শ্রীপুর (গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামে গেলি
ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক এক ব্যাটারী তৈরী কারখানায় চুরির অপবাদ
দিয়ে দুই শ্রমিককে সোমবার সকালে বাসা থেকে কারখানায় ডেকে
এনে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ওই কারখানার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
পরে তাঁদের চাকুরীচ্যুত করে এলাকা না থাকার শর্তে লিখিত নিয়ে
ছেড়ে দেয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার রাসু হোসেন (২৭) খুলনা জেলার দৌলতপুর থানার
গিলাতলা গ্রামের খোকন মিয়া ছেলে, অপরজন শাহিন আলম (২০)
পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি থানার চরবলেশ্বর গ্রামের খলিল মিয়া ছেলে।
তাঁরা কারখানার পাশ্ববর্তী হাবিবুর রহমান ও মহসিনের বাসায় ভাড়া
থেকে ওই কারখানায় এক্সট্টা পদে চাকুরী করতো।
নির্যাতনের শিকার শ্রমিকেরা বলেন, তাঁরা দু’জনই সকালে বাসায়
ঘুমিয়ে ছিলেন। সোমবার ভোরে কারখানার কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ
শিপন পাটোয়ারী কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের শামসুল হকের ছেলে কবির
হোসেনকে সাথে নিয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে তাঁদের ঘুম থেকে
তুলে কারখানার নিয়ে আসেন। পরে চুরির অপবাদ দিয়ে কর্মকর্তারা
তাঁদের রশি দিয়ে বেঁধে কারখানার ভেতর বেধড়ক মারধর করে। মারধরের এক
পর্যায়ে শাহিন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে। পরে জ্ঞান ফিরলে সকাল ৯টার দিকে
কারখানা থেকে বের করে প্রধান ফটকের সামনে গলায় চোর লেখা কাগজ
ঝুঁলিয়ে জানালার গ্রীলের সাথে রঁশি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরে বেলা
১১টার দিকে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দ্রুত
তাদের হাতের বাঁধন খুলে কারখানার ভেতরে নিয়ে জোর করে সাদা
কাগজসহ কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের চাকুরীচ্যুতির ও
এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নোটিশ ধরিয়ে দেয়। নোটিশে কারখানা
কর্তৃপক্ষ তাঁদের বকেয়া বেতন পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কবিরের নেতৃত্বে কয়েকজন তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দ্রুত এলাকা থেকে
চলে যাওয়ার আদেশ দেন। তাঁরা আরো জানায়, শাহিনের ভাড়া বাসার
সামনে কারখানার একটি সীসার দন্ড পাওয়া যায়। এর জের ধরে তাঁদের
চোর সাব্যস্ত করে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।
এব্যাপারে কারখানার কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ শিপন পাটোয়ারী মারধরের
কথা স্বীকার করে জানান, তাদেরকে থানায় দিলে পুলিশের ঝামেলায় পড়তে
হতো। এর চেয়ে ভাল মারধর করে সামান্য শাস্তি দিয়ে তাদের চাকুরী থেকে
অব্যাহতি দিয়ে এলাকা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় কবির হোসেন জানান, আমরা এই কারখানায় ব্যবসা বাণিজ্য
করি। তাই কারখানার বিষয়ে অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছেলে দুটি
চোর ছিল তাই তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করে বলেন, নির্যাতনের শিকার শ্রমিকেরা যদি থানায় লিখিত
অভিযোগ দেয় তাহলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।