অনলাইন ডেস্কঃ
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি অনুসারে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে, আর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী দুই মাসের মধ্যে। চুক্তির বিশদ জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সই হওয়া অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রির্টান অব ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট চুক্তি ও আসেম সম্মেলনের বিশদ জানাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে কতদিনের মধ্যে ফেরত পাঠানো যাবে বা আদৌ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্ভব কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সময় নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপারটা হলো যে এই রকম কোনো টাইমফ্রেম দিয়ে কোনো লাভও নাই। তো এটা দেখা যাক। আমরা চেষ্টা করব। ইমপরট্যান্ট জিনিসটা হলো যে লোকগুলোকে তারা ফেরত নিতে চেয়েছে। এখন তাদের ওখানে থাকার ব্যবস্থাটা করতে হবে। সেটা তো আমি বলেছি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, গত বছরের ৯ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ২৫ আগস্ট এর পরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। এই চুক্তির অধীনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত রাখাইন রাজ্যের অধিবাসীদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বর্তমান চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ লক্ষ্যে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে এবং এর টার্মস অব রেফারেন্স চুড়ান্ত করা হবে। এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপটিই চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করবে।
চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে। স্বেচ্ছায় যারা যেতে চাইবে তাদেরই নেওয়া হবে। ইউএনএইচসিআর বা আগ্রহী আন্তর্জাতিক অংশীদাররা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে সংযুক্ত হতে পারবে। রোহঙ্গাদের যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিলে উভয় দেশ আলোচনা করে সমাধান করবে।
এ ছাড়া প্রত্যাবাসনকারীদের সাবেক আবাসস্থল বা তাদের পছন্দ অনুযায়ী কাছাকাছি কোনো স্থানে তাঁদের পুনর্বাসিত করা হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থল/ব্যবস্থায় সীমিত সময়ের জন্য রাখা হবে বলেও চুক্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে।
চুক্তির শিরোনামে ‘।অ্যাগ্রিমেন্ট’ না লিখে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ কেন লেখা হয়েছে জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যাশা অনুযায়ী চুক্তি করা গেছে। সম্ভাব্য প্রত্যাবাসন চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ২২ নভেম্বর দু্ দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে এই খসড়াটি আমরা চূড়ান্ত করি। চুক্তিটি ২৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখ অপরাহ্নে স্বাক্ষরিত হয়। প্রথমে ওরাই বলেছিল এভাবে হবে। পরে তারা বলেছে যে ইংরেজিতে অ্যারেঞ্জমেন্ট। কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশ চুক্তিই বলে।’
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও, তার বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। এ ছাড়া তিনি জানান, আসেম সম্মেলনেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে এবং সবাই এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পক্ষেই মত দিয়েছে।