অনলাইন ডেস্কঃ
অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সার্ভিস ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’-এর কারণে দিনকে দিন কমতে শুরু করেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাহিদা। কম ভাড়ায় উন্নত সেবা, সময় বাঁচাতে এখন সিএনজির পরিবর্তে ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’-এ ঝুঁকছেন যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, সিএনজিচালকরা প্রায় জিম্মি করেই যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন। তবে বর্তমানে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সার্ভিস ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’ জনপ্রিয় হতে শুরু করায় সিএনজির চালকদের সেই সুযোগ এখন অনেকটাই কমে গেছে।
এদিকে, অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা ‘উবার’ ও ‘পাঠাও’ বন্ধসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে সম্প্রতি রাজধানীতে সংবাদ সম্মেলন করে ৮৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
আগামী ২৭ নভেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে এই ধর্মঘট পালিত হবে। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১৫ জানুয়ারি থেকে এই দুই মহানগরীতে লাগাতার ধর্মঘট পালন করার ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটি।
‘উবার’ ও ‘পাঠাও’-এর মতো পরিবহন সেবা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করায় ‘ট্রিপ’ কমে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিএনজিচালকরা। তাঁদের ভাষ্য, উবার-পাঠাও কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে, যার ফলে সিএনজির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও ট্রিপ পাচ্ছেন না সিএনজিচালকরা। এ কারণে দিন শেষে তাঁদের জমার টাকা পর্যন্ত তোলা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ভাড়া পাওয়ার আশায় অপেক্ষারত সিএনজিচালক আবদুল ওহাব বলেন, ‘উবার-পাঠাও-এর কারণে তাঁদের ট্রিপ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। কোনো কোনো দিন জমার টাকাটাও ওঠে না তাঁদের।’
আবদুল ওহাবের অভিযোগ, সিএনজিতে যেখানে ৫০০ টাকা ভাড়া আসে, সেখানে উবার-পাঠাও ১০০-২০০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। এতে করে সিএনজির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা। উবার-পাঠাও সরকারের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। আর তাঁরা সরকারকে সব ধরনের খরচ দিয়েও ট্রিপ পাচ্ছেন না। অধিকাংশ সিএনজি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে।
তমা ট্যাক্সির চালক নূর হোসেন বলেন, ‘সোমবার দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২৪০ টাকার ট্রিপ মেরেছি।’ একই পরিবহনের আরেক চালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘যেখানে সেখানে গাড়ি রাখা নিয়ে তাঁদের নানা ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সুবিধামতো উবার-পাঠাও এসে যাত্রী নিয়ে চলে যায়।’
মিরপুর এলাকায় সিএনজিচালক রশিদ উদ্দিন বলেন, ‘আগের চেয়ে এখন ট্রিপ (ভাড়া) অনেক কমে গেছে। মানুষ উবারে বেশি যাতায়াত করছে।’
রশিদ বলেন, ‘আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ। সারা দিনে চার থেকে পাঁচটা ক্ষ্যাপ পাই এখন। তাও অনেক কষ্টে। কিন্তু আগে সকাল থেকে সারা দিন খাটলে অনেক ক্ষ্যাপ পাওয়া যেত। সিএনজিতে গরম লাগে, ধুলাবালি লাগে। আর উবারে এসি লাগানো ভালো গাড়ি, অল্প ভাড়ায় চলে, তাই মানুষ এখন উবারেই ওঠে।’
শাকিল হোসেন নামের আরেক সিএনজিচালক বলেন, ‘উবার-পাঠাও আসার পর থেকে সিএনজিমালিকদেরও আয় কমে গেছে। চার-পাঁচটা করে সিএনজি গ্যারেজে পড়েই থাকে, কোনো চালক নিতে চান না।’
‘অ্যাপের বিপক্ষে নই, নীতিমালা হোক’
উবার ও পাঠাও-এর অ্যাপভিত্তিক সেবার কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীসংখ্যা কমেছে, তা স্বীকার করলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারাও। তবে তাঁরা অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার বিরুদ্ধে নন। বরং ওই ধরনের সেবায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাকেও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অ্যাপের কারণে অটোরিকশাচালকরা কম যাত্রী পাচ্ছেন। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ চলার কার্যক্রম চলছে। আমরা অ্যাপের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এসব অ্যাপের কোনো নীতিমালাও নেই। নীতিমালা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকেও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এতে গরিব চালকরা উপকৃত হবে।’ সাখাওয়াত হোসেন আরো বলেন, ‘অটোরিকশাচালকরা অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেন। মালিককে জমার টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়।’
চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘এসব অ্যাপের মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাহলে গণপরিবহন বলতে যে একটা কথা আছে, তার ভিত্তি রইল কোথায়? নীতিমালা না থাকার কারণেই তা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘অ্যাপের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা স্বাগত জানাই।’ এ ধরনের অ্যাপে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আওতাভুক্ত করার দাবিও জানান তিনি।
এদিকে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ এই ধর্মঘটের বিপক্ষে। একই সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই উবার বা পাঠাও সার্ভিসের বিপক্ষে না।’
কৃতজ্ঞ/ ntvbd