জাকির হোসেন, পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ জেলা সদর ঠাকুরগাঁও হতে
পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল উপজেলা সদর হয়ে হরিপুর উপজেলা সদর গামী পাঁকা সড়কটি
আঞ্চলিক মহা সড়কে উন্নীতকরণ এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তাটি
চওড়া করণের দাবীতে এরই মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের আয়োজনে
মানববন্ধন হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাবে সড়ক উন্নয়নের বিষয়টি
বছরের পর বছর ঝুলে আছে বলে অভিমত স্থানীয়দের। ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ- রাণীশংকৈল-
হরিপুর সড়কটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক। অভ্যন্তরীন রুটের ৩০টি
যাত্রীবাহী বাস প্রতিদিন ২৪০ বার এ সড়কে যাতায়াত করে। এছাড়াও কোচ, ট্রাক,
মিনি ট্রাক, থ্রি হুইলার ও অটো চার্জার মিলে কয়েকশত যানবাহন প্রতিদিন এ
সড়কে চলাচল করছে। এত বিপুল সংখ্যক যানবাহন জেলার অন্য কোন অভ্যন্তরীন রুটে
চলাচল করেনা। কিন্তু সড়কের বেশির ভাগ অংশ এখনও মাত্র ১২ফিট চওড়া হওয়ায় দুটি
গাড়ি মুখোমুখি অতিক্রম করতে কিংবা পিছনের গাড়িকে সাইড দিতে গিয়ে
উভয় গাড়ির এক সাইডের চাকা কাঁচা রাস্তায় নামাতে হয়। অনেক স্থানে রাস্তার
দু’পাশে মাটি না থাকায় এবং কোন কোন স্থানে পাকা রাস্তা থেকে মাটির রাস্তা
উচু-নিচু হওয়ায় অন্য যানবাহনেকে সাইড দেওয়া বিপদজনক হয়ে পড়ে। এমনকি
প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। সড়কটি চওড়া করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবি
জানানো হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন ঠাকুরগাঁও জেলার মধ্যে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ- রাণীশংকৈল-হরিপুর রাস্তাটি
চওড়া না হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। তাঁদের মতে, ১৯৭৩ ও ১৯৯৬ সালের
সাধারণ নির্বাচনে পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল উপজেলার মানুষ সরকারি দল আওয়ামীলীগের
প্রার্থীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করলেও ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১৪ সালের
সাধারণ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা এ আসন থেকে সংসদ সদস্য
নির্বাচিত হতে পারেননি। ভোটের রাজনীতিতে পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল বাসীর রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতার বিপরীতে অবস্থানের কারণে এলাকার উন্নয়ন কাজ মুখ থুবরে পড়েছে। ফলে এসব
বিরোধী দলীয় অথবা জোট-মহাজোটের শরীক ছোট ছোট দলের সংসদ সদস্যগণ
ক্ষমতাসীনদের নিকট থেকে এলাকার উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের কোন প্রকল্প অনুমোদন
করাতে পারেন না। তাই জেলার সব চেয়ে ব্যস্ততম সড়কটির উন্নয়নও ভোটের রাজনীতির
হিসাব নিকাশে আটকে আছে। সব সরকার সকল অঞ্চলের সুষম উন্নয়নের কথামুখে
বললেও স্থানীয় সংসদ সদস্য তাদের দলের না হওয়ায় ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ- রাণীশংকৈল-
হরিপুর সড়কটি আঞ্চলিক মহা সড়কে উন্নীত হচ্ছে না বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
এ ব্যাপারে ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের তৎকালীন সরকার দলীয় এমপি
ইমদাদুল হক বলেন, রাস্তাটি চওড়া করার জন্য তিনি এমপি থাকা কালে সংশ্লিষ্ট
মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেন। কিন্তু পরে সরকার পরিবর্তনের ফলে কাজ হয়নি। ২০০১ থেকে
২০১৩ পর্যন্ত মহাজোটের এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ
উদ্দীন আহম্মেদ জানান, তাঁর প্রচেষ্টায় পীরগঞ্জ থেকে রাণীংশকৈল পর্যন্ত ১৩
কিলোমিটার রাস্তা ১২ ফিট থেকে ১৮ ফিট চওড়া করা সম্ভব হলেও পীরগঞ্জ থেকে জেলা
শহর ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নের জন্য তিনি শুধু ডিও লেটার
নয় ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করেছেন কিন্তু সরকার দলীয় এমপি না হওয়ায় কোন ফল
হয়নি। বর্তমান ওয়ার্কাস পার্টির এমপি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী জানান রাস্তাটি
আঞ্চলিক মহা সড়কে উন্নয়নের ব্যাপারে যোগাযোগ করলে মন্ত্রী তিনাকে আশ্বস্ত
করেছেন। সংরক্ষিত আসন-৩০১ এর এমপি সেলিনা জাহান লিটা বলেন তিনি এ সড়ক
উন্নয়ন বিষয়ে সড়ক বিভাগে যোগাযোগ রেখেছেন। রাস্তাটি যেন অগ্রাধিকার
ভিত্তিতে চওয়া করা হয় সে জন্য অচিরেই সরাসরি সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর দারস্ত হবেন বলে
জানান।