়েটি নদী রয়েছে,আর এইসব নদীতে মাছ ধরতে না পেরে অনেক
জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করেছে। নদী-নালা ও খাল-বিলে মাছ না
পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্দিন কাটছে তাদের।
বংশগত ভাবে জেলে হওয়ায় অন্য পেশায়ও মনোযোগি হতে পারছে
না তারা। সবমিলিয়ে দুর্দিন কাটছে জেলে পরিবার গুলোতে।
উপজেলার কাওরাইদ এলাকার বাদশা মাঝি নামের এক জেলে জানান,
মিলের ময়লা পানি আইসা খাল-বিল আর নদীর পানি নষ্ট হইয়া
গেছে, দিন যত যাচ্ছে মিলের বর্জ্য ময়লা বেশি করে পানিতে
আইসা মিশতেছে।
মিলের ওই দুর্গন্ধ ও কালো পানির কারনে বহু দিন ধইরা মাছ ধরতে
পারিনা। মাছ ধরতে না পাইরা পোলাপাইন নিয়া কোন রকমে
বাঁইচা আচি।
বিটিপারা গ্রামের জেলে আতিকুল ইসলাম জানান, একসময়
আমরা বাড়ীর কাছে মাটিকাটা নদীতে মাছ ধরে তা বাজারে
বিক্রি করে সংসার চালাতাম। খুব ভালভাবেই চলতো আমাদের
সংসার। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে কোন অসুবিধা
হতো না।
আগে যেখানে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মাছ বিক্রি
করতাম এখন কল-কারখানা বিষাক্ত বর্জ্য খালে বিলে পড়ার কারণে মাছ
আর বিলে পাওয়া যায় না। কোন কোন দিন দুই থেকে আড়াই’শ
টাকার মাছও বিক্রি করতে পারিনা। যা দিয়ে সংসার কোন ভাবেই
চলানো যায় না।

ধামলই গ্রামের কৃষক হযরত আলী জানান, শুধু জেলেরাই নয়
এলাকাবাসীও মাছ ধরে সংসারে মাছের চাহিদা মেটাতো। কিন্তু
এখন আর মাছ ধরা যায়না। যদিও কিছু মাছ ধরা পড়ে সেগুলো
কারখানার কেমিক্যালের গন্ধের জন্য খাওয়া যায় না।
মাছের চেয়ে বড় সমস্যা চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। চলতি বছরেও
অনেকে কষ্ট করে অর্থ ব্যয় করে চাষাবাদ করলেও কোন লাভ হয়নি। বলতে
গেলে জমিগুলো চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুইদুল ইসলাম
জানান, কল-কারখানার অপরিশোধিত কেমিক্যালযুক্ত তরল বর্জ্যে
উপজেলার প্রায় ১৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত। যার কারণে জমিতে ফসল
ফলানো সম্ভব হচ্ছেনা। শুধু তাই নয় বিভিন্ন কারখানার
অপরিশোধিত বর্জ্যে খাল-বিল ও নদী-নালার পানি দুষিত হচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদিউজ্জামান জানান,কিছুদিন
পর আবার কারখানা কর্তৃপক্ষ একইভাবে কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য
পরিশোধন না করে ছেড়ে দেয়। যা পুনরায় নদী-নালা ও ফসলি জমির
উর্বরতা নষ্ট করছে এবং নদী-নালায় মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে
যাচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনা আকতার
উপজেলার বিভিন্ন কল-কারখানায় ইটিপি না থাকার কারণে পরিবেশ
অধিদপ্তর থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন পরিমাণে
জরিমানা করা হয়ে থাকে। যেসকল কারখানায় ইটিপি প্ল্যান্ট নেই
অথবা থাকলেও তা ব্যবহার করছেনা এমন কারখানাগুলো সম্পর্কে
জেলা প্রসাশক ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ইতিমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে
জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © banglarprotidin.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com
themebazarbanglaro4451